বড় দায়িত্বের প্রথম পরীক্ষায় কেমন সফল মিরাজ?

Looks like you've blocked notifications!
রাজশাহী অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন অগ্রজ সাকিব আল হাসান। ছবি : সংগৃহীত

আগের দুই আসরে অটোমেটিক চয়েস হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি অধিনায়কত্ব করেছেন রাজশাহী কিংসের। বিপিএলের ষষ্ঠ আসরে এবার স্যামি না থাকায় অধিনায়কের দায়িত্ব কে পেতে পারেন, সেটা নিয়ে একটা চাপা গুঞ্জন চলছিল। রাজশাহী অধিনায়কের নাম ঘোষণায় বিলম্ব হওয়ায় আলোচনার পালে লাগে প্রবল হাওয়া। দর্শক, সমর্থক সবার মধ্যেই একটা ধারণা ছিল যে চমক আসতে পারে অধিনায়ক নির্বাচনে। টুর্নামেন্ট শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে বেশ বড় চমক দিয়ে অধিনায়কের গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয় তরুণ তুর্কি মেহেদী হাসান মিরাজকে।   

এ বছর রাজশাহীর দলটাকে বলা যায় ভাঙা হাট। আগের দুই আসরের অধিনায়ক স্যামি ছাড়াও দলে নেই অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম, সামিত প্যাটেলের মতো খেলোয়াড়রা। তার পরও মুমিনুল হক, সৌম্য সরকার আর কাটার মাস্টার মুস্তাফিজকে দলে নিয়ে ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা করেছে দলটি। বিদেশি কোটায় রায়ান টেন ডেসক্যাট আর পাকিস্তানি মোহাম্মদ হাফিজকে দলে নেয় কিংসরা। আর গত দুই আসরে দলে থাকা পাকিস্তানি স্পিডস্টার মোহাম্মদ সামিকে এবারও পাচ্ছে দলটি। কিন্তু অধিনায়ক পদটিতে স্যামির বিকল্প বের করতে বেশ গলদঘর্ম হয় পদ্মাপাড়ের দলটি। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় দলের অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজকে অধিনায়কের হটসিট বুঝিয়ে দেয় রাজশাহী কিংস।

কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে বেশ বড়সড় একটা ধাক্কা খেয়েছেন মিরাজ। ম্যাচে পরিস্থিতি অনুযায়ী বিকল্প পরিকল্পনার অভাব, খাপছাড়া পারফরম্যান্স আর প্রয়োজনের মুহূর্তে দলটির অনভিজ্ঞতা প্রথম ম্যাচেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে শক্তিশালী ঢাকা ডায়নামাইটস। অধিনায়ক মিরাজের পারফরম্যান্সও ছিল একেবারেই তলালির দিকে। দলের বোলিং আক্রমণের সূচনা করতে এসে বেধড়ক মার খেয়েছেন মিরাজ। তিন ওভার বোলিং করে একটি উইকেট পেলেও ৩৮ রান গুনতে হয় মিরাজকে। ১৯০ রান তাড়া করতে নেমে ব্যাটিংয়ে এসেও হতাশ করেন মিরাজ। পঞ্চম উইকেটের পতনের পর নেমে তিন বল খেলে মাত্র ১ রান করে রুবেলের বলে আউট হয়ে যান অধিনায়ক মিরাজ। শেষাবধি অসহায় আত্মসমর্পণ করে ৮৩ রানের বড় পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মিরাজের দল। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচেই রাজশাহীর এমন দৈন্যদশায় সমর্থকদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে অধিনায়ক মিরাজকে। দলের বিপর্যয়ে দায়িত্ব নিয়ে খেলার মতো মানসিক শক্তি আর প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সতীর্থদের উজ্জীবিত করে ভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হওয়ার সামর্থ্য অধিনায়ক মিরাজের আছে কি না, সেটা ভেবে দেখার কথা বলছেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরাও।

কিন্তু অধিনায়কত্বে একেবারেই আনকোরা নন মিরাজ। মিরাজকে বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অধিনায়ক। দুবাইতে এশিয়া কাপের ফাইনাল ম্যাচে হেরে যাওয়ার পর বেদনাহত মিরাজকে অধিনায়ক মাশরাফি সান্ত্বনা দিতে গিয়ে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য মানসিকভাবে আরো শক্ত হতে বলেছিলেন। ২০১৬ সালে দেশের মাটিতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে মিরাজের নেতৃত্বেই প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। কিন্তু বিপিএলের মতো বড় একটি আসরে সিনিয়রদের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে মিরাজ প্রথম পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন বলা যায়। তরুণ কাঁধে বড় বোঝা নিয়ে সামনের ম্যাচগুলোতে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য অবশ্য অনেক সুযোগ পাবেন মিরাজ। সে ক্ষেত্রে ছন্নছাড়া রাজশাহী দলটিকে এক সুতোয় গাঁথতে হবে মিরাজকে। আর মাঠে করতে হবে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন, অধিনায়কোচিত সিদ্ধান্তে প্রয়োগ করতে হবে নতুন পরিকল্পনা। নিজের পারফরম্যান্স দিয়েও সৃষ্টি করতে হবে দৃষ্টান্ত।