পৃথিবী শীতল রাখছে সাগরের ছোট্ট জীব

দক্ষিণ মহাসাগরের ওপর জমা মেঘকে উজ্জ্বল করে সাগরেরই প্লাংটন (ক্ষুদ্র জীব)। এর ফলে সূর্যের আলো অনেকটাই প্রতিফলিত হয়। যে কারণে গ্রীষ্মে সেখানকার তাপমাত্রা কিছুটা কমে। এভাবে পৃথিবী শীতল রাখে সমুদ্রের প্লাংটন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে গবেষণায় এই তথ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষিণ সাগরের ওপর মেঘের সঙ্গে জমা প্লাংটনগুলো সূর্যের আলোর ওপর নির্ভরশীল। গ্রীষ্মকালে জমা মেঘে জমা মেঘে সমুদ্রের প্লাংটনে সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে পানির কণার পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি হয়। বেশি পানির কণাসমৃদ্ধ মেঘ উজ্জ্বল হয়। আকাশজোড়া সাদা এই মেঘ শুধু দেখতেই সুন্দর নয়, প্রকৃতির ওপর বয়ে আনে শীতলতা। উজ্জ্বলতার কারণে এতে আলোর প্রতিফলনও হয় বেশি। এ কারণে সূর্য থেকে আসা বিকিরণ ও সূর্যরশ্মির পৃথিবীর জলবায়ুতে প্রবেশের আগেই মেঘে প্রতিফলিত হয়। সূর্যরশ্মি থেকে উত্তপ্ত না হওয়ায় এই অঞ্চলের তাপমাত্রা অন্য এলাকার তুলনায় শীতল থাকে।
দক্ষিণ সাগরের প্লাংটনের সঙ্গে ওই অঞ্চলের তাপমাত্রা হ্রাসের সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের ইউনিভার্সিটি অব সিয়াটলের একদল গবেষক। এর নেতৃত্বে ছিলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড্যানিয়েল ম্যাকয়। গত শুক্রবার এ-সংক্রান্ত গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশ করেছে বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’।
পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা কৃত্রিম উপগ্রহ (স্যাটেলাইট) ব্যবহার করে দক্ষিণ সাগরের জলবায়ুর ওপর গবেষণা চালানো হয়। গবেষকরা স্যাটেলাইটে পাওয়া তথ্য থেকে মেঘের পানির কণার পরিমাণ জানেন। অনেক পানির কণার সঙ্গে সমুদ্রের প্লাংটনও পাওয়া যায়।
গবেষণায় দেখা যায়, প্লাংটনের কারণে মেঘে পানির কণার পরিমাণ ৬০ শতাংশের বেশি হয়। মেঘ ও এর উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির কারণে সাধারণ সময়ে অন্য অঞ্চলের চেয়ে দক্ষিণ সাগরের মেঘে ৪ ওয়াট আলো বেশি প্রতিফলিত হয়। আর গ্রীষ্মে এর প্রতিফলনের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১০ ওয়াট।
গবেষক ড্যানিয়েল ম্যাকয় বলেন, বায়ুদূষণের কারণে লোকালয়ের কাছে পরিবেশে বিভিন্ন গ্যাস মিশ্রিত হয়। কিন্তু দক্ষিণ সাগরে লোকালয় না থাকায় মানুষের তৈরি এমন দূষণ থেকে ওই অঞ্চল মুক্ত। তাই প্রকৃতিতে কীভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয় এই নিয়ে গবেষণায় ওই অঞ্চল বেছে নেওয়া হয়। গবেষণায় দেখা যায়, গ্রীষ্মকালে প্রাকৃতিকভাবে সাগরের প্লাংটন থেকে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়। আর দক্ষিণ সাগরের পরিবেশ নিয়ে গবেষণা লোকালয়ে মানুষের দূষণের কারণে পরিবেশের কতটুকু পরিবর্তন হয়েছে তাও বোঝা যায়। আর সাগরের প্লাংটনের সঙ্গে তাপমাত্রা হ্রাসের সম্পর্কের তথ্য জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।