ফুটবল ছাপিয়ে শ্রদ্ধা-সহমর্মিতা ছিল যে ম্যাচে
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের ঠিক আগে ভয়ংকর দুঃসংবাদে থমকে গিয়েছিল ফ্রান্স। হতবাক হয়ে পড়েছিল পুরো বিশ্ব। গত শুক্রবার রাতে প্যারিসে মর্মান্তিক সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ১২৯ জন নিহত হওয়ায় ম্যাচটা স্থগিত করা হবে কি না, এমন গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছিল।
তবে এই বীভৎস হামলাতেও মনোবল হারাননি ফ্রান্সের ফুটবলাররা। ইংল্যান্ডে গেছেন পূর্বনির্ধারিত প্রীতি ম্যাচে অংশ নিতে। লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ড-ফ্রান্স ম্যাচে ফুটবলের চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে প্যারিসে নৃশংস হত্যাকাণ্ড। নিহতদের বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছে গোটা স্টেডিয়াম। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে মাঠের লড়াইয়ে ফ্রান্সের বিপক্ষে ২-০ গোলের জয় পেয়েছে ইংল্যান্ড। গোলদাতা ওয়েইন রুনি ও বার্মিডেল অ্যালি। তবে ফলাফল ছাপিয়ে ওয়েম্বলিতে মূর্ত হয়ে উঠেছে শ্রদ্ধা আর সহমর্মিতা।
মঙ্গলবার রাতে ওয়েম্বলিতে প্রায় ৭১ হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিল ফ্রান্সের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে। গ্যালারিতে ছিলেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন আর প্রিন্স উইলিয়ামও। খেলা শুরু হওয়ার আগে সবাই সমবেত কণ্ঠে ফ্রান্সের জাতীয় সংগীত গেয়ে স্মরণ করেছেন নিহতদের। যেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ফুটবল-ভক্তরা। মাঠের সেই সময়ের বর্ণনা দিয়ে ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশম বলেছেন, ‘আবেগগত দিক দিয়ে মুহূর্তটা ছিল দৃঢ়তায় ভরা। সম্প্রীতির সেই মুহূর্তে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। যা আমাদের মনোবল অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিল। আমরা একেবারে হৃদয় দিয়ে তা অনুভব করছিলাম।’
প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন ফ্রান্সের মিডফিল্ডার লাসানা দিয়ারার এক কাজিন। তাঁর সতীর্থ আঁতোয়েন গ্রিজম্যানের এক বোন কনসার্ট দেখতে গিয়ে কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন। দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামার সময় দুজনকে বিপুল করতালি দিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন ওয়েম্বলির দর্শকরা। দেশম বিশেষ করে দিয়ারার মানসিক দৃঢ়তা দেখে অভিভূত, ‘সে আমাদের একটা অসাধারণ বার্তা দিয়েছে। তার উপস্থিতি আমাদের অনেক শক্তি জুগিয়েছে। সে জন্যই শেষ কয়েক মিনিটের জন্য আমি তাকে মাঠে নামিয়েছি।’
সহমর্মিতা আর শ্রদ্ধা জানানোর এই ম্যাচে গ্যালারিতেও দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। অন্যান্য ম্যাচে চরম বৈরী অবস্থানে থাকে দুই দলের সমর্থকরা। তবে এবারের প্রীতি ম্যাচে আক্ষরিক অর্থেই প্রীতির আবহ ছিল। ইংল্যান্ড-ফ্রান্সের সমর্থকরা একে-অপরের গলা জড়িয়ে খেলা দেখেছেন। ইংল্যান্ডের অনেক সমর্থকের হাতে দেখা গেছে ফ্রান্সের পতাকা। অনেকের ব্যানারে ‘প্যারিসের জন্য প্রার্থনা’ লেখাও ছিল।
ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামের বাইরে ছিল ফ্রান্সের পতাকার রঙের আলোকসজ্জা। খেলা শুরু হওয়ার আগে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এফএ) সভাপতি গ্রেগ ডাইক আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, ‘আজ রাতে আমাদের ইংল্যান্ডের মানুষের সামনে প্যারিস আর ফ্রান্সের মানুষের উদ্দেশে বলার সুযোগ এসেছে যে আমরা তোমাদের পাশে আছি। আমরা তোমাদের সমর্থন করি। আজ আমরা সবাই প্যারিসিয়ান। আজ আমরা সবাই ফরাসি। আমরা সবাই তোমাদের দুঃখ ভাগ করে নিচ্ছি। একই সঙ্গে তোমাদের হার না মানার সংকল্পও ভাগ করে নিচ্ছি।’
মঙ্গলবার রাতে ইংল্যান্ড-ফ্রান্সের ম্যাচটি হতে পারলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে বাতিল করা হয়েছে জার্মানি-নেদারল্যান্ডসের ম্যাচ। একই কারণে বেলজিয়াম-স্পেনের ম্যাচটিও স্থগিত করা হয়েছে।