শীতের ছুটিতে
চলুন যাই ফরাসিদের উপনিবেশ ফরাসডাঙ্গায়

এবারের শীতে কলকাতা থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টার দূরত্বে ঘুরে আসুন ফরাসি উপনিবেশে। হুগলি নদীর তীরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ফরাসি উপনিবেশের সাক্ষী হয়ে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার চন্দননগর। খলিসানি, বোরো ও গোন্দলপাড়া নামের তিনটি প্রাচীন মৌজা এবং গৌরহাটির ছিটমহলসহ নয় বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে আজকের চন্দননগর। এক সময়ে এই চন্দননগরে ছিল ফরাসি উপনিবেশ। যে কারণে আজও অনেকে চন্দননগরকে ফারাসডাঙ্গা বলে ডাকে।
চন্দননগরের ইতিহাস
ফরাসিদের আগমের আগে বাণিজ্যিক সমৃদ্ধির জন্য চন্দননগরের যথেষ্ট খ্যাতি ছিল। কথিত আছে, একসময় বিপুল চন্দন কাঠের ব্যবসা এখানে হতো বলেই এই জায়গাটির নামকরণ করা হয় চন্দননগর। অতীতে ইংরেজ শাসিত কলকাতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমৃদ্ধ নগরীতে পরিণত হয় ফরাসি শাসিত চন্দননগর। কলকাতার মতো চন্দননগরেও রয়েছে স্ট্রান্ড রোড, বড়বাজার, বাগ বাজার, বউ বাজার এলাকা। এখানকার রাস্তাঘাটে আজও রয়েছে ফরাসি আমলের ছাপ। শোনা যায়, ফরাসি উপনিবেশ হওয়ায় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় বিপ্লবীরা এখানে এসে লুকিয়ে থাকতেন। আলিপুর বোমা মামলায় মূল অভিযুক্ত বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ ও অন্য বিপ্লবীরা এই চন্দনগরেই আশ্রয় নেন। এমনকী চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ঘটনায় জড়িত গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহ, শহীদ জীবন ঘোষালরাও এখানে এসে লুকিয়ে ছিলেন। সেই সময় এই চন্দননগরে ফরাসি উপনিবেশ হওয়ার কারণে ব্রিটিশ পুলিশকে এখানে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে হতো।
কী দেখবেন
বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর পৈতৃক ভিটে এই চন্দননগরের ফটোকগোড়া এলাকায়। শহীদ কানাইলাল বসুর শৈশবও কেটেছে এই শহরে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও একাধিকবার এসেছেন এই চন্দননগরে। তাঁর স্মৃতি বিজড়িত পাতালবাড়ি স্ট্রান্ড রোডের দক্ষিণপ্রান্তে অবস্থিত। এ ছাড়া এখানে এসে দেখা যাবে, চন্দননগর স্ট্রান্ড রোড, চন্দননগর মিউজিয়াম এবং ইনস্টিটিউট, ফরাসি সমাধিস্থল, চন্দননগর গেট, পাতালবাড়ি, নন্দদুলাল মন্দির, নৃত্যগোপাল স্মৃতি মন্দির, বিশালাক্ষ্মী মন্দির, রাধানাথ শিকদার হিমালয়ান মিউজিয়াম, রাসবিহারী রিসার্চ ইনস্টিটিউট।
কীভাবে যাবেন
কলকাতা থেকে হাওড়া স্টেশন হয়ে যাওয়া যায় চন্দননগরে। হাওড়া স্টেশন থেকে বর্ধমানের দিকে ভারতের পূর্ব রেলওয়ের অনেক লোকাল ট্রেন রয়েছে চন্দননগরে যাওয়ার জন্য। হাওড়া থেকে বর্ধমান মেইন লাইনের লোকাল, ব্যান্ডেল লোকাল বা কাটোয়া লোকাল ধরে অনায়াসেই চলে আসা যায় চন্দননগরে। প্রায় ১০ মিনিট অন্তর অন্তর হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ে। রেলপথ ছাড়া কলকাতা থেকে জিটি রোড ধরে আসা যায় চন্দননগরে। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে কংসারির মোড় থেকে ১৭ নম্বর রুট ধরে বাঁ-দিকে চুঁচুড়া হয়েও আসা যায় চন্দননগরে।
খরচ
কলকাতা থেকে সকালে পকেটে ৫০০ থেকে ১০০০ রুপি নিয়ে অনায়াসের ঘুরে আসতে পারেন চন্দননগরে। তবে চন্দননগরে রাত্রিবাস করতে চাইলেও এখানে পেয়ে যাবেন আপনার সাধ্যের মধ্যেই হোটেল।