ছুটির দিনে
চলুন যাই শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকতে
খোলা সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি ঝাউবন। তুমি আসবে তারই প্রতীক্ষায়। দক্ষিণের খোলা বাতাস ঝাউবন স্পর্শ করে যাচ্ছে পরম আবেশে। খোলা বাতাসের ছোঁয়ায় প্রেমিকার উড়ন্ত চুলের মতো দুলছে ঝাউগাছগুলো। জন্ম থেকেই সমুদ্রের খোলা বাতাস গায়ে মেখে ঝাউগাছগুলো এখন অনেক বড় হয়ে উঠেছে। সমুদ্রের আছড়ে পড়া ঢেউ আর ঝাউগাছের মাঝখানে শূন্য বালুরাশি। এ যেন দৃষ্টিনন্দন এক সৈকত। সমুদ্রের মৃদু ঢেউ, বালুময় দীর্ঘ সৈকত আর ঝাউবনের সবুজ সমীরণের এ দৃশ্যটি যেন প্রকৃতি প্রেমের এক উদাহরণ। এই প্রেমময় দৃশ্যপটের নাম- শুভ সন্ধ্যা। দক্ষিণে তাকালে অথৈ সাগরের ঢেউ আর ঢেউয়ের সাথে দোল খাচ্ছে মাছ ধরার ট্রলার।
সমুদ্রের কোল ঘেঁষা প্রান্তিক জেলা বরগুনার তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের নলবুনিয়ায় অবস্থিত এই দৃষ্টিনন্দন সৈকত।
বরগুনার প্রধান তিনটি নদী পায়রা , বিষখালী ও বলেশ্বরের মিলিত জলমোহনায় সৈকতটি দাঁড়িয়ে আছে অনন্ত যৌবনা রূপ নিয়ে। বেলাভূমিটি প্রায় চার কিলোমিটার লম্বা এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। তালতলী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে সোনাকাটা ইকোপার্ক সংলগ্ন নলবুনিয়ার এই চরটি এখন অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকা।
সীমাহীন সাগর তীরের মুক্ত বাতাস আর চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক শোভা যেন এই সৈকতটির দৃষ্টি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট টেংরাগিড়ি এই বেলাভূমির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখানে এলে দেখা যাবে, সাগর পাড়ে সবুজের সমারোহে বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ ও পাখির কুহুতান। প্রকৃতি প্রেমের এমন লোভে পড়ে গেলে এই স্বর্গে যেতে মন চাইবে বারবার।
শুধু সমুদ্র ভ্রমণ কিংবা সৈকতের বালুময় সৈকত দর্শনার্থীদের মন ভরাবে তা নয়। সমুদ্রের পাশাপাশি আরো অনেক কিছু দেখার সুযোগ মিলবে এখানে এলেই। অসংখ্য মৎস্যজীবীর বসবাস এই চরে। আবার শীতের মৌসুমে পর্যটকরাও সেখানে যায়। দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত, গভীর অরণ্য, বিশাল শুঁটকিপল্লী রয়েছে এই চরে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে যাওয়া মানুষ শুঁটকি উৎপাদনের জন্য চরটিতে ঘর বাঁধে। বছরে সাত থেকে আট মাস থাকে শুঁটকি উৎপাদনের ব্যস্ততা। এই চরের কাছেই রয়েছে তালতলীর বিশাল রাখাইন পল্লী। বঙ্গোপসাগরের তীরে এ পল্লী কুপিবাতি জ্বালিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলে তাঁতে কাপড় বোনার কাজ। তাঁতশিল্প ছাড়াও রাখাইনদের ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ মন্দিরও অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ হতে পারে।
এখানে নদী সমুদ্রের তাজা মাছ পাওয়া যায় ফকিরহাট বাজারের ছোট ছোট খাবারের হোটেলগুলোতে, যা পর্যটকদের পেট ভরাবে। এখানে খুব অল্প টাকায় খাওয়া যাবে মাছ ভাত বা গ্রামীণ স্থানীয় সব খাবার। এই সৈকতটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে নবীন বিবেচনায় খাবার ও মাছের দাম তুলনামূলক সস্তা।
যাতায়াত
ঢাকার গাবতলী এবং সায়েদাবাদ থেকে সরাসরি বরগুনার উদ্দেশ্যে সকালে এবং বিকেলে বাস ছেড়ে আসে। ভাড়া ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। তা ছাড়া ঢাকার সদরঘাট থেকে প্রতিদিন বিকেল ৫টায় এবং ৬টায় দুটি লঞ্চ ছেড়ে আসে। ভাড়া ডেক ৩০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ১২০০ টাকা এবং ডাবল কেবিন ২২০০ টাকা।
সারাদিন ঘোরাফেরা শেষে বরগুনা জেলা সদরে থাকতে হবে আপনাকে । এখানে ৩০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা দিয়ে রাতযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকা থেকে আসা-যাওয়াসহ জনপ্রতি মোট দুই হাজার টাকায় শুভ সন্ধ্যা সৈকত ঘুরে আসা সম্ভব।