একজন জন্মান্ধ ও আজকের জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট

Looks like you've blocked notifications!

যদি আপনাকে চোখ বেঁধে বাংলাদেশের কোনো সমুদ্রসৈকতের সামনে নেওয়া হয়, তখন আপনি কি কেবল ঢেউয়ের গর্জন বা সৈকতের বাতাস উপলব্ধি করে বলতে পারবেন, আপনি কোন সৈকতের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন—কক্সবাজার, কুয়াকাটা নাকি সেন্টমার্টিন? কিংবা যদি আপনাকে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের সামনে চোখ বেঁধে নেওয়া হয়, তবে কেবল পানির শব্দ শুনে আপনি কি বলতে পারবেন, আনুমানিক কত ফুট ওপর থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে? অথবা আপনাকে দার্জিলিং-সিকিমের পাহাড়ে নেওয়া হলে কেবল সেখানকার শীতল বাতাস গায়ে মেখে কি বলতে পারবেন, আপনি কত হাজার ফুট ওপরের পাহাড়ে দাঁড়িয়ে আছেন?

কিংবা... দর্শকের তীব্র গর্জনে ঢাকা পড়ে যাওয়া মিরপুরের ক্রিকেট মাঠে আপনাকে চোখ বেঁধে নেওয়া হলে, আপনি কি কেবল শব্দ শুনে বলতে পারবেন, কোনটি শর্ট পিচ বা কোনটি ইয়র্কার বল, অথবা কোনটি কাভার ড্রাইভ বা পুল শট?

পাঠক হয়তো এই লেখককে এরই মধ্যে পাগল ঠাওরাচ্ছেন। তবে এমন একজন কিন্তু সত্যিই আছেন, যিনি ক্রিকেট মাঠে গিয়ে, ক্রিকেটের কিছুই চোখে না দেখে বলে দিতে পারেন, কোনটা জায়গায় দাঁড়িয়ে স্ট্রেট ড্রাইভ আর কোনটা ডাউন দ্য উইকেটে এসে উড়িয়ে মারা লফটেড শট। কেবল বল ও ব্যাটের শব্দকে হৃদয়ের গভীরতা দিয়ে শুনে তিনি বলে দিতে পারেন, কোনটি স্কয়ার কাট আর কোনটি স্কয়ার ড্রাইভ। ভদ্রলোকের নাম ডিন ডু প্লেসি। তিনি জন্মান্ধ এবং বিশ্বের প্রথম জন্মান্ধ ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার।

আজকের আধুনিক শব্দযন্ত্রের চরম উৎকর্ষতার যুগে একজন দৃষ্টিহীন ক্রিকেট অনুরাগীর পক্ষে টিভিতে খেলা ‘দেখা’ অবাস্তব কিছু নয়। কিন্তু যদি বলা হয়, ডিন ডু প্লেসি দৃষ্টিহীন হয়েও ছিলেন একজন ক্রিকেটের রেডিও ধারাভাষ্যকার, বিশ্বাস হবে? আগ্রহী হলে পড়ুন জিম্বাবুয়ের এই সাবেক ধারাভাষ্যকারের জীবনের অবিশ্বাস্য গল্পকথা, যা আপনার কাছে রূপকথা মনে হবে।

মায়ের গর্ভে থাকার সময়ই ডিন দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন। দুচোখের রেটিনার পেছনে টিউমার থাকায় মাতৃগর্ভে শুয়ে জন্মের আগেই ডিনের মৃত্যুদণ্ড শোনান চিকিৎসকরা। এ ছেলে যে জন্মের তিন-চার মাসের মধ্যেই মারা যাবে! একদল চিকিৎসকের সাহসী প্রচেষ্টায় জন্মের পরপরই ডিনের চোখের টিউমার অপসারিত হলো। ডিন এ পৃথিবীতে টিকে থাকার লাইসেন্স পেলেন, কিন্তু তা সুন্দর এ ধরণীকে দেখার অধিকার হারানোর বিনিময়ে। না, ঠিক বলা হলো না। ডিনের ক্ষেত্রে কথাটা বোধ হয় একটু ভুল হয়ে গেল।

সুন্দর ধরণী দেখতে হলে চোখ থাকতেই হবে, এমন বিশ্বাস আমাদের অনেকের থাকলেও ডু প্লেসির মনের বিশ্বাসটা ছিল অন্যরকম। তিনি বিশ্বাস করতেন, বিধাতা তাঁকে একদিক দিয়ে সব কেড়ে নিয়েছেন, কিন্তু অন্যদিক দিয়ে তা পুষিয়ে দিয়েছেন। দৃষ্টি হারানোর জন্যে যেখানে ৯৯ শতাংশ মানুষ নিজের ভাগ্যকে অভিশাপ দেন, ডিন সেখানে অন্যদিকের প্রাপ্তি নিয়ে নিজেকে ভাগ্যবান ভাবতেন। ডিনের শ্রবণশক্তি ছিল অত্যন্ত প্রখর এবং আশপাশের পরিবেশ বোঝার ক্ষমতা ছিল অন্যদের তুলনায় আশ্চর্য রকমের বেশি। কিন্তু তা দিয়ে ক্রিকেটের সঙ্গে যোগাযোগটা কীভাবে হবে? জীবনে কোনোদিন খেলার ছলেও ক্রিকেট ব্যাটটা হাতে ধরেননি। এমনকি ডিনের বড় ভাই গ্রেগ ডু প্লেসি জিম্বাবুয়েতে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেললেও ডিনের ছোটবেলার জগৎটা ছিল ক্রিকেটহীন। জগৎটা বদলে গেল যখন ডিনকে দৃষ্টিহীনদের উন্নত স্কুলে পড়ানোর জন্যে দক্ষিণ আফ্রিকা পাঠানো হলো ১৯৯১ সালে।

বোর্ডিং স্কুলে অবসর সময়টা পার করা অসহ্য মনে হতো ডিনের কাছে। বোর্ডিংয়ের প্রায় সব ছেলেই যখন বিকেলে মাঠে খেলতে যেত, তখন নিঃসঙ্গ ডিন রেডিওর নব ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নানা চ্যানেলে নিজের প্রশান্তি খুঁজে বেড়াতেন। চ্যানেল বদলাতে বদলাতে হঠাৎ একদিন তাঁর কানে কোলাহলময় কিছু শব্দের সঙ্গে সঙ্গে কিছু নির্দিষ্ট শব্দ ভেসে এলো। কাট, পুল, ইয়র্কার, শর্টপিচ, বাউন্সার, এসব শব্দের সঙ্গে সঙ্গে কিছু বিখ্যাত নাম তাঁর মনের মধ্যে খেলতে লাগল—ক্লাইভ রাইস, কেপলার ওয়েসেলস, অ্যালান ডোনাল্ড ইত্যাদি।

একটু আগ্রহ পেয়ে তিনি নিজের মধ্যে ক্রিকেটের জন্য একটু করে ভালোবাসার ফুল ফোটাতে শুরু করলেন। দীর্ঘ ২২ বছরের নির্বাসন শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা তখন ভারতের সঙ্গে নিজ মাটিতে টেস্ট খেলতে শুরু করেছে। রেডিও ধারাভাষ্যকাররা তখন ক্রিকেট নামক খেলাটির জন্য আবেগে গলা ফাটিয়ে দিচ্ছেন। সময় কাটানোর জন্য ক্রিকেট নামক এক নতুন ভালোবাসা ডিন নামের কিশোরটির হৃদয় মন্দিরে জায়গা করে নিচ্ছে। তবে সমস্যাও হলো। খেলাটির সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে ডিনের অনেকটা সময় লাগছিল। এত সব নিয়মকানুন কেবল রেডিওতে শুনে তাঁর পক্ষে আত্মস্থ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। সপ্তাহখানেক পরে স্কুল ছুটি হলে, তিনি যখন বাসার পথে হারারে এয়ারপোর্টে পা দিয়ে ভাইয়ের দেখা পেলেন, তখনই আবদারজুড়ে দিলেন, ক্রিকেট সম্পর্কে তাঁকে সব, সবটাই বলতে হবে। মাসখানেক বাড়িতে ছুটি কাটিয়ে আবার যখন বোর্ডিং স্কুলে পা রাখলেন, ডিন ততদিনে খেলাটির নাড়ি-নক্ষত্র বুঝে গেছেন। কেবল তাই নয়, খেলাটির দীর্ঘ ইতিহাসও তার অজানা রইল না।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে তখন তাঁর চিন্তা-চেতনা-মনজুড়ে কেবল একটাই জিনিস—ক্রিকেট। নানাজনের ক্রিকেট নিয়েই তাঁর আলোচনা আর রেডিওতে ক্রিকেট ‘দেখা’ এবং খেলার ধারাবিবরণী গ্রোগ্রাসে গিলে ফেলা। কিন্তু সব ম্যাচ তো আর দক্ষিণ আফ্রিকার রেডিওতে প্রচার করা হয় না। ততদিনে মাতৃভূমি জিম্বাবুয়ে টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়ে গেছে। ভারতের সঙ্গে অভিষেক টেস্ট হবে, যা হারারে থেকে কোনো দক্ষিণ আফ্রিকার রেডিওতে প্রচার হবে না। কিন্তু তাতে দমে গেলেন না এই ক্রিকেটপাগল। স্কুলে হেঁটে গেলেন, হেঁটে ফিরলেন, স্কুলে টিফিন খেলেন না, বিকেল নাশতা করলেন না। এসব করে তাঁর অনেক কয়েন জমে গেল। সেগুলো যেন কয়েন নয়, ক্রিকেট আর জিম্বাবুয়ের জন্য এক এক টুকরো ভালোবাসা। সেসব কয়েন দিয়ে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে হারারে স্পোর্টস গ্রাউন্ডের এক পানশালায় টেস্ট চলাকালীন প্রতিদিন ফোন করে গেলেন একটানা। প্রতিমুহূর্তের আপডেট চাই তাঁর। পানশালার লোকজন বিরক্ত হয়ে গেল। তারা মাঝেমধ্যে ফোন রিসিভ করে ক্রেডল টেবিলে রেখে দেয়। অন্যপাশে সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকায় কিশোর ডিনের কানে লেগে থাকে রিসিভার। মাঠ থেকে ভেসে আসে নানা চিৎকার। ব্যাট আর বলের লড়াইয়ের শব্দ। সে শব্দ ডিনের কানে ঢেলে দিত ক্রিকেট-সুধা। এভাবে তাঁর কয়েন শেষ হয়ে আসতে লাগল। কিন্তু ক্রিকেট নামক খেলাটির প্রতি তাঁর আবেগ তীব্র থেকে তীব্রতর হতে লাগল।

ক্রিকেট নিয়ে চরম আড্ডাপাগল এই ডিন কেমন করে যেন জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের অন্যতম গ্রেট ব্যাটসম্যান ডেভ হটনের ফোন নম্বর জোগাড় করে ফেললেন। আড্ডা দিলেন তাঁর সঙ্গে ফোনে। দৃষ্টিহীন একজন ক্রিকেট অনুরাগীর ক্রিকেটের প্রতি এতটা আবেগ আর ভালোবাসা দেখে হটনও তাঁকে খুব পছন্দ করে ফেললেন। তিনিও ডিনকে মাঝেমধ্যে পাল্টা ফোন দিতেন। ক্রমশ জিম্বাবুয়ের অন্য খেলোয়াড়দের সঙ্গেও ডিনের যোগাযোগ হতে লাগল, আড্ডা হলো। সবাই হয়তো হটনের মতো সাদরে নিলেন না তাঁকে, কিন্তু ক্রিকেটের প্রতি ডিনের নিখাদ ভালোবাসাকে কেউ উপেক্ষাও করতে পারেননি। ১৯৯৯ সালে ঘটে গেল এক ঘটনা। ডিন ততদিনে পড়া শেষ করে জিম্বাবুয়েতে একটি কোম্পানির সুইচ বোর্ডের দায়িত্ব নিয়ে চাকরি করছেন। শ্রীলংকা এলো জিম্বাবুয়েতে সিরিজ খেলতে। ডিন ছুটি নিয়ে মাঠে চলে এলেন। একে-ওকে বলে ডিন জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার রবি শাস্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন। আবদার করলেন, তিনি টিভি কমেন্ট্রি বক্সে একটু যাবেন এবং সেখানকার পরিবেশটা একটু বুঝবেন। রবি শাস্ত্রীকে কে যেন আগে থেকে ক্রিকেটের প্রতি ডিনের সীমাহীন আবেগের কথা বলেছিলেন। শাস্ত্রী ডিনের আবদার মেটালেন, তবে এক শর্তে। কমেন্ট্রি বক্সে যেহেতু লাইভ কথাবার্তা হয়, তাই ডিনকে একদম চুপচাপ বসে খেলা দেখতে হবে এবং ধারাবিবরণী শুনতে হবে। ডিন শর্ত মেনে নিয়ে চুপচাপ কমেন্ট্রি বক্সে বসলেন। লাইভ ধারাভাষ্যের একপর্যায়ে সব ভুলে গিয়ে এক ধারাভাষ্যকার হঠাৎ ডিনের কাছে জিম্বাবুয়ের পারফরম্যান্স কেমন হচ্ছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলেন। সুযোগ পেয়ে ডিন ঝাড়া পাঁচ মিনিট একটানা যেভাবে খেলাটি বিশ্লেষণ করলেন, তাতে অন্য ধারাভাষ্যকাররা হতভম্ব বনে গেলেন। তাঁদের কাছে মনেই হলো না, ডিন কেবল ব্যাট আর বলের শব্দ শুনে খেলাটির এমন বল বাই বল বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁদের মনে হলো, ডিন যেন হৃদয়ের অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে খেলাটি দেখছেন আর ধারাভাষ্য দিচ্ছেন। দুবছর বাদে ভারত যখন আবারও জিম্বাবুয়ে সফরে এলো, রবি শাস্ত্রী এবার নিজে গিয়ে ডিনের সাক্ষাৎকার নিলেন। ওই সময়ে ক্রিকইনফো আনুষ্ঠানিকভাবে ধারাভাষ্যকার হিসেবে ডিনকে নিয়োগ দিয়েছিল।

এরপর বলা চলে, অনেকটাই বদলে গেল ডিনের জীবন। যে জীবন ছিল নিঃসঙ্গতায় মোড়া, সে জীবনে ক্রিকেট এলো শীতল ঝর্ণার স্রোত হয়ে। তিনি ম্যাচের পর ম্যাচ রেডিওতে বর্ণনা করে চলেন ইয়র্কার নামের মহান শিল্প, স্লগ সুইপের বিভিন্ন স্টাইল। দৃষ্টিহীনদের অন্ধকার একাকী নিঃসঙ্গ জীবনে তিনি ভোরের আলো ফুটিয়ে চলেন।

রবি শাস্ত্রীর সঙ্গে ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর সবকিছুরই শব্দ আছে। এমনকি নীরবতাও কথা বলে। সব শব্দকে আলাদা করে নেওয়ার মতো কান ও হৃদয় থাকতে হয়।’

উদাহরণ দিয়ে ডিন বলেন, ‘একজন ব্যাটসম্যান যখন অফসাইডে খেলে, তখন তীক্ষ্ণ একটা ফেটে যাওয়ার মতো আওয়াজ তাঁর কানে আসে। আবার যদি লেগ সাইডে খেলা হয়, তখন আওয়াজটা একটু ভোঁতা ধরনের হয়। কারণ সে প্যাডের কাছ থেকে খেলে।’

ডিন ব্যাটসম্যানদের আওয়াজ থেকেও ইয়র্কার চিনতে পারতেন। শোয়েব আখতারের বল ডেলিভারি করার সময় ‘ঘোঁৎ’ করে একটা আওয়াজ হতো। ডিন সে আওয়াজের ভেরিয়েশন থেকে আগেই বুঝতে পারতেন, শোয়েব কোনটি ইয়র্কার দেবেন আর কোনটি বাউন্সার দেবেন। এ কথা শুনে শোয়েব আখতার হতভম্ব হয়ে বলেছিলেন, ‘ভাগ্যিস, উনি (ডিন) কেবল ধারাভাষ্যই দেন। ব্যাট হাতে মাঠে নামলে ডিন হয়তো আমাকে পিটিয়ে ছাতু করতেন।’

দিনের পর দিন জিম্বাবুয়ে রেডিওতে ডিন একেবারে বিনে পয়সাতেই ধারাভাষ্য দিতেন। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের আর্থিক অবস্থা কোনোকালেই তেমন ভালো ছিল না। খেলোয়াড়দের বেতন দিতেই বোর্ড হিমশিম খেয়ে যেত, আবার ধারাভাষ্যকারদের বেতন! ডিনের তাতে একটুও আফসোস হতো না। তিনি যে খেলাটিরই পাগল। আবেগী হৃদয়ে আত্মস্থ করা খেলাটির নিখুঁত বর্ণনাতেই ছিল তাঁর যত সুখ। একবার আম্পায়ার ড্যারেল হেয়ার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বেশকিছু বাজে সিদ্ধান্ত দিলেন। ম্যাচ শেষে ড্যারেলের সঙ্গে দেখা করলেন ডিন, বললেন, ‘ড্যারেল, আমি তোমাকে একটা জিনিস উপহার দিতে দিতে চাই, নেবে?’

সম্মতি পেয়েই নিজের কৃত্রিম চোখজোড়া খুলে ড্যারেলের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ডিন বললেন, ‘তোমার চোখ আর ঠিকমতো দেখছে না। তুমি বরং আমার চোখ জোড়া ব্যবহার করো।’ বলেই তিনি হো হো করে হেসে উঠলেন। তাঁর সেই স্নিগ্ধ অমলিন হাসিতে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের সব দুঃখ, সব অন্ধকার কেটে যাওয়ার মতো যথেষ্ট আলো ছিল। কিন্তু হায়!

যে দেশে ডিন ডু প্লেসির মতো অসাধারণ ক্রিকেট অনুরাগীর জন্ম হয়, যে দেশে ডেভ হটন, হিথ স্ট্রিক, নিল জনসন, ফ্লাওয়ার ভাইদের মতো অসাধারণ ক্রিকেট প্রতিভা জন্ম নেয়, সে দেশে যে রবার্ট মুগাবে, এমারসন নানগাগওয়ার মতো একনায়কেরও জন্ম হয়! জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট প্রশাসনের সীমাহীন স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও অযোগ্যতার জন্য টাটেন্ডো টাইবু, প্রসপার উৎসেয়া, চার্লস কভেট্রিদের সোনালি স্বপ্নগুলো কখনো ডানা মেলতে পারেনি।

দৃষ্টিসম্পন্ন সুস্থ এই আমরা কক্সবাজার, কুয়াকাটা বা সেন্টমার্টিনের অপার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হই। সিলেটের অপরূপ চা বাগান কিংবা মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে রঙিন হই। দার্জিলিং বা সিকিমের পাহাড়ে গিয়ে আমরা আপ্লুত হয়ে পড়ি। আর যাদের বাইরে যাওয়ার সুযোগ হয় না, তারা বাড়ির পাশের মাঠে ছোট্ট ঘাসফুলের ওপর শিশির বিন্দু দেখে বিমোহিত হই কিংবা ছোট্ট কুকুরছানা বালিতে মুখ গুঁজে মুখময় বালি মাখার পর যখন পৃথিবী পানে চেয়ে ওঠে, তা দেখে আমরা শিহরিত হই। অপরদিকে জীবনে কোনোদিনই ব্যাট-বলের সঙ্গে দৃষ্টিগোচর না করেও ডিন ডু প্লেসি যখন ক্রিকেটকে হৃদয়ের গভীরে ঠাঁই দেন, তখন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট থেকে নির্বাসনের খবর যেন তাঁর বুকে ছুরি চালিয়ে দেয়। চোখ না থেকেও ক্রিকেটের প্রতি কারো থাকে তীব্র ভালোবাসা, চোখ থাকার পরেও কারো মনে থাকে ক্রিকেট থেকে অবৈধ আয়ের লালসা। অর্থের প্রতি সেই লালসা ও সীমাহীন দূর্নীতি আজ জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটকে গভীর খাদের কিনারে নিয়ে গেছে। একবুক ভালোবাসাকে কেউ যেন পাথরচাপা দিয়ে রেখেছে। জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট থেকে বাংলাদেশের অনেক কিছু শেখার আছে, নেওয়ার আছে ৷

ক্রিকেট থেকে দূর হোক সব লালসা, জয়ী হোক ডিন ডু প্লেসির অন্ধ ভালোবাসা।