এগিয়ে যাও বাংলাদেশ
দারুণ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। বিচক্ষণতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে খেলে তারা ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে। পুরো ম্যাচেই তাদের ব্যাটিং-বোলিংয়ে ছিল শৃঙ্খলার ছোঁয়া।
পাওয়ার প্লে ব্যাটিংয়ের সময় গতি কিছুটা কমে গিয়েছিল বলে মনে হয়েছে। মাহমুদউল্লাহকে সেঞ্চুরি পেতে সাহায্য করতে গিয়ে মুশফিক বেশ সতর্ক ছিল। কিন্তু তারপরও তারা ওভারপ্রতি আট রান করেছে। বোলিং প্রসঙ্গে আমি বলব, বোলাররা একটাও ওয়াইড বল করেনি। এ থেকেই বোঝা যায় ইংল্যান্ডকে রান তুলতে কতটা পরিশ্রম করাতে পেরেছে তারা।
জেমস অ্যান্ডারসন ও স্টুয়ার্ট ব্রড ভালো গতি ও লাইন-লেংথে বল করেছে। তাদের বল বেশ কয়েকবার ব্যাটের কানায় লাগতে-লাগতে বেঁচে গেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। দুই পাশের ছোট বাউন্ডারি বিবেচনা করলে এটা ছিল ৩০০-এর বেশি রানের উইকেট। শুরুতে ইমরুল কায়েস ও তামিম ইকবালের উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশ দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সৌম্য সরকারকে শুরু থেকেই খুব ইতিবাচক মনে হয়েছে। আশা করি সে আগামীতে বড় ইনিংস খেলতে পারবে।
মাহমুদউল্লাহ ধারাবাহিকভাবে খুব ভালো খেলছে। নিশ্ছিদ্র কৌশল ও মানসিক দৃঢ়তার কারণে চার নম্বরে সে সাফল্য পাচ্ছে। কখনো-কখনো অফ সাইডে ড্রাইভ খেলার সময় পা নিতে ভুলে যায় সে। তবে তার শট নির্বাচন খুবই ভালো। প্রথম সেঞ্চুরিটা তার প্রাপ্য। ইংল্যান্ড দলে একজন স্পিনারের ঘাটতি ছিল। মইন আলী কারো কাছ থেকে তেমন সহায়তা পায়নি।
বর্তমান সময়ের ক্রিকেটে অনেক পরিকল্পনা ও পাল্টা-পরিকল্পনার মাঝে কোনো অনিয়মিত বোলারকে এক বা দুই ওভারের জন্য বোলিংয়ে নিয়ে আসা ভালো কৌশল। এটা ব্যাটসম্যানকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।
মাশরাফি বোলিং পরিবর্তন খুব ভালোভাবে করেছে। আর তা কাজেও দিয়েছে। মাশরাফির সাকিব আল হাসানকে বুদ্ধিদীপ্ত ব্যবহার ইংল্যান্ডকে সবসময় চাপের মধ্যে রেখেছিল। রান-আউট হলে একটি দলের উদ্দীপনা অনেক বেড়ে যায়। মইন আলীর অহেতুক রান-আউট বাংলাদেশের জয়ের আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।
ইয়ান বেল ও অ্যালেক্স হেলস ব্যাট করার সময় মনে হচ্ছিল ম্যাচটা বাংলাদেশের হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ নিয়মিত বিরতিতে উইকেট ফেলতে পেরেছে। রুবেলের বলে বেলের আউট ছিল ম্যাচের ‘টার্নিং পয়েন্ট’। সেই ওভারেই ছন্দহীন ওয়েন মরগানের ক্যাচ বাউন্ডারি লাইনে দারুণ দক্ষতায় ধরেছে সাকিব। তখনই বাংলাদেশের জয়ের পথে হাঁটা শুরু।
বাংলাদেশের ফিল্ডিংও ভালো হয়েছে। ইংল্যান্ডকে সবসময় চাপের মধ্যে রাখতে পেরেছে তারা। ভাবতেও অবাক লাগছে যে বিশ্বকাপের দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতে যাচ্ছে ইংল্যান্ডকে ছাড়াই। খেলোয়াড়রা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে না পারলে এমনই হয় অবশ্য।
ব্যাটিংয়ে তামিম বা সাকিবের অবদান ছাড়াই বাংলাদেশ ম্যাচটা জিতেছে। এটা বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ নিশ্চয়ই দেখাতে চাইবে যে তারা আরো অনেক ভালো খেলতে পারে। পরের ম্যাচ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। আর তারপর কোয়ার্টার ফাইনাল।
আশা করি বাংলাদেশ এই ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
আমিনুল ইসলাম বুলবুল : ১৯৯৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অধিনায়ক। ১৩টি টেস্ট ৩৯টি ওয়ানডে খেলেছেন। বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব তাঁর।
লেখাটি ১০ মার্চ মঙ্গলবার আইসিসির অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত। ভাষান্তর পার্থ প্রতীম দাস।