সাকিব তুমিই মহারাজ!

Looks like you've blocked notifications!

আচ্ছা, সাকিব কে? প্রশ্নটা কেমন অদ্ভুত ঠেকছে? এবার উত্তর মেলান। হিমশিম খাবেন। সাকিবকে এক উপমায় আটকে রাখা অসম্ভব বলেই এমন প্রশ্ন!

সাকিব আল হাসান। বাংলার ক্রিকেটের ব্যাড বয়। ক্রীড়াঙ্গনে ব্যাড বয়দের নিয়ে ভয় থাকে৷ সাফল্য আর পরিচিতির ভিড়ে হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা চেপে ধরে তাদের ঘিরে। আর সবকিছুর মতোন এখানেও সাকিব ব্যতিক্রম। বাংলার ক্রিকেটের পোস্টার বয় সাকিব। অবিসংবাদিত মহারাজ। তবু মাঝেমধ্যে তাকে মনে হয় নিঃসঙ্গ গ্রহচারী।

বাংলা ব্যান্ড সংগীতের প্রয়াত কিংবদন্তি আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে গান বেঁধেছিল ভাইকিংস ব্যান্ড...

‘যদি হুট করে একা হওয়া যেত আকাশের মতো

আমি চুপ করে চোখে জল নিতাম ইচ্ছে যতো!’

আকাশের দিকে তাকিয়ে সাকিবও কি মাঝে মাঝে ভাবেন একা হওয়ার কথা? হয়তো ভাবেন! অভিমান ঘিরে ধরে তখন। কিন্তু তিনি থামেন না। সাকিবদের অবশ্য থামতে নেই। হৃদযন্ত্র থেমে গেলে শরীর চলবে কিসে! সাকিব বাংলার ক্রিকেটের হৃদযন্ত্র, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। জীবনের কারখানায় সাকিব নামক মেশিনের বয়স হয়ে গেছে কাঁটায় কাঁটায় ৩৬! অথচ এখনও তার অহম কী দুর্দান্ত। দিচ্ছেন বিরামহীন সর্বোচ্চ সেবা।

মাগুরার সাকিব কখন যে পুরো দেশের হয়ে গেলেন, টেরই পাওয়া যায়নি। ক্রিস গেইলকে বলা হয় ইউনিভার্স বস। বিশ্ব ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা হয়ে আনন্দ দিয়েছেন সবাইকে। সাকিব এখনও দিয়ে চলছেন; বাংলার ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা হয়ে। বিশ্ব ক্রিকেটের কোথাও যখন শোনা যায় বাংলাদেশ থেকে একজন খেলছেন, আমরা বুঝে যাই তিনি আর কেউ নন, ৭৫ নম্বর জার্সির ওই রগচটা ছেলেটা।

একটা বিশাল পরিবর্তন এনেছেন সাকিব। আজ থেকে বছর দশেক আগেও পাড়ার অলিগলিতে ব্যাট-বল হাতে কেউ চাইতো শচীন টেন্ডুলকার হতে, কেউ চাইতো মুরালিধরনের মতো রাঙা চোখের শান্ত দানব হতে, কারও স্বপ্নপুরুষ ছিলেন অলরাউন্ডারদের অন্যতম আদর্শ জ্যাক ক্যালিস। এক দশক পর এখন সবার স্বপ্ন এক জায়গায় এসে মিলেছে। সবাই শুধুই সাকিব হতে চায়। ব্যাট হাতে কিংবা বল হাতে, শুধু একজনই। তার চেয়েও বড় কথা, আমরা পেয়ে গেছি নিজেদের একজনকে। স্বপ্ন দেখতে দূর দেশে পাড়ি জমাতে হয় না। মিরাকল অব মাগুরা সাকিবের সবচেয়ে বড় মিরাকল বোধহয় এটিই!

তবু, তাকে ঘিরে বিতর্ক দানা বাঁধে। ক্রিকেটার থেকে হয়ে যান ব্যবসায়ী। নাম আসে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে। দোকান উদ্বোধন করতে যাবেন, সেখানেও কত চর্চা। যে ভক্তরা তাকে দেবতার আসনে বসায়, তাদের পেটাতে দুইবার ভাবেন না সাকিব। সেই সাকিব করোনায় খুলেছেন সাকিব আল হাসান ফাউন্ডেশন। সাকিবকে বোঝা দায়, তবু ভালোবাসা যায়। ভালোবাসতে হয়। উপেক্ষার, অবজ্ঞার সমুচিত জবাব সাকিব মাঠেই দেন প্রতিনিয়ত।

বিতর্কের মুখেই নিজের সেরাটা বের করে আনেন তিনি। ভক্তরাও ভুলে যান সব কিছু। অনেকটা সার্ফএক্সেলের বিখ্যাত সেই সংলাপের মতো, দাগ থেকে যদি দারুণ কিছু হয়, দাগই ভালো। মানুষতো তাকেই শাসায়, অনধিকার চর্চায় আগলে রাখতে চায়, যাকে খুব বেশিই ভালোবাসে।

দেশের ক্রিকেটের জন্য এত কিছু করার পরেও কোথাও যেন সাকিব অবহেলিত। পরিবারের বড় ছেলের মতো। সমালোচকদের কাছে যতটুকু, নিজের কাছে আরও বেশি। পারতেন, প্রতিভার সৌরভ আরও অনেকটা ছড়াতে। কে জানে, গেল বিশ্বকাপের মতো আসছে আসরের জন্য জমিয়ে রেখেছেন হয়ত! প্রতিভার বিস্ফোরণ হলে সাকিব কতটা প্রলয়ংকরী, সেটি কারও অজানা নয়।

সাকিব নামক পঙ্খীরাজে চড়ে বাঘের ডেরায় সর্বোচ্চ সাফল্য আনার দুঃসাহস ভক্তরা করতে পারে সাকিব আছে বলেই। না আসলেও ক্ষতি নেই। দুঃখী রাজপুত্র হয়ে বিদায়ের রাগ যখন বাজাবেন, পেছনে ভাসবে অনবদ্য এক ক্যারিয়ার। হয়তো ভক্ত সমালোচক সবাই সমস্বরেই বলবেন, ভালোবেসে তবু কেন কাছে এলে না? সাকিব তখন নিশ্চয়ই প্রত্তুত্যর দেবেন, সব ভালোবাসার জবাব দিয়ে দিলে এত আনন্দ জমা হতো কোথায়?

২৪ মার্চ ১৯৮৭, মাগুরায় জন্ম নেওয়া সাকিব যেদিন পৃথিবীতে এলেন, যেদিন খন্দকার সাকিব আল হাসান ফয়সাল থেকে সাকিব আল হাসান হলেন, যেদিন আরও ছোট হয়ে সবার ময়না হলেন, সেদিন থেকেই তিনি গেয়ে চলেছেন ব্যাট আর বলের মায়াবী ঝংকার তুলে। বাইশ গজের সবুজ ক্যানভাসে আনন্দের কালিতে এঁকে দিয়েছেন এক মহারাজের ছবি, যা তিনি নিজেই! আজ সেই মহারাজের জন্মদিন, যাকে ঘিরে তৈরি হয় আনন্দ, উৎসব আর হাসিমুখ।