গ্রেগ চ্যাপেলের কাছে সৌরভের কৃতজ্ঞতা!
‘২০০৬ সালেই ছিল আমার জীবনের সব থেকে বড় প্রত্যাবর্তন। যার নেপথ্যে ছিল প্রিয় বন্ধু গ্রেগ চ্যাপেল।’ কলকাতায় ইনফোকম ২০১৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘ট্রান্সফর্মিং সেট ব্যাক ইন্টু কামব্যাক’ শীর্ষক এক আলোচনায় এভাবেই সরাসরি নিজের জীবনের কথা শোনালেন সৌরভ গাঙ্গুলী।
ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়ক বলেন, “১৯৯১ সালে অস্ট্রেলিয়া সফর আমার জীবনে অনেক বড় শিক্ষা হয়ে এসেছিল। আজও মনে পড়ে, রাতে হোটেলে পৌঁছানোর পর জেট ল্যাগে কাবু হয়ে ঘরের কোণে চুপচাপ বসেছিলাম। সেই সময় সতীর্থ এক তারকা ক্রিকেটার ডিনারের প্রস্তাব দেন। সেই প্রস্তাব ফেরাতে পারিনি। রেস্তোরাঁয় ডিনার খেতে খেতে সে আমাকে বলেছিল, ‘এই সিরিজে না এলেই পারতে।’ কথাটা শুনে গলায় খাবার আটকে যাচ্ছিল। তারপরই দল থেকে বাদ পড়ি।”
তবে অদম্য মনোবলের অধিকারী সৌরভ কখনো হাল ছেড়ে দেননি। এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘জীবনে চলতে গেলে ব্যর্থতা আসবেই। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোই লক্ষ্য হওয়া উচিত। আমি ভারতীয় দলের ক্যাপ্টেন হওয়ার পর আমার একমাত্র লক্ষ্য ছিল একটা দুর্দান্ত দল গড়ে তোলা। কারণ দল গড়ে তুলতে না পারলে ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো মুশকিল। দলের মধ্যে সবাইকে সমান চোখে দেখা এবং পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেছিলাম। দলে সবার অবদান না থাকলে যে সাফল্য আসবে না সেটা বুঝতে পেরেই দল গড়ার ক্ষেত্রে বেশি মনোযোগ দিয়েছিলাম।’
অতীতের স্মৃতিচারণা করে ‘প্রিন্স অব কলকাতা’ সৌরভ বলেন, ‘একবার অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য দল নির্বাচন করতে গিয়ে রাত ২টা পর্যন্ত অনিল কুম্বলের জন্য লড়াই করেছিলাম। সেই সময় নির্বাচকরা বলেছিলেন যে দল হারলে নেতৃত্ব চলে যাবে আমার। কিন্ত সেই বছরই ৭৫টি উইকেট নিয়ে রেকর্ড গড়েছিল অনিল কুম্বলে।’
অধিনায়ক হিসেবে ভারতীয় ক্রিকেটকে বদলে দেওয়া সৌরভ কোনো রাখঢাক না করে বলেন, “ভারত অধিনায়ক হিসেবে আমার ক্রিকেট-জীবনের অন্যতম কঠিন মুহূর্ত ছিল ২০০২ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ। নাগপুরে হোটেলে সারারাত ঘুমাতে পারিনি। একসময় মাঝ রাত্রে উঠে হোটেলের রিসেপশনিস্টকে ফোন করে বলি, ‘কীভাবে ঘুমাতে পারব বলতে পারেন?’ ভারত অধিনায়কের মুখে এমন কথা শুনে ঘাবড়ে গিয়েছিল বেচারা!”
অনুষ্ঠানে গ্রেগ চ্যাপেলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২২টি শতকসহ ১৮ হাজার ৫৭৫ রানের মালিক সৌরভ বলেন, “কোচ গ্রেগ চ্যাপেলের কাছ থেকে দারুণ শিক্ষা পেয়েছি। গ্রেগ বলেছিলেন, ‘বিদেশে কোনো টেস্ট সিরিজের জন্য চার দিন আগে নয়, ছয় মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে।’ ২০০৬ সাল ছিল আমার জীবনের সব থেকে বড় সেটব্যাক। নেপথ্যে প্রিয় বন্ধু গ্রেগ চ্যাপেল। আমার ক্রিকেট-জীবনের নানা উত্থান-পতনের মধ্যে একসময় আমার বাবা চণ্ডীদাস গাঙ্গুলী বলেছিলেন, ‘সবই তো পেয়েছ। এখনো কেন পড়ে আছ?’ উত্তরে বাবাকে বলেছিলাম, ‘ক্রিকেট আমার কাছে সব থেকে প্রিয় জিনিস। তাই পড়ে রয়েছি।’ পরে অবশ্য বুঝিয়ে দিয়েছিলাম, আমি ফুরিয়ে যাইনি।”