বাংলাদেশের বিদায়, শেষ চারে ভারত
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ-অভিযান শেষ। ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে ১৯৩ রানে অলআউট হয়ে মাশরাফির দল হেরে গেছে ১০৯ রানে। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ৩০৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বহীনতার পাশাপাশি ‘বিতর্কিত’ আম্পায়ারিংও কম ভোগায়নি বাংলাদেশকে। আগামী বৃহস্পতিবার সেমিফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া অথবা পাকিস্তান।
বাংলাদেশের শুরুটা কিন্তু খারাপ হয়নি। তবে উদ্বোধনী জুটিতে ৩৩ রান ওঠার পর জোড়া ধাক্কা প্রথমে অস্বস্তিতে ফেলে দেয় দলকে। ২৫ বলে চারটি চারে ২৫ রান করা তামিম ইকবালকে কট বিহাইন্ড করেন উমেশ যাদব। পরের বলে সৌম্য সরকারের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে যান অন্য ওপেনার ইমরুল কায়েস (৫)।
দলীয় ৩৩ রানে দুই ওপেনারকে হারানোর পর সৌম্য সরকার ও মাহমুদউল্লাহ দলকে ভালোভাবেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু মোহাম্মদ সামিকে পুল করতে গিয়ে লং-লেগে শিখর ধাওয়ানের হাতে ধরা পড়েন আগের দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করা মাহমুদউল্লাহ (২১)। দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় ক্যাচ নেওয়া ধাওয়ানের পা সীমানার দড়ি ছুঁয়েছিল কিনা তা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক থেকেই যাচ্ছে। ২১তম ওভারে আবার সামির আঘাত। শুরু থেকে আস্থার সঙ্গে খেলা সৌম্য ২৯ রান করে কট বিহাইন্ড হয়ে যান।
বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি সাকিব আল হাসান। রবীন্দ্র জাদেজাকে কাট করতে গিয়ে শর্ট থার্ড ম্যানে সামির হাতে ধরা পড়া সাকিবের অবদান মাত্র ১০ রান।
এরপর ফিরে যান মুশফিকুর রহিম। ব্যাটিং পাওয়ার প্লের প্রথম বলেই উমেশ যাদবকে তুলে মারতে গিয়ে আকাশে ক্যাচ তুলে দেওয়া মুশফিক করেছেন ২৭ রান। ১৩৯ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের জয়ের আশা তখন প্রায় শেষ।
এরপর সাব্বির রহমান (৩০) ও নাসির হোসেন (৩৫) দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে দুজনের ৫০ রানের জুটি ২০০ পর্যন্তও নিয়ে যেতে পারেনি চার রানের ব্যবধানে শেষ চার উইকেট হারানো বাংলাদেশকে। ৩১ রানে চার উইকেট নিয়ে ভারতের সেরা বোলার যাদব।
এর আগে রোহিত শর্মা আর সুরেশ রায়নার আক্রমণাত্মক ব্যাটিং ছয় উইকেটে ৩০২ রান এনে দেয় ভারতকে। রোহিত ১৩৭ ও রায়না ৬৫ রান করেন। ৬৯ রানে তিন উইকেট নেন তরুণ পেসার তাসকিন আহমেদ।
টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া ভারতের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। উদ্বোধনী জুটিতে দলকে ৭৫ রান উপহার দেন রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান। হতাশায় আক্রান্ত বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেওয়ার কৃতিত্ব সাকিব আল হাসানের। সপ্তদশ ওভারে বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন ৩০ রান করা ধাওয়ানকে।
পরের ওভারেই রুবেল হোসেনের আঘাত। ইংল্যান্ড-বধের অন্যতম নায়কের অফস্টাম্পের একটু বাইরে পিচ পড়া বল ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন বিরাট কোহলি। নিচু ক্যাচ দারুণ দক্ষতায় গ্লাভসবন্দি করে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন মুশফিকুর রহিম। ভারতের সেরা ব্যাটসম্যানের অবদান মাত্র তিন রান।
২৮তম ওভারের শেষ বলে মাশরাফির দলকে তৃতীয় উইকেট এনে দেন তাসকিন আহমেদ। এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে সাকিবের হাতে ধরা পড়েন অজিঙ্কা রাহানে (১৯)।
১১৫ রানে তৃতীয় উইকেট হারানোর পর রোহিত-রায়নার ১২২ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় ভারত। বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া রোহিত অবশ্য ভাগ্যবান। ব্যক্তিগত ৯০ রানে ডিপ মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ দিয়েও স্কয়ার লেগ আম্পায়ার আলিম দারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে বেঁচে গেছেন। রুবেল হোসেনের ফুল টস বল রোহিতের কোমরের ওপরে ওঠার অভিযোগ টিভি রিপ্লেতে ভুল বলেই মনে হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত রোহিত ফিরেছেন ১৩৭ রান করে। ১২৬ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংসটা সাজানো ১৪টি চার ও তিনটি ছক্কায়। ৫৭ বলে সাতটি চার ও একটি ছক্কায় রায়নার অবদান ৬৫ রান। শেষ দিকে রবীন্দ্র জাদেজার ১০ বলে ২৩ রানের ‘ক্যামিও’ ইনিংস ৩০০-র ওপরে নিয়ে গেছে ভারতকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ভারত : ৫০ ওভারে ৩০২/৬ (রোহিত ১৩৭, ধাওয়ান ৩০, কোহলি ৩, রাহানে ১৯, রায়না ৬৫, ধোনি ৬, জাদেজা ২৩*, অশ্বিন ৩*; তাসকিন ৩/৬৯, রুবেল ১/৫৬, সাকিব ১/৫৮, মাশরাফি ১/৬৯)
বাংলাদেশ : ৪৫ ওভারে ১৯৩ (তামিম ২৫, ইমরুল ৫, সৌম্য ২৯, মাহমুদউল্লাহ ২১, সাকিব ১০, মুশফিক ২৭, সাব্বির ৩০, নাসির ৩৫, মাশরাফি ১, রুবেল ০, তাসকিন ০*; যাদব ৪/৩১, সামি ২/৩৭, জাদেজা ২/৪২, মোহিত ১/৩৬)
ফল : ভারত ১০৯ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা : রোহিত শর্মা।