পাকিস্তানকে হারিয়ে শেষ চারে অস্ট্রেলিয়া
‘ক্যাচ মিস মানেই ম্যাচ মিস’—ক্রিকেটে বহু চর্চিত কথাটা আরো একবার যেন প্রমাণিত হলো অ্যাডিলেড ওভালে। ব্যক্তিগত চার রানে সহজ ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যাওয়া শেন ওয়াটসন যখন অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ থেকে ফিরছেন, পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হক তখন কথাটা ভাবছিলেন কিনা কে জানে! তবে ওয়াটসনের ওই ‘জীবন’ই যে খেলার ফলাফল নির্ধারণে বড় ভূমিকা রেখেছে, তা নিয়ে দুই দলের খেলোয়াড়দের মনে সন্দেহ না থাকারই কথা। তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ছয় উইকেটের সহজ জয় পাওয়া অস্ট্রেলিয়ার সামনে ভারত। আগামী বৃহস্পতিবার সিডনিতে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে দুই দল।
বোলারদের নৈপুণ্যে পাকিস্তানকে ২১৩ রানে বেঁধে ফেললেও ব্যাট হাতে অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা ভালো হয়নি। তৃতীয় ওভারে অ্যারন ফিঞ্চকে (২) সোহেল খান এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলার পর নবম ওভারে অন্য ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারকে (২৪) রাহাত আলীর ক্যাচে পরিণত করেন ওয়াহাব রিয়াজ। এই বাঁহাতি পেসারের পরের ওভারেই অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক (৮) ক্যাচ দেন শোয়েব মাকসুদকে। স্কোর তখন ৫৯/৩।
রাহাত আলীর ভুলে সেটা ৮৪/৪ হতে পারেনি। ওয়াহাব সেজন্য ‘অভিশাপ’ দিতেই পারেন রাহাতকে। ওয়াহাবের বলে পুল করে ছক্কা মারতে চেযেছিলেন ওয়াটসন। কিন্তু লং-লেগে সহজ ক্যাচ উঠে যায়। রাহাত অবশ্য বল হাতে জমাতে পারেননি।
ব্যক্তিগত চার রানে ‘জীবন’ পাওয়া ওয়াটসন আর পেছন ফিরে তাকাননি। চতুর্থ উইকেটে স্টিভেন স্মিথের সঙ্গে ৮৯ রানের জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে দিয়েছেন জয়ের পথে। ৬৫ রান করা স্মিথকে এলবিডব্লিউ করে এহসান আদিল জুটিটা ভেঙে দিলেও চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের জয় নিয়ে দুর্ভাবনায় পড়তে হয়নি। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে ৬৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে অস্ট্রেলিয়াকে জিতিয়েই মাঠ থেকে ফিরেছেন ওয়াটসন। ওয়াটসন ৬৪ আর ম্যাক্সওয়েল অপরাজিত ছিলেন ৪৪ রানে।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ২৪ রানে দুই ওপেনার সরফরাজ আহমেদ (১০) ও আহমেদ শেহজাদকে (৫) হারানোয় পাকিস্তানের শুরুটা একদমই ভালো হয়নি। তৃতীয় উইকেটে অধিনায়ক মিসবাহ (৩৪) ও হারিস সোহেলের (৪১) ৭৩ রানের জুটি কিছুটা স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছিল। কিন্তু তিন ওভারের ব্যবধানে দুজনের বিদায় আবার বিপদে ফেলে দেয় পাকিস্তানকে। ২০ রান করা উমর আকমলের আউট বিপদ বাড়িয়ে দেয় আরো।
১২৪ রানে পঞ্চম উইকেট হারানোর পর শহীদ আফ্রিদির আক্রমণাত্মক ব্যাটিং আশার আলো দেখিয়েছিল পাকিস্তানকে। তবে ওয়ানডের সাবেক দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি, ১৫ বলে তিনটি চার ও একটি ছক্কায় ২৩ রান করে আউট হয়ে গেছেন। এরপর কিছুক্ষণ লড়াই চালিয়ে বিদায় নিয়েছেন শোয়েব মাকসুদ (২৯) ও ওয়াহাব রিয়াজ (১৬)।
১৯৫ রানে নবম উইকেট হারানোর পর এহসান আদিলের ১৫ রান দুইশর ওপরে নিয়ে গেছে শেষ ওভারে অলআউট হওয়া পাকিস্তানকে।
৩৫ রানে চার উইকেট নিয়ে ১৯৯২ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নদের মূল ‘হন্তারক’ জশ হেজেলউড। দুটি করে উইকেট মিচেল স্টার্ক ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
পাকিস্তান : ৪৯.৫ ওভারে ২১৩ (শেহজাদ ৫, সরফরাজ ১০, হারিস ৪১, মিসবাহ ৩৪, উমর ২০, মাকসুদ ২৯, আফ্রিদি ২৩, ওয়াহাব ১৬, আদিল ১৫, সোহেল ৪, রাহাত ৬*; হেজেলউড ৪/৩৫, স্টার্ক ২/৪০, ম্যাক্সওয়েল ২/৪৩, ফকনার ১/৩১, জনসন ১/৪২)
অস্ট্রেলিয়া : ৩৩.৫ ওভারে ২১৬/৪ (ওয়ার্নার ২৪, ফিঞ্চ ২, স্মিথ ৬৫, ক্লার্ক ৮, ওয়াটসন ৬৪*, ম্যাক্সওয়েল ৪৪*; ওয়াহাব ২/৫৪, আদিল ১/৩১, সোহেল ১/৫৭)
ফল : অস্ট্রেলিয়া ছয় উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা : জশ হেজেলউড।