ডি ভিলিয়ার্স-তাহিরে লণ্ডভণ্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজ

Looks like you've blocked notifications!
ফিরে যাচ্ছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেষ ব্যাটসম্যান সুলিমান বেন। আনন্দে উদ্বেল দক্ষিণ আফ্রিকা দল। ছবি : রয়টার্স

পাকিস্তানকে ১৫০ রানে হারানোর পর ক্রিস গেইলের ডাবল সেঞ্চুরিতে জিম্বাবুয়েকে উড়িয়ে যেন হাওয়ায় ভাসছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে একেবারে ভূপাতিত ক্যারিবীয়রা। এবি ডি ভিলিয়ার্সের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে উড়ে যাওয়ার পর ইমরান তাহিরের ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে প্রথম দুই বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা একেবারে লণ্ডভণ্ড। ২৫৭ রানের বিশাল ব্যবধানে জিতে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের পথে একধাপ এগিয়ে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

তিন ম্যাচে চার পয়েন্ট নিয়ে ‘এ’ গ্রুপে দ্বিতীয় স্থানে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দুই ম্যাচ খেলে সমান পয়েন্ট হলেও নেট রান রেট এগিয়ে রেখেছে ভারতকে।

বিশ্বকাপে রানের দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয় ভারতের। ২০০৭ বিশ্বকাপে বারমুডাকে তারা হারিয়েছিল ২৫৭ রানে। শুক্রবার সেই রেকর্ড স্পর্শ করল দক্ষিণ আফ্রিকা। 

সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ক্যারিবীয় বোলারদের একেবারে নাজেহাল করে ছেড়েছেন ডি ভিলিয়ার্স। মাত্র ৬৬ বলে ১৭টি চার ও আটটি ছক্কায় তাঁর অবদান অপরাজিত ১৬২ রান। এর মধ্যে শেষ ১৮ বলে এসেছে ৭৮ রান! ডি ভিলিয়ার্স ‘ঝড়’ দক্ষিণ আফ্রিকাকে এনে দেয় পাঁচ উইকেটে ৪০৮ রানের ‘পাহাড়’। এরপর বল হাতে জ্বলে ওঠেন ইমরান তাহির। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৫১ রানে গুটিয়ে দিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ৪৫ রানে পাঁচ উইকেট নেওয়া এই লেগস্পিনারের। 

টস জিতে ব্যাট করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকার ৪০৮ রান সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে দলীয় সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড অবশ্য অল্পের জন্য ভাঙতে পারেনি প্রোটিয়ারা। ২০০৭ বিশ্বকাপে বারমুডার বিপক্ষে ভারতের ৪১৩ রানের রেকর্ড এখনো অক্ষত।

একটুর জন্য বিশ্বকাপের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডও ভাঙতে পারেননি ডি ভিলিয়ার্স। শুক্রবার ‘ম্যাজিক ফিগার’ স্পর্শ করতে তিনি খেলেছেন ৫২ বল। গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫০ বলে সেঞ্চুরি করে রেকর্ডটির মালিক আয়ারল্যান্ডের কেভিন ও’ব্রায়েন। অবশ্য ওয়ানডেতে দ্রুততম দেড়শ রানের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক। বাংলাদেশের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়াটসনের ৮৩ বলে দ্রুততম দেড়শ রানের রেকর্ড ভাঙতে তাঁর প্রয়োজন হয়েছে মাত্র ৬৪ বল।

ডি ভিলিয়ার্সের ব্যাটিং-তাণ্ডবের সঙ্গে হাশিম আমলা, ফাফ ডু প্লেসি ও রিলি রুসোর ফিফটির যোগফল চারশোর ওপরে নিয়ে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকানদের। দ্বিতীয় উইকেটে ১২৭ রানের জুটি গড়েছেন আমলা (৬৫) ও ডু প্লেসি (৬২)। 

ক্রিস গেইল দুজনকে একই ওভারে ফেরানোর পর ডি ভিলিয়ার্স-রুসোর আক্রমণাত্মক ব্যাটিং তছনছ করে দিয়েছে ক্যারিবীয়দের। রুসোর (৩৯ বলে ৬১) সঙ্গে মাত্র ৭৫ বলে ১৩৪ রানের জুটি গড়েছেন ডি ভিলিয়ার্স। এর পর ফারহান বেহারদিনের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে প্রোটিয়া অধিনায়ক মাত্র ২০ বলে ৮০ রান এনে দেন দলকে।

ডি ভিলিয়ার্সের ঝড়ো ব্যাটিং শেষ ১০ ওভারে ১৫০ ও শেষ পাঁচ ওভারে ৯৬ রান উপহার দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। এর মধ্যে ক্যারিবীয় অধিনায়ক জেসন হোল্ডারের করা ৪৮তম ওভারে  এসেছে ৩৪ রান!

জবাবে তাহিরের ঘূর্ণির সঙ্গে দুই পেসার মর্নে মরকেল ও কাইল অ্যাবটের তোপে ১০৮ রানে আট উইকেট হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর অধিনায়ক হোল্ডারের ৫৬ ও জেরম টেলরের ১৫ রান কোনো রকমে দেড়শোর ঘরে নিয়ে গেছে তাদের।

যদিও ডি ভিলিয়ার্স একাই যত রান করেছেন, ক্যারিবীয়রা ১১ জন মিলেও তা করতে পারেননি!

সংক্ষিপ্ত স্কোরন:

দক্ষিণ আফ্রিকান: ৫০ ওভারে ৪০৮/৫ (ডি কক ১২, আমলা ৬৫, ডু প্লেসি ৬২, রুসো ৬১, ডি ভিলিয়ার্স ১৬২*, মিলার ২০, বেহারদিন ১০*; গেইল ২/২১, রাসেল ২/৭৪, হোল্ডার ১/১০৪)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৩৩.১ ওভারে ১৫১ (স্মিথ ৩১, গেইল ৩, স্যামুয়েলস ০, কার্টার ১০, রামদিন ২২, সিমন্স ০, স্যামি ৫, রাসেল ০, হোল্ডার ৫৬, টেলর ১৫*, বেন ১ ; তাহির ৫/৪৫, মরকেল ২/২৩, অ্যাবট ২/৩৭, স্টেইন ১/২৪)। 

ফল : দক্ষিণ আফ্রিকা ২৫৭ রানে জয়ী

ম্যাচ সেরা : এবি ডি ভিলিয়ার্স।