ডমিঙ্গোর পূর্বসূরিরা যেমন ছিলেন
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার রাসেল ডমিঙ্গো। আপাতত দুই বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন সাবেক এই প্রোটিয়া কোচ। আগামী ২১ আগস্ট থেকে সাকিব-তামিমদের দেখভালের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন তিনি। ডমিঙ্গোর আগে বাংলাদেশের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন আরো অনেক নামি-দামি কোচ। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সাবেক কয়েকজন কোচের পরিসংখ্যান :
মহিন্দর অমরনাথ
১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন নিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল প্রথম দীর্ঘমেয়াদি কোচ। আর প্রথম বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় দায়িত্ব ভারতের মহিন্দর অমরনাথকে। ১৯৯৩ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশের দায়িত্ব নিয়েছিলেন অমরনাথ। ছিলেন ১৯৯৪ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে অনুষ্ঠিত আইসিসি ট্রফি পর্যন্ত। অবশ্য ১৯৯৪ আইসিসি ট্রফিতে ব্যর্থ হয়েছিল বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতির পথে অমরনাথের অবদান কম নয়।
গর্ডন গ্রিনিজ
১৯৯৬ সালে প্রথম বাংলাদেশ দলের কোচের দায়িত্ব নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান গর্ডন গ্রিনিজ। তাঁর অধীনেই ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জিতে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। সেই বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচের মাধ্যমে বাংলাদেশ অধ্যায়ের ইতি টানেন ক্যারিবীয় কোচ।
গ্রিনিজের দায়িত্বে মোট ২৩টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে ২০ হারের বিপরীতে ছিল তিনটি জয়।
এডি বারলো
এরপর বাংলাদেশের দায়িত্ব নেন এডি বারলো। দক্ষিণ আফ্রিকার এই কোচের বিদায়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এ দেশের ক্রিকেট ভক্তদের আবেগ। ১৯৯৯ সালে টাইগারদের প্রধান কোচ হয়ে আসেন তিনি। তবে তাঁর বিদায়টা ছিল অনেকটা অস্বাভাবিক। বাংলাদেশ টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর তাঁর অধীনে মাঠে নামার অপেক্ষা ছিল। সেই মুহূর্তে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। হারিয়ে ফেলেছিলেন চলাফেরার শক্তি। এরপর ২০০১ সালে চোখের জলে সবাইকে কাঁদিয়ে বাংলাদেশকে বিদায় বলে যান এই প্রোটিয়া কোচ।
তাঁর অধীনে ছয়টি একদিনের ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। যেখানে একটিতেও জয়ের দেখা পায়নি টাইগাররা। তবে এ দেশের ক্রিকেটীয় অবকাঠামো নির্মাণে অবিস্মরণীয় অবদান রেখে গেছেন এডি বারলো।
ট্রেভর চ্যাপেল
২০০১ সালের এপ্রিলে ট্রেভর চ্যাপেলকে নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ। খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি তাঁর বাংলাদেশ ইনিংস। অল্প সময়ে তাঁর অধীনে কোনো সফলতা পায়নি এ দেশের ক্রিকেট। অভিভাবক হিসেবে শিষ্যদের ব্যর্থতা আড়াল করার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া সে সময়ের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান আকরাম খান ও আমিনুল ইসলামকে পরিকল্পনা করে বাদ দেওয়ার অভিযোগের মুখে বাংলাদেশকে বিদায় বলতে হয় চ্যাপেলের।
চ্যাপলের অধীনে ১০টি টেস্ট এবং ৯টি ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ। একটিতেও জয়ের মুখ দেখেনি। ২০০২ সালে বিসিবি তাঁকে বরখাস্ত করে।
মহসিন কামাল-আলী জিয়া
২০০২ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশের কোচ হয়ে আসেন দুই পাকিস্তানি কোচ মহসিন কামাল-আলী জিয়া। তাদের দায়িত্ব দেওয়ার সময়টা বাংলাদেশ ক্রিকেটের খারাপ সময় ছিল। ২০০৩ বিশ্বকাপে বাজে পারফরম্যান্সের কারণে তাদের বিদায় জানায় বাংলাদেশ। এই জুটির অধীনে ছয় টেস্ট এবং ১৭ ওয়ানডের একটিতেও জয় পায়নি টাইগাররা।
ডেভ হোয়াটমোর
২০০৩ সালে জুনে বাংলাদেশের কোচ হয়ে আসেন ডেভ হোয়াটমোর। ২০০৩ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
হোয়াটমোরের অধীনেই বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো টেস্ট ম্যাচ জেতে। সেই বছরই পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়াকে হারায় বাংলাদেশ। ফলে দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ ছেড়ে যান তিনি। তাঁর অধীনে ৮৯টি ওয়ানডে খেলে ৩৩ টিতে জয় পায় বাংলাদেশ। বাকি ৫৬ টিতে হারে। আর ২৭ টেস্টের একটিতে জয় আসে।
জেমি সিডন্স
জেমি সিডন্স বাংলাদেশের অন্যতম সফল একজন কোচ। তাঁর দায়িত্বে অনেকটা বদলে যায় এ দেশের ক্রিকেট। ২০০৭ সাল থেকে চার বছর সাকিব-তামিমদের কোচের দায়িত্ব পালনের পর ২০১১ সালে শেষ হয় সিডন্সের বাংলাদেশ অধ্যায়।
সিডন্সের দায়িত্বে ১৯ টেস্টের দুটিতে জয় পায় টাইগাররা। হারে ১৬টিতে। আর ৮৪টি একদিনের ম্যাচে জয় আসে ৩১টি, পরাজয় ৫৩টিতে ।
স্টুয়ার্ট ল
এরপর স্টুয়ার্ট ল দায়িত্ব পান। সিডন্সের বিদায়ের পর মাত্র তিন মাস বাংলাদেশের কোচ ছিলেন স্টুয়ার্ট। ২০১৩ পর্যন্ত চুক্তি থাকলেও ‘পারিবারিক কারণ’ দেখিয়ে এই অস্ট্রেলিয়ান দেশে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। তাঁর অধীনে ১৫ ওয়ানডেতে ১০ হারের বিপরীতে পাঁচটিতে জয় পায় বাংলাদেশ। আর দুই টি-টোয়েন্টিতে সমান একটি করে জয়-পরাজয়।
রিচার্ড পাইবাস
ইংলিশ বংশোদ্ভুত দক্ষিণ আফ্রিকান পাইবাসের বাংলাদেশ অধ্যায় বেশিদিন নয়। ২০১২ সালের মে মাসে এসে অক্টোবরে বাংলাদেশ ছেড়ে যান তিনি। তাঁর দায়ত্বে ৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে সমান চারটি করে জয়-পরাজয় পায় বাংলাদেশ।
শেন জার্গেনসন
শেন জার্গেনসন ২০১৩ সালে টাইগারদের দায়িত্ব নেন। তাঁর অধীনে আট টেস্টের একটিতে জয় এবং চারটিতে ড্র হয়। আর ১৬টি ওয়ানডেতে পাঁচটিতে জয়ের বিপরীতে হার আসে ১০টিতে। বাকি একটিতে ফলাফল আসেনি।
চন্ডিকা হাথুরুসিংহে
২০১৪ সালের মে মাসে প্রধান কোচ হয়ে বাংলাদেশে আসেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। বিসিবির সঙ্গে তাঁর চুক্তি ছিল ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত। কিন্তু হঠাৎ করে গত বছরের অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর চলাকালীন বিসিবি সভাপতি বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠান তিনি। শেষ হয় লঙ্কান কোচের বাংলাদেশ অধ্যায়।
হাথুরুসিংহের অধীনে ২১ টেস্টের ছয়টিতে জয় পায় বাংলাদেশ। বাকি ১৫টির মধ্যে ১১ হারের বিপরীতে চারটিতে ড্র। ওয়ানডেতে ৫২টি ম্যাচের মধ্যে জয় ২৫টিতে। আর টি-টোয়েন্টিতে ২৯ ম্যাচে জয় ১৮টিতে।
স্টিভ রোডস
সাকিব-মাশরাফিদের সর্বশেষ কোচ ছিলেন স্টিভ রোডস। ২০১৮ সালের জুন মাসে বাংলাদেশের দায়িত্ব নেন এই ইংলিশ কোচ। তাঁর অধীনে এক বছরে টেস্ট, টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে মিলিয়ে মোট ৪৫টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে আট টেস্টে তিন জয় এবং পাঁচ পরাজয়। ৩০ ওয়ানডেতে ১৭টিতে জয়, হার ১৩টি। আর টি-টোয়েন্টিতে সাত ম্যাচে চার হারের বিপরীতে জয় তিনটিতে।