নারী ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল : সাক্ষাৎকারে জাহানারা আলম

Looks like you've blocked notifications!

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ৫ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েছিলেন জাহানারা আলম। দেশের প্রথম নারী ক্রিকেটার হিসেবে খেলেছেন আইপিএলে। কয়েক দিন আগে আইসিসির হয়েও খেলে এসেছেন। স্রোতের প্রতিকূলে ক্রিকেটে নিজের পরিচয় গড়ে তোলা জাহানারা মনে করেন, এশিয়া কাপ জয় বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটকে অনেকটা বদলে দিয়েছে। তা ছাড়া সামনের দিকে নারী ক্রিকেটারদের ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল বলে মনে করেন বাংলাদেশ দলের অন্যতম এই সদস্য।

সম্প্রতি এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে আসন্ন বিশ্বকাপ বাছাই নিয়ে কথা বলেন জাহানারা। সফরে যাওয়ার আগে নিজেদের প্রস্তুতি এবং লক্ষ্যের কথা জানিয়ে যান এই পেস বোলার।

প্রশ্ন : বিশ্বকাপ বাছাইয়ের অভিযান, প্রস্তুতি কেমন?

জাহানারা : আমার মনে হয় যে যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েছি আমরা। অনুশীলন শুরু করলাম, জিম সেশন করলাম, নেট সেশন করলাম, ম্যাচও খেললাম—সব মিলিয়ে ভালো। আর কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার এবং ওই ধরনের উইকেটের সঙ্গে আমরা আগে থেকেই পরিচিত। এ ছাড়া ‘এ’ দলের হয়ে, জাতীয় দলের হয়ে অনেকে এবং ইমার্জিং টিম সাউথ আফ্রিকা ঘুরে এসেছে। পিংকি ও আমি ইংল্যান্ড থেকে ঘুরে এসেছি। তাই বলতে পারি, সামগ্রিকভাবে ভালো প্রস্তুতি নিয়েই আমরা বিশ্বকাপে যাওয়ার অভিযানে যাচ্ছি।

প্রশ্ন : দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘এ’ দলের সফর কতটা কাজে দেবে বলে মনে করেন?

জাহানারা : বিশ্বকাপ বাছাইয়ে যাওয়ার আগে এমন একটা সফর দরকার ছিল। তারা ওডিআই সিরিজ জিতলেও টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরে গেছে। তারপরও আমি বলব, এখানে আমরা অনেকটা এগিয়ে। তা ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশন অনেকটা স্কটল্যান্ড, নেদারল্যান্ডসের মতোই হবে। আর স্কটল্যান্ডে কোয়ালিফাইয়ের আগে আমরা নেদারল্যান্ডসে যাচ্ছি। ওখানকার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা কিছু প্রীতি ম্যাচ খেলব। তাই এটা মনে হয় আমাদের জন্য বেশি ভালো হবে।

প্রশ্ন : আইসিসির হয়ে আপনার ইংল্যান্ড সফরের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

জাহানারা : আলহামদুলিল্লাহ, এটা আমার জন্য অনেক ভালো অভিজ্ঞতা ছিল। কারণ, একই কথা বলব যে সাউথ আফ্রিকার মতোই ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে আমি মানিয়ে নিতে পেরেছিলাম। আর সেখানে আপনি যদি ভালো ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে বল করেন, তাহলে আপনার আত্মবিশ্বাস আরো অনেক বেড়ে যাবে; যেখানে আমি বিশ্বমানের ব্যাটসম্যান সুজি রাইট ও টেইলরকে বল করেছি। তাই আমি বলতে পারি, আমি মোটামুটি প্রস্তুত। বাকিটা মাঠের খেলায় প্রমাণের অপেক্ষা।

প্রশ্ন : দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি, আসন্ন সফরে এটা মেয়েদের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে?

জাহানারা : দেখুন, আপনি ভালো রেজাল্ট করতে চাইলে আপনাকে সে পরিমাণ ম্যাচ খেলতে হবে, সেটা ম্যাচ হারুন বা জিতুন। কারণ, ম্যাচের মধ্যে থাকলে ম্যাচর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা এবং ম্যাচ জয়ের ক্ষুধাটা বেড়ে যায়। তবে আমার মনে হয় না, বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে এটা খুব বেশি প্রভাব ফেলবে। আমি বলব, যে সাউথ আফ্রিকার ইমার্জিং দলের সফরটা, ইংল্যান্ড একাডেমি স্কোয়াডের হয়ে খেলা এবং নেদারল্যান্ডসে প্রস্তুতি ম্যাচের মাধ্যমে এটা আসলে ঢেকে যাবে পুরোপুরি। সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েই আমরা মাঠে নামব।

প্রশ্ন : দেশের পাশাপাশি বিদেশি টুর্নামেন্টেও আপনার খেলা হয়, এটা কতটা প্রেরণা দেয়?

জাহানারা : এটা আসলে অনেক বড় আনন্দের। তা ছাড়া যখন আপনি ভালো পারফরম্যান্স করবেন, তখন সারা দেশ আপনার সঙ্গে থাকবে এবং পরিবারসহ সবাই আপনাকে অনেক বাহবা দেবে। তখন সারা বিশ্ব থেকে আপনাকে কল করে নেবে। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ ও আইসিসি একাডেমি টিমের মাধ্যমে আমাকে কল করে খেলাধুলার জন্য নিয়ে যাচ্ছে। একজন ক্রিকেটার হিসেবে এটা অনেক বড় পাওয়া, যেটা আসলে আমাদের ড্রিম।

প্রশ্ন : ক্রিকেটে আসার ভাবনা কীভাবে এলো?

জাহানারা : ক্যারিয়ারের শুরুতে ক্রিকেটার হয়ে উঠব, সে রকম ভাবনা ছিল না। ক্রিকেটার হওয়ার পর ক্রিকেটের প্রতি ভালোলাগা আরো বেড়েছে। আর আমার মনে হয়, বর্তমান সময়টা অনেক ভালো যাচ্ছে, যেটা আমি চেয়েছিলাম। তবে এখান থেকে যদি আরো ওপরে উঠতে হয়, তাহলে আমাকে আরো ভালো পারফর্ম করতে হবে।

প্রশ্ন : আজকের জাহানারা হয়ে ওঠার পেছনের লড়াই কেমন ছিল?

জাহানারা : দেখুন, যেকোনো ভালো অর্জনের পেছনে কিন্তু অনেক বাধা-বিপত্তি থাকে এবং অনেক পরিশ্রমও থাকে। আজকের আমি হয়ে ওঠার পেছনে অনেক বাধা ছিল। আমাকে প্রচুর পরিশ্রম করে আজকে এখানে আসতে হয়েছে। অনেকের কথা শুনতে হয়েছে। আমার মনে হয় যে আপনি যদি সৎ থাকেন এবং কঠোর পরিশ্রম করেন, তাহলে জয় আসবেই এবং আপনি আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন।

প্রশ্ন : পারিবারিক কোনো বাধা…

জাহানারা : ক্রিকেটে আসতে আমার খুব বেশি পারিবারিক বাধা ছিল না, এটা খুব সাধারণ ছিল। মেয়েরা সবচেয়ে বড় বাধাটা পায় পরিবার থেকে। মেয়েরা পরিবার থেকে খুব একটা সহযোগিতা পায় না। সেদিক থেকে আমি অনেক ভাগ্যবান ছিলাম। কারণ, পরিবারের পূর্ণ সহযোগিতা আমি পেয়েছিলাম।

প্রশ্ন : মেয়েদের ক্রিকেট ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনার মন্তব্য?

জাহানারা : আমি মনে করি, আমরা এশিয়া কাপ জেতার পর অনেক মা-বাবা তাদের মেয়েদের ক্রিকেটে আসতে অনেক উৎসাহিত করছেন। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি এবং আমার বিশ্বাস যে এখন থেকে মেয়েরা আরো বেশি ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত হবে। আমার মনে হয়, নারী ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল। কারণ, এখন নারীদের জন্য ক্রিকেট খেলাটা অনেক বেশি প্রফেশনাল। আর এভাবে যদি আমরা ভালো খেলতে থাকি এবং আমাদের র‍্যাঙ্কিং যদি আটের ভেতর আসে এবং একই সঙ্গে প্রচুর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে পারি, তাহলে আমার মনে হয় আমাদের দেশের মেয়েদের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না।