সাপ-জোঁকের আতঙ্ক কাটিয়ে ‘বুড়ি’ ঝর্ণার কোলে
পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সৌন্দর্য। আরও বেশি সৌন্দর্য, পাহাড়ের পেটে ঝরা ঝর্ণায়। যা চোখ ধাঁধানো, মন জুড়ানো। এ পথের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঘুরে বেড়িয়েছি পুরো পাঁচ দিন। হেঁটেছি বান্দরবানের থানচি থেকে রুমা উপজেলার দুর্গম সব পাহাড়ে। দেখেছি, ছয়টি ঝর্ণার মায়াবী রূপ। পাহাড়ের চূড়ায় বসবাস করা পাহাড়িদের জীবনাচরণ দেখেছি, শুনেছি তাদের টিকে থাকার গল্প।
তবে পাহাড়ি এ পথ অনেক কঠিন। যদিও তারচেয়ে বেশি নান্দনিক। জীবনের ভয়ংকর ও রোমাঞ্চকর সময়গুলো নিয়ে এ লেখা। আজ থাকছে যার চতুর্থ পর্ব। চলুন, পাহাড় অভিযানের তৃতীয় দিন রোববারের ভোর থেকে হেঁটে আসি।
সালৌপি পাড়া। সারাদিন পাহাড়ে অমানুষিক হাঁটাহাঁটি শেষে ঘুমে বিভোর আমরা। গাইড ঘুম থেকে ডেকে চলেছেন। কিন্তু, সবাই চুপচাপ। কেউ কোনো সাড়াশব্দ করছেন না। আমার ঘুম ভেঙে গেলে মুঠোফোনে নজর দিই, রাত তখন ৩টা! এত রাতে কেউ ডাকে? প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ।
গাইডের চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় আরও দুজনের। তাঁরা রাগও দেখান। আসলে সবাই প্রচণ্ড ক্লান্ত তো! তবু গাইড বলে যান, ‘আজ তারতে ও তারপি নামের দুটি ঝর্ণা দেখতে হবে। সারাদিন হাঁটতে হবে। ভোরের আগে বের হতে না পারলে সময়ে কুলাতে পারবেন না। দ্রুত ওঠেন।’
এখনি ঘুম থেকে ওঠার শক্তি নেই। রাগ হলেও সুর নরম করে বললাম, ‘দাদা, আপনি এমন কেন? কোনো দয়ামায়া নেই আপনার? এত রাতে হাঁটব কীভাবে? আপনার কষ্ট হয় না?’ হাসতে হাসতে গাইড বললেন, ‘আচ্ছা, আরেকটু ঘুমান। ৫টার মধ্যে বের হতে হবে।’
আমরা আবার ঘুমিয়ে পড়ি। রাত তখন সাড়ে ৪টা, পুনরায় গাইডের ডাক। এবার আর উপেক্ষা করা গেল না। চোখ মুছতে মুছতে উঠে, হেলতে-দুলতে দাঁত মাজলাম। শীত শীত ভাব। গোছগাছ সেরে ঠিক ৫টা ৪৫ মিনিটে আমি, গাইড, প্রিন্স, শাকিল, কামাল, সানজিদ, মেহেদী, রুবেল ও রনী ভাই রওনা দিলাম। উদ্দেশ্য, বান্দরবানের রুমা উপজেলার রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের থিংদুলতে পাড়া।
আমরা হেঁটে চলেছি আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথে। কোথাও কোথাও কিঞ্চিৎ সময়ের জন্য থেমেছি। ছবি তুলেছি, ভিডিও করেছি; জুম ঘরে গিয়েছি। যে পাহাড়ি পথ ধরে আমরা হেঁটে চলেছি, সে পথ এতই দারুণ; বারবার ছবি তুলতে ও ভিডিও করতে ইচ্ছে করছিল। সেজন্য, দেরিও হচ্ছে। তা হোক, পরে দৌড় দেব বলে ভেবে রেখেছি।
চলতে চলতে একটি পাহাড়ের চূড়ায় এসে হঠাৎ গাইড বললেন, ‘এখানে মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক পাবেন। জরুরি কথা বলার থাকলে বলে নিন।‘ মুঠোফোন বের করে দেখলাম, সত্যিই আমরা নেটওয়ার্কে এসেছি। সঙ্গে থাকা প্রিন্স ও রুবেল ভাই ফোনে ব্যবসায়িক আলাপ সারলেন। রনী ভাই কথা বললেন ভাবির সঙ্গে।
গতকাল (শনিবার) নেটওয়ার্ক না থাকায় মাকে কল দিলেও কথা শুনতে পারিনি। এ সুযোগে মাকে কল দিলাম। আহ, শান্তি! অনেকক্ষণ কথা হলো। কথা শেষে দেখি অনেক দূরে চলে গেছেন গাইড, শাকিল, কামাল, সানজিদ, মেহেদী ও রনী ভাই।
হাঁটা শুরু করেছি। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে, সহযাত্রীরা সামনে পাহাড়ের চূড়ায় আমাদের জন্য অপেক্ষার ছলে বিশ্রাম নিচ্ছেন। বিশ্রাম নেওয়ার এই-ই সুযোগ। কেউ অসুস্থ বা ভীষণ ক্লান্ত না হলে গাইড আমাদের বিশ্রাম নিতে দেন না। দৌড়ের ওপর রাখেন।
হঠাৎ পায়ে নজর গেল। বড়সড় একটি জোঁক রক্ত খাচ্ছে। মুচকি হাসলাম। গতকাল থেকে জোঁকের ওপর ভীষণ বিরক্ত। হাঁটতে হাঁটতে ভাবলাম, যতক্ষণ ইচ্ছে রক্ত খাক। দেখি কত খেতে পারে। শুধু আমার নয়, সবার শরীরেই জোঁক লাগছে কিছুক্ষণ পরপর।
আমরা তিনজন হাঁটছি। কিছুক্ষণ হেঁটে এমন একটি পাহাড়ের চূড়ায় ওঠলাম, যেখান থেকে নিচ পর্যন্ত প্রায় ৯৫ ভাগ খাড়া। সহযাত্রীরা এ চূড়ায় অপেক্ষা করছেন। সেখানে পৌঁছে সবার ছবি তুলে দিলাম। আরিফ ভাই যেখানে যান, আমাকে দিয়ে ছবি তোলাবেন। তাঁর দাবি, আমি ভালো দৃশ্য ধারণ করতে পারি।
আবার সবার হাঁটা শুরু। চিন্তা হচ্ছে রনী ভাইয়ের জন্য। আহারে, লোকটার শরীরের ওপর দিয়ে কী ধকলই না গেল গতকাল। অবশ্য, আজ তিনি মোটামুটি সুস্থ। আমরা হেঁটে চলেছি পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথে।
সকাল ৭টা ৪৫ মিনিট। একটি পাড়ার দেখা, নাম থিংদুলতে। একে একে সবাই পাড়ার ভেতর প্রবেশ করলেন। আমি তখনও পাড়ার প্রবেশপথে। ব্যাগ থেকে মুঠোফোন বের করে ছবি তুলছি আর হাঁটছি। হঠাৎ দেখি, স্থানীয় বাসিন্দা লুইং বের হয়ে দেখছেন; কারা গেলেন এ পথে। সামনে আমার সহযাত্রীরা। ভিডিও ক্যামেরা চালু করে দিয়েছি। উনার কাছাকাছি পৌঁছে ক্যামেরা ঘুরিয়ে ফেলেছি।
লুইংয়ের আরও কাছে গিয়ে ভালোমন্দ জানতে চেয়ে বললাম, দেখেন পরিবেশটা কত দারুণ! আপনারা এত পরিপাটি থাকেন কীভাবে? পাড়ার রাস্তায় একটি পাতাও পড়ে নেই।
লুইং হেসে দিলেন। বললাম, দেখেন ঘরগুলো ক্যামেরায় কত দারুণ দেখাচ্ছে। তিনি বললেন, ‘ভালু’।
ক্যামেরা লুইংয়ের দিকে ঘুরিয়ে জানতে চাইলাম, কতদিন ধরে এ পাড়ায় আছেন? উনি জানালেন, জন্ম এখানেই। বাবা-দাদারা সব এ পাড়ার বাসিন্দা ছিলেন।
আমাদের অসুস্থতার কথা ভেবে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার পরিবারের কাউকে হাসপাতালে নিতে হলে কীভাবে নিবেন? ভাঙা ভাঙা বাংলায় লুইং জানালেন, কোনো অসুস্থ রোগীকে পাড়া থেকে প্রথমে ঘাড়ে বা কাঁধে নিয়ে অন্তত পাঁচ ঘণ্টা হাঁটতে হবে। তারপর রুমা বা থানচি উপজেলা সদরের হাসপাতালে নিতে হবে। এ ছাড়া কোনো পথ নেই।
কথা শেষে সামনে এগুতে লাগলাম, সহযাত্রীদের খুঁজে পাচ্ছি না। আমাকে রেখে সবাই চলে গেছেন স্থানীয় গাইডের ঘরে। বেশ খোঁজাখুজির পর সবাইকে পেলাম। ব্যাগ রাখার পরে মনে পড়ল ওই জোঁকের কথা, যে জোঁককে রক্ত খাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলাম। অ্যাংলেট খুলে দেখি রক্তে পা ভেসে যাচ্ছে। জোঁকটিকে পেলাম না। একা একা ইচ্ছেমতো রক্ত খেয়ে পড়ে গেছে হয়তো।
রক্ত পড়েই যাচ্ছে, বন্ধ করতে পারছি না। গুল ও সিগারেটের ছাই দিয়েও বন্ধ হয়নি। জোঁকের কারণে কাছে থাকা ফাস্ট এইড স্ট্রিপও প্রায় শেষ পর্যায়ে। ভাবছি, পরে লাগলে কোথায় পাব? কিন্তু, এভাবে ৩০ মিনিট পরও যখন রক্ত বন্ধ হয়নি; তখন কাছে থাকা ফাস্ট এইড স্ট্রিপ লাগালাম। তারপর রক্ত বন্ধ হয়। গোসল দেওয়ার আগে অন্তর্বাস খুলে দেখি, সেখানেও রক্ত লেগে আছে। জোঁকের আচরণ ভয়াবহ!
এদিকে আমাদের প্রধান গাইড সকালের নাস্তা তৈরিতে ব্যস্ত। ক্ষুধা লেগেছে। কিছুক্ষণ পর স্থানীয় গাইড গাছ থেকে বেশ কিছু সতেজ পেয়ারা ও কমলা পেড়ে আনলেন। তা দিয়ে তাৎক্ষণিক ক্ষুধা মেটাই।
পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা। মনে হচ্ছে কোনো সাড়াশব্দ নেই, অবস অবস লাগছে। পা মালিশ করে দিলেন আমাদের গ্রুপের অ্যাডমিন রুবেল ভাই।
দিনটি ছিল রোববার। বমদের সাপ্তাহিক ধর্মীয় প্রার্থনার দিন। আমরা যে ঘরে উঠেছি, এ ঘরের বাসিন্দা একটি শূকর জবাই করে পুড়িয়ে ফেলেছেন। প্রার্থনার পর তারা সবাই এ খাবার খাবেন। এদিকে আমাদের খাবারও তৈরি। প্লেটে ছিল জুমের সাদা চালের ভাত, আলু ভর্তা, ডিম ভাজি ও পেপে দিয়ে ডাল। পেটপুরেই খেলাম।
এরই মধ্যে স্থানীয় গাইড প্রার্থনা শেষে চলে এসেছেন। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে রওনা দিলাম তারতে ও তারপি ঝর্ণার উদ্দেশে। তিনি এ পাড়ার ছোট কারবারি নামে পরিচিত। আগেই শুনেছি, আজকের পথ অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। খাড়া পাহাড়। গাইড জানালেন, আজ বাঁশ বাগানের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। পথ তৈরি করতে গাছও কাটতে হবে।
থিংদুলতে পাড়া অনেক উঁচু পাহাড়ে অবস্থিত। পাড়া থেকে নিচে নামতে নামতে আমরা ঘণ্টাখানেক হেঁটে ফেলেছি। হঠাৎ দেখা মিলল সবুজ রঙের একটি সাপের! জঙ্গলের ভেতর যে সরু পথ বেয়ে আমরা হেঁটে চলেছি, ঠিক ওই পথের মাঝখানেই সাপ। আঁতকে উঠলাম সবাই। মাথা ঠাণ্ডা করে সাপের গতিপথ বোঝার চেষ্টা করলাম। কিন্তু, সাপটি নড়ছে না, সরছেও না। বরং আমাদের দেখে একদম ঠিক পথের ধারে লম্বালম্বি হয়ে শুয়ে পড়েছে। জিভ মেলছে। মনে হচ্ছে, আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রথমে ভাবলাম, সাপটি লাঠি দিয়ে মেরে ফেলি। পরে চিন্তা করলাম, পরিবেশ হিতে বিপরীত হতে পারে। তা ছাড়া আমরাই সাপটির নিরাপদ আবাসে হাজির হয়েছি। কী দরকার তাকে জ্বালানোর! এভাবে বেশ মিনিট চারেক আমরা সাপটির গতিবিধি বোঝার চেষ্টা করলাম। সে নড়ে-চড়ে না, শুধু জিভ মেলে তাকায়। একবার মাথাটা হালকা উঁচু করে ফণাও তুলল। আমরা ভয়-ই পেলাম! মনে হচ্ছিল, আত্মহারা হয়ে পড়েছি। কিন্তু, যেতে তো হবেই; এদিকে অন্য পথে যাওয়ার সুযোগ নেই।
কী আর করার, পরে আমরা সাপটির দিকে তাকাতে তাকাতে তার পাশ ঘেঁষে সামনের দিকে এগুতে থাকি। সাপটি তখনও জিভ মেলে আমাদের দিকে তাকিয়ে কী যেন বোঝাচ্ছে! আমরা ভয়ে ভয়ে হাঁটছি। কিন্তু, সাপটি কিছুই বলল না আর। আমরা বেশ খানিকটা দূরে চলে এসেছি। এবার ভয় কমল, আমরা পাহাড় থেকে আরও নিচে হেঁটে চলেছি।
এবার একটি বড় ঝিরি পথের দেখা। বেশ কিছু পথ পানির ওপর দিয়ে হাঁটা ছাড়া সামনে যাওয়ার আর কোনো পথ নেই। দেখি, পায়ে জোঁক আর জোঁক! সবারই একই অবস্থা। রক্ত খেকো জোঁক। যখন পানিপথে হাঁটা শুরু করেছি, তখন জোঁক একাই ছেড়ে দিয়েছে।
হঠাৎ আমাদের স্থানীয় গাইড জানালেন, ঝিরি পথ ধরে কিছুদূর উল্টা পথে হাঁটলে একটি ঝর্ণা পাওয়া যাবে। বললেন, ‘এ পথে এখন পর্যন্ত দু-একজন পর্যটক যাঁরাই আসেন, আমিই তাঁদের নিয়ে আসি।’ আমরা যেতে রাজি হলাম, ঝিরি বেয়ে হাঁটা শুরু করেছি। পানির নিচে থাকতে থাকতে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে পড়া পাথরগুলোর ওপর দিয়ে হাঁটছি। বেশ স্রোত, পা পিছলে গেলেই বিপদে পড়তে হবে। এ পথ দিয়েই পুনরায় ফিরতে হবে আমাদের। তারপরের হাঁটা পথ অনেক কঠিন। যে পথে না কি স্থানীয় লোকজন প্রয়োজনেও যেতে চান না বলে গাইডের দাবি।
সতর্কতার সঙ্গে অনেক সময় হাঁটার পর দেখা মিলল একটি ঝর্ণার। গাইডসহ আমরা কেউ এ ঝর্ণার নাম জানি না! গাইডের দাবি, ঝর্ণাটি বেশিদিন ধরে ঝরে না। শুরুতে খুব ছোট ছিল, আস্তেধীরে ঝর্ণার পরিধি বাড়ছে। এরপর আমরা লাফালাফি-দাপাদাপি করতে চলে গেলাম ঝর্ণার নিচে। ওপর থেকে যখন মাথায় ঝর্ণার পানি ঝরছে, তখন মনে হচ্ছিল; সামনে ঝর্ণার রঙিন আভা! চোখ যেন ঝিলমিল করছে। চোখে আকাশি রং খেলা করছে।
আমাদের মূল গাইড একবার বলেছিলেন, এ ঝর্ণাটির কোনো নাম না থাকলেও পাশের ঝর্ণাটির নাম তারতে। বম ভাষার তারতে, যার বাংলা অর্থ বুড়ি। তারতে অনেক বড় ঝর্ণা। আর এ ঝর্ণাটি তারতের ছোট ধারা। তারতে মূলত পাহাড়ের আরও ওপরে। ওই ঝর্ণার ধারাটি এদিক দিয়ে প্রবাহিত হয়। এখন এ ঝর্ণাকে যদি আরেকটি তারতে ধরেন, তাহলে এটার নামও ছোট বুড়ি হওয়ার কথা। আমি বললাম, আমার কচি বুড়ি!
যাইহোক, একে একে সবাই ছবি তুললাম। ভিডিও করলাম। ঝর্ণাটি আরও বেশি মায়াবী হয়ে উঠেছে, ঝিরির স্রোতের কারণে। অসম্ভব সুন্দর পাহাড় বেয়ে ঝর্ণাটি ঝরছে।
যে পথ দিয়ে আমরা ‘কচি বুড়ি’র কাছে এসেছি, সে পথ দিয়ে পুনরায় হাঁটা শুরু করেছি। উদ্দেশ্য, তারতে সাইতার। পিচ্ছিল পথ। হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। এভাবে ঝিরি পথে কিছু সময় হেঁটে একটি পাহাড়ে ওঠা শুরু করি। তারতে আরও বেশ ওপরে। এভাবে মিনিট ৩০-এর মতো ওপরে ওঠতে ওঠতে আবার নিচে নামা শুরু করি। নামতে নামতে দেখি, দু-পায়ে জোঁক আর জোঁক। এভাবে সামনে যেতে যেতে পথ আটকে গেল। আর সামনে যাওয়ার পথ পাচ্ছি না। সামনে যেতে হলে গাছ কেটে যেতে হবে। গাইডের হাতে থাকা দা দিয়ে তিনি কয়েকটি ছোট ছোট গাছ কাটলেন। জায়গা ফাঁকা হলে আমরা আবার হাঁটা শুরু করি।
একটু যেতেই সামনে পাওয়া গেল সেই কাঙ্ক্ষিত তারতে ঝর্ণা! আহ, অদ্ভুত সুন্দর ঝর্ণা! অনেক উঁচু থেকে পানির ওপর পড়া ঝর্ণার শাঁ শাঁ শব্দ হচ্ছে। যেন পানি লাফিয়ে লাফিয়ে ওপরে ওঠছে। চেয়ে চেয়ে চোখের শান্তি দিচ্ছি। ভালো লাগছে। দেরি না করে সবাই একে একে পানিতে নেমে গেলাম। বুক সমান পানি পেরিয়ে ঝর্ণার নিচে থাকা পাথরে বসলাম। আহ, শরীরে জোরেশোরে পড়া ঝর্ণার পানি শান্ত করছে আমাকে। মনে হচ্ছিল ঝর্ণা নয়, প্রেয়সীর কোমল ভালোবাসা মেখে চলেছি! এত বেশি রোমাঞ্চিত ছিলাম যে, ঝর্ণার পানি পড়ার গভীর গর্তেও ডুব দিতে থাকলাম একের পর এক।
গাইড জানালেন, শরীরের ক্লান্তি দূর করেন; এরপরের পথ ভীষণ ভয়ংকর। তারপি যেতে যত কষ্ট হবে, তত কষ্ট এখন পর্যন্ত কোনো ঝর্ণায় যেতে হয়নি! আমরা অপেক্ষায়, ভয়ংকর সে পথের।