মাদার হাউস
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/05/20/1.jpg)
করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষ। বিশ্ব আজ মৃত্যুভয়ে ভীত। মানুষ একে অন্যের থেকে বিচ্ছিন্ন। সব কিছুকে থমকে দিয়েছে ক্ষুদ্র একটা জীবাণু নভেল করোনাভাইরাস। কোভিড-১৯ নামক এ ভাইরাস যে এভাবে বির্পযয় নিয়ে আসবে, তা হয়তো ভাবতেও পারেনি দুনিয়ার মানুষ। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রকৃতিই মানুষকে বুঝিয়ে দিচ্ছে, পৃথিবীতে অনিয়মের ফল ভোগ করতে হয় মানুষকে। আর এই অনিয়মের ফল ভোগ করছি আমরা।
প্রতিটি মানুষ গৃহবন্দি। বিশ্রামের দরকার হয় ক্লান্তি কাটানোর জন্য। কিন্তু কখনো কখনো সেই বিশ্রামই ক্লান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়! যেমনটা আমরা এখন বুঝতে পারছি। সব সময় অবসর পেতে মন কাঁদলেও এখন মন বলছে, এমন অবসর আমি চাইনি! অনেকে ভাবছেন, এই করোনাকাল শেষ হলেই ছুট দেবেন দূরে কোথাও, খুঁজে নেবেন শান্তির পরশ।
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/05/20/2.jpg)
আপনি চাইলে করোনাকাল অতিবাহিত হওয়ার পর ঘুরে আসতে পারেন শান্তির দূত মাদার তেরেসা নির্মিত মিশনারিজ অব চ্যারিটি থেকে, যেখানে শায়িত মাদার তেরেসা। মাত্র পাঁচ টাকা ও দশ জনকে নিয়ে শুরু এই মিশনারিজ অব চ্যারিটি। ধীরে ধীরে শহর থেকে রাজ্যে, দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে। তাঁর তৈরি মিশনারিজ অব চ্যারিটি ছড়িয়ে পড়েছে ১৩৯টি দেশে। সঙ্গে রয়েছে সেই দুঃখী মানুষ, যাদের জন্য এই বিপুল কর্মকাণ্ড। সেই বিপুলের টানে কলকাতা শহরে ছুটে এসেছেন মহম্মদ আলি, দোমিনিক লাপিয়ের, ইয়াসির আরাফাত, যুবরাজ চার্লস, ডায়নাসহ খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব।
মাদার তেরেসা ছিলেন আলবেনীয়-বংশোদ্ভূত ভারতীয় ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী ও ধর্মপ্রচারক। মাদার তেরেসার জন্মস্থান অটোমান সাম্রাজ্যের আলবেনিয়া রাজ্যের স্কপিয়ে। আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত তিনি সেখানেই কাটান। ১৯২৮ সালে তিনি আয়ারল্যান্ড হয়ে তৎকালীন ব্রিটিশ উপনিবেশ ভারতে আসেন। জীবনের বাকি অংশ তিনি ভারতেই থেকে যান। ১৯৫০ সালে কলকাতায় তিনি দ্য মিশনারিজ অব চ্যারিটি (দাতব্য ধর্মপ্রচারক সংঘ) নামে একটি খ্রিস্টধর্ম প্রচারণা সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১২ সালে এই সংঘের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ৪৫০০ সন্ন্যাসিনী। প্রথমে ভারতে ও পরে সমগ্র বিশ্বে তার এই ধর্মপ্রচারণা কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে।
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/05/20/3.jpg)
২০১৬ সালে পোপ ফ্রান্সিস তাঁকে ‘সন্ত’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন এবং ক্যাথলিক গির্জায় তিনি ‘কলকাতার সন্ত টেরিজা’ আখ্যায়িত হন। ১৯৬৯ সালে বিবিসিতে ‘সামথিং বিউটিফুল ফর গড’ শিরোনামে ম্যালকম মাগারিজের প্রামাণ্য তথ্যচিত্র প্রচারিত হলে তাঁর দাতব্য ধর্ম প্রচারণা সংঘের কার্যক্রম পশ্চিমা গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয় এবং তেরেসার খ্যাতি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি ১৯৭৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার ও ১৯৮০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ভারতরত্ন লাভ করেন।
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/05/20/4.jpg)
তেরেসার মৃত্যুর সময় বিশ্বের ১২৩টি রাষ্ট্রে মৃত্যুপথযাত্রী এইডস, কুষ্ঠ ও যক্ষ্মা রোগীদের জন্য চিকিৎসাকেন্দ্র, ভোজনশালা, শিশু ও পরিবার পরামর্শ কেন্দ্র, অনাথ আশ্রম ও বিদ্যালয়সহ দ্য মিশনারিজ অব চ্যারিটির ৬১০টি কেন্দ্র বিদ্যমান ছিল। কলকাতা শহরের বোস রোডে অবস্থিত মাদার হাউস। চার তলা ভবন, দেয়ালে মার্বেল পাথরে খোদাই করা লেখা MISSIONARIES OF CHARITY। বাঁ দিকে গলির ভেতর ঢুকতেই চোখে পড়বে মাদার তেরেসার মূর্তি। বড় সাইনবোর্ডে লেখা The Mother House। পুরোনো দিনের ভবন আর সেই আগেকার দিনের জানালা। নগ্ন পায়ে প্রবেশের পর কিছু দূর এগিয়ে যেতেই পাবেন মাদার তেরেসার সমাধি। শান্তির দূত শায়িত আছেন। সবাই বসে নীরবে প্রার্থনা করছেন, কেউ বা অঝোরে চোখের জল ফেলছেন। ধূপকাঠির মোহিত গন্ধ আর এই পরিবেশ যে কারোরই খুব ভালো লাগবে। একপাশে লেখা আছে, These flower were placed on Mother tomb. You are most welcome to take them as a blessing. একটি কাপড়ের মধ্যে দেখতে পাবেন বিভিন্ন দেশের মানুষ অনুভূতিগুলো নানা ভাষায় লিপিবদ্ধ করেছেন। পাশেই আছে বেশ বড় লাইব্রেরি কক্ষ। এখানে ছবি তোলা নিষেধ। এই কক্ষে মাদার তেরেসার ব্যবহৃত সামগ্রী সুন্দর করে সাজানো। সামনে দেখতে পাবেন দোতলার ছোট্ট একটি কক্ষ। তার মাঝে একটি খাঁটিয়ে, পাশে একটি টেবিল ও চেয়ার। বাইরে থেকে ভেতরে প্রবেশ নিষেধ।
বিশ্বে মানবসেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করা মানবাধিকারকর্মী মাদার তেরেসাকে সন্ত ঘোষণা করেছেন পোপ ফ্রান্সিস। মাদার হাউসের দর্শন পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে সকাল ৮টা থেকে ১২টার মধ্যে। আর বিকেল ৩টা থেকে ৬টার মধ্যে। বৃহস্পতিবার মাদার হাউস বন্ধ থাকে।