আশরাফুলের দ্বিতীয় ইনিংসের অপেক্ষা
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে নিজ অবহেলায় অপচয় করা সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারের নাম কী? অমিত প্রতিভা নিয়ে এসেও কোন ক্রিকেটার প্রতিভার পূর্ণ স্ফুরণ ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছেন? বাংলাদেশ ও দেশের বাইরে ক্রিকেটের ন্যূনতম খোঁজখবর রাখেন এমন কাউকে প্রশ্ন করা হলে সম্ভবত একবাক্যে বেরিয়ে আসবে একটি নাম, মোহাম্মদ আশরাফুল।
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে অভিষেক ম্যাচে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে আশরাফুলের সেঞ্চুরির রেকর্ড আজো অম্লান। আর ২০০৫ সালে কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আশরাফুলের মহাকাব্যিক সেঞ্চুরিটি অনেকের মতেই বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসের সবচেয়ে তাৎপর্যময় জয় এনে দিয়েছিল। একটা সময় ছিল যখন আশরাফুলের বড় রান করা মানেই বাংলাদেশের জয়। কালেভদ্রে জেতা ম্যাচগুলোতে আশরাফুলের ব্যাটের দিকেই তাকিয়ে থাকত দেশের কোটি দর্শক। জিম্বাবুয়ে, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড বা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয়ের ম্যাচগুলোতে আশরাফুলের নান্দনিক ব্যাটিং দেখেছে ক্রিকেটবিশ্ব। আশরাফুলও দ্রুতই বনে যান বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম আন্তর্জাতিক তারকা। দলে সমসাময়িক অন্য কোনো ম্যাচ উইনার না থাকায় ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই আশরাফুলের ব্যাটিংয়ে দেখা অপার সম্ভাবনা প্রত্যাশার এক বিপুল চাপ তৈরি করে।
কিন্তু ধারাবাহিকতার প্রচণ্ড অভাব আর মাথা গরম করে উইকেট বিলিয়ে আসার প্রবণতায় সেই প্রত্যাশার ফানুস চুপসে দেন আশরাফুল নিজেই। ৬১ টেস্টে ছয়টি শতরান আর আটটি অর্ধশতকে মাত্র ২৪ গড় আশরাফুলের। অন্যদিকে ১৭৮ ওয়ানডেতে মোট বিশটি অর্ধশতক আর তিনটি শতক করা আশরাফুলের রানের গড় মাত্র ২২। টি-টোয়েন্টিতে ২৩ ম্যাচে রান করেছেন ১৯.৫৭ গড়ে। অধিনায়কত্ব করলেও জাতীয় দলে তাঁর আসনটি কখনোই ঠিক পাকাপোক্ত ছিল বলা যায় না। দলে আসা-যাওয়া আর মাঝেমধ্যে ঝলক দেখানো কিছু ইনিংস খেলা আশরাফুল নিজের সর্বনাশ ডেকে আনেন বিপিএলের ২০১৩ আসরে। ঢাকা ডায়নামাইটসে খেলা আশরাফুল সেই আসরে চিটাগাং ভাইকিংসের বিপক্ষে ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হন। তিন বছর সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি পাঁচ বছরের জন্য জোটে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলায় নিষেধাজ্ঞা। সেখানেই তাঁর ক্যারিয়ারের যবনিকা টেনে দিয়েছিলেন অনেকেই।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক দ্বিতীয় কীর্তির জন্ম দিয়েছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মেরিল ত্রিদেশীয় ক্রিকেটে মেহরাব হোসেন অপির করা সেঞ্চুরির পর ২০০৫ সালে আশরাফুল ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরিটি করেন। আর বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের করা সেঞ্চুরিটির পর ২০০১ সালে সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করা আশরাফুলের সেঞ্চুরিটি দেশের পক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট শতক। আবার ২০০৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঝড়ো ইনিংস খেলে আশরাফুলের ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়া ম্যাচে ওয়ানডেতে দ্বিতীয় জয় পায় বাংলাদেশ। এবার নিজের ক্যারিয়ারেরই দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করতে যাচ্ছেন আশরাফুল। পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরছেন তিনি। যেখানে সব শেষ করে হারিয়ে গিয়েছিলেন, সেই বিপিএলই আবার তৈরি করে দিয়েছে প্রত্যাবর্তনের মঞ্চ।
প্লেয়ার্স ড্রাফট থেকে আশরাফুলকে দলে ভেড়ায় চিটাগাং ভাইকিংস। দলের সঙ্গে অনুশীলন শুরু করে আশরাফুল প্রহর গুনছেন মাঠে নতুন করে নিজেকে প্রমাণের। এখনো ছাড়েননি জাতীয় দলে ফেরার আশা। কতটা চাপে আছেন জানতে চাইলে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘বাড়তি চাপ মাথায় না নিয়ে আমি উপভোগ করছি মুহূর্তগুলো। সব রকম চাপের পরিস্থিতিতেই আমি খেলেছি আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া পর্যায়ে। সব ফরম্যাটে খেলার অভিজ্ঞতা থাকায় ম্যাচের যেকোনো পরিস্থিতি আমার জানা।’
জাতীয় দলে ফেরার আশাবাদ ব্যক্ত করে আশরাফুল বলেন, ‘ফিটনেস ধরে রেখে আরো পাঁচ-ছয় বছর খেলার ইচ্ছা আছে আমার। ভালো কিছু করলে জাতীয় দলে ফেরা অসম্ভব নয়। পারফরম্যান্স দিয়ে আরো একবার জাতীয় দলের জার্সিটা গায়ে পরতে চাই।’
তবে নামটা আশরাফুল বলেই দর্শকদের বাড়তি আগ্রহ থাকবে বিপিএলে চিটাগং ভাইকিংসের এবারের ম্যাচগুলোতে।