মেসির ছায়া থেকে বেরিয়ে আসছেন নেইমার?
২০১৩ সালে বার্সেলোনায় আসার পর একটা কথা বারবার বলেছিলেন নেইমার, ‘আমি এখানে সেরা খেলোয়াড়ের কাছ থেকে শিখতে এসেছি।’ নেইমারের ‘সেরা’ খেলোয়াড়টির নাম যে লিওনেল মেসি, তা বলে না দিলেও বুঝে নেওয়া যায়। টানা চারবারের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের সঙ্গে খেলে নেইমার সত্যিই নিজেকে অনেক পরিণত করেছেন। মাঠে মেসির সঙ্গে তাঁর দারুণ বোঝাপড়া। মাঠের বাইরেও দুজনের চমৎকার সম্পর্ক। তবে বার্সেলোনায় শুরু থেকেই যেন মেসির ছায়ায় ঢাকা পড়েছিলেন নেইমার। যদিও এখন অনেক ফুটবলবোদ্ধার ধারণা, ধীরে ধীরে দলের সবচেয়ে বড় তারকার ছায়া থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছেন ২৩ বছর বয়সী এই ব্রাজিলিয়ান তারকা।
গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে চোটের কারণে মাঠের বাইরে মেসি। তবে তাঁর অনুপস্থিতি বার্সাকে তেমন বুঝতে দিচ্ছেন না নেইমার। লুইস সুয়ারেজের সঙ্গে জুটি বেঁধে লা লিগায় দলকে এনে দিয়েছেন টানা চারটি জয়। নেইমার-সুয়ারেজ জুটির সাফল্যে কাতালানরা এ মুহূর্তে লা লিগার পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। আগামী শনিবার রিয়াল মাদ্রিদের মাঠে মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতে মেসির খেলার সম্ভাবনা কম। বার্সা সমর্থকরা তাই নেইমারের দিকেই তাকিয়ে আছেন।
ফুটবলে দীর্ঘদিন ধরে চলা মেসি-রোনালদোর আধিপত্যও ভেঙে দেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন নেইমার। এবারের লা লিগায় ১১ গোল নিয়ে তিনি এখন সর্বোচ্চ গোলদাতা। দুই গোল কম করে সুয়ারেজ আছেন দ্বিতীয় স্থানে। রোনালদোর গোল আটটি। গত ছয় মৌসুম স্প্যানিশ লিগের সেরা গোলদাতার পুরস্কার মেসি ও রোনালদো (দুজনই তিনবার করে) ভাগ করে নিলেও এবার নেইমারের ঔজ্জ্বল্যে অন্য কিছুর ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
গত মৌসুমেও বার্সেলোনার জার্সিতে দারুণ কেটেছিল নেইমারের। ৫১ ম্যাচে ৩৯ গোল করেছিলেন তিনি। প্রথম ফুটবলার হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনালের দুই লেগ আর ফাইনালে গোল করার কৃতিত্বও তাঁরই।
গত ৮ নভেম্বর ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে বার্সেলোনার সর্বশেষ ম্যাচে নেইমারের দ্বিতীয় গোলটি দেখার পর তাঁকে ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনালদিনিয়োর সঙ্গে তুলনা করেছেন কোচ লুইস এনরিকে। নেইমার যে এখন অনেক পরিণত হয়ে উঠেছেন, তা জানিয়েছেন বার্সার সাবেক এবং আর্জেন্টিনার বর্তমান কোচ জেরার্দো মার্তিনোও। দুই বছর আগে তাঁর অধীনেই বার্সায় অভিষেক হয়েছিল নেইমারের।
গত মৌসুমে বার্সেলোনার দ্বিতীয় ট্রেবল জয়ে বিশাল অবদান রাখায় এবারের বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার মেসির হাতে ওঠার সম্ভাবনাই বেশি। তবে দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্থান দখল করতে পারেন নেইমার। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো মেসির ছায়া থেকে বেরিয়ে ফুটবলের সেরা পুরস্কারও পেয়ে যেতে পারেন ব্রাজিলের এই প্রতিভাবান ফুটবলার।
আপাতত সেই চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে নেইমার এবং বার্সেলোনা ভক্তরা ‘এল ক্লাসিকো’র দিকে তাকিয়ে। মেসির অনুপস্থিতিতে রিয়ালের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে নেইমার যেন জ্বলে ওঠেন, সেই প্রার্থনাই হয়তো করছেন তাঁরা।