অসহায় মেয়েটি আজ ইতিহাসের পাতায়

Looks like you've blocked notifications!

বাবার কোনো খোঁজ নেই, মা মদ আর ড্রাগে আসক্ত। একটা তিন বছরের শিশুর জন্য এর চেয়ে অসহায় অবস্থা আর কী হতে পারে? বাবা-মায়ের দায়িত্বহীনতায় সিমোন বাইলসের জীবন ভেসে যেতে পারত। কিন্তু তাঁর মহানুভব নানা-নানি তা হতে দেননি। সিমোন আর তাঁর তিন ভাই-বোনকে স্নেহ-ভালোবাসায় বুকে টেনে নিয়ে বড় করে তুলেছেন নানা-নানি।

সেদিনের অসহায় সিমোন আজ ইতিহাসের পাতায়। রিও অলিম্পিকের জিমন্যাস্টিকসে চারটি স্বর্ণসহ পাঁচটি পদক জিতেছেন তিনি। পদক তালিকার শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্রের মজবুত অবস্থানের পেছনে তাঁর অনেক বড় অবদান।

এতদিন অলিম্পিকের একটি আসরে জিমন্যাস্টিকসে চার বা তার চেয়ে বেশি স্বর্ণজয়ের কৃতিত্ব ছিল চারজনের। হাঙ্গেরির আগ্নেস কেলেতি (১৯৫৬), সোভিয়েত ইউনিয়নের লারিসা লাতিনিনা (১৯৫৬), চেকোশ্লোভাকিয়ার ভেরা চাসলাভস্কা (১৯৬৮) আর রুমানিয়ার একাতেরিনা সাবোর (১৯৮৪) সঙ্গে এখন উচ্চারিত হবে সিমোন বাইলসের নামও।

জিমন্যাস্টিকসের দলগত, অল-অ্যারাউন্ড আর ভল্ট ইভেন্টের স্বর্ণ আগেই জিতেছিলেন সিমোন। গতকাল মঙ্গলকাল এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ফ্লোর এক্সারসাইজের শিরোপা। ব্যালান্স বিমে অবশ্য ব্রোঞ্জ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। অলিম্পিকে প্রথমবার অংশ নিয়েই এমন দুর্দান্ত সাফল্য পেয়ে ১৯ বছর বয়সী জিমন্যাস্ট অভিভূত, ‘জীবনের প্রথম অলিম্পিকে পাঁচটি পদক পেয়েছি, যার মধ্যে চারটিই স্বর্ণ। এর চেয়ে বড় কিছু আর কী হতে পারে!’ নিজের অসাধারণ কীর্তি যেন বিশ্বাসই হতে চাইছে না টেক্সাস থেকে উঠে আসা সিমোনের, ‘ছেলেবেলায় অনেক বাচ্চার মতো আমিও অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। যদিও তা তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছিল না। সব কিছুই কীভাবে যেন হয়ে গেল। যা ঘটেছে তা যেন অবাস্তব ঘটনা।’

অবিশ্বাস্য সাফল্য তো আছেই। রিও অলিম্পিক থেকে দারুণ এক সুখস্মৃতিও নিয়ে যাচ্ছেন সিমোন। দুই কিংবদন্তি মাইকেল ফেল্পস আর উসাইন বোল্টের সঙ্গে ছবি তোলার সৌভাগ্য হয়েছে তাঁর। এখন অবশ্য তিনি নিজেও ইতিহাসগড়া অলিম্পিয়ান। তবে দুই মহাতারকার সঙ্গে তুলনায় যেতে কিছুতেই রাজি নন, ‘আমি পরবর্তী উসাইন বোল্ট বা মাইকেল ফেল্পস নই। আমি প্রথম সিমোন বাইলস।’

বোঝাই যাচ্ছে, এত সাফল্য পেয়েও সিমোনের মাথা ঘুরে যায়নি। তাঁর পা মাটিতেই আছে!