সিলেটের টিলাগড় ইকোপার্কে একদিন
ব্যস্ত নগরজীবনে কাজকর্মের চাপে যখন পিষ্ট হয়ে যাচ্ছেন, ঠিক তখনই ঢাকার বাইরে কোনো জায়গা থেকে ঘুরে আসতে পারেন।একঘেয়েমি দূর হওয়ার পাশাপাশি প্রকৃতির সান্নিধ্য পাবেন খুব কাছ থেকে। ঢাকার বাইরে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার জায়গার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সিলেটের টিলাগড় ইকোপার্ক।
নাটক মিউজিক ভিডিওর স্যুটিং থেকে শুরু করে পিকনিক বা স্রেফ ঘুরে বেড়ানোর জায়গা হিসেবে শহরতলীর এই অংশটুকু যেন সবাইকে হাতছানি দিয়ে ডাকে।
সেই ডাক এখন আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকটি পশু আর পাখি। গত নভেম্বরে গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে নিয়ে যাওয়া হরিণ-ময়ূর আর জেব্রার সুবাদে টিলাগড় ইকোপার্কে এখন রীতিমতো অন্য এক পরিবেশ। ৯টি প্রজাতির ৫৮টি পশু-পাখি দর্শনে প্রতিদিন পার্কটিতে ভিড় লেগেই থাকে। শুক্রবার সেই ভিড় বৃদ্ধি পায় কয়েকগুণ।
দেশের অন্যান্য অঞ্চলের পর্যটকরা সিলেট ঘুরতে এসে এক বিকেল কাটিয়ে দিচ্ছেন প্রকৃতির এই মায়াময় পরিবেশে। আপনার সিলেট সফরসূচিতেও রাখতে পারেন পার্কটির নাম।
যা দেখবেন
১১২ একর জায়গাজুড়ে ছোটবড় কয়েকটি পাহাড়-টিলায় সারি সারি নানা জাতের গাছ। সবুজ গুল্মলতাকে মাটির কাছাকাছি রেখে যেন তারা আকাশ ছোঁয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ২০০৬ সালে ইকোপার্ক ঘোষিত হওয়ার পর সবুজ আর গাছ-গাছালির সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। গাছগুলোর মধ্যে শাল, গর্জন, জারুল, কড়ই, হিজল, ডুমুর আছে, আছে নারকেল, আম, জাম, কাঁঠালের মতো পরিচিত ফলদ বৃক্ষও। এসব গাছপালা আর ঝোপঝাড়ের মধ্যেই বাস করে শেয়াল, বানর, বনমোরগ থেকে শুরু করে হনুমান পর্যন্ত। তবে শিয়াল-বানরের দেখা মিললেও অন্যদের মিলে কালেভদ্রে। পাখিদের মধ্যে ময়না, টিয়া, ঘুঘু থাকলেও তাদের দেখা পাওয়াও অনেকটা ভাগ্যনির্ভর। তবে ঘুঘু আর নাম না জানা আরো কিছু প্রজাতির পাখির কূজনে আপনি মোহিত হবেনই। ইকোপার্কের ভেতরেই আছে ছোট একটি ছড়া।
নতুন সংযোজন
প্রধান প্রবেশ পথের ডানদিকে এগুলেই হাতের বাঁয়ে উঁচু টিলা। সিঁড়ির কাছেই চিত্রা হরিণের ছবি। মানে, এখানেই আছে তিনটি হরিণ শাবক। তারা খোলা জায়গায় এলে অবশ্য স্পষ্ট দেখা যায়। তবে বেশির ভাগ সময়ই টিলার ঢালুর ছোট ছোট ঝোপঝাড়ের সাথে মিশে থাকে। তা ছাড়া এগুলো খুব ছোট হওয়ায় দূর থেকে দেখা কঠিন। পরের কয়েকটি শেডের সামনে আপনাকে থমকে দাঁড়াতেই হবে। ছোট ছোট লাভ বার্ড, নীলকণ্ঠী ময়ূর, ম্যাকাও, গোল্ডেন ফিজেন্ট, সিলভার ফিজেন্ট, গ্রে-প্যারট, সান কনুরির মতো দুর্লভ পাখি মুগ্ধ করে ছেলে-বুড়ো সবাইকে। আরেকটু সামনে এগুলেই মাঝারি আকারের অজগরের আয়েশী নড়চড়া দেখা হবে। তারপর আছে ডোরাকাটা দুটি জেব্রা। ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্তি চেপে ধরলে টিলার ঢালুতে সবুজের গহীনে পাতা বনবিভাগের স্থায়ী আসনগুলোতে বসে পড়তে পারেন। বাচ্চাদের বিরক্তি দূর করার ব্যবস্থাও আছে। অজাগর শেডের বিপরীতে বেশ বড়সড়ো খেলার মাঠ আছে তাদের জন্য। সেখানকার রাইডগুলোও তাদের জন্য বেশ আকর্ষণীয়।
যেভাবে যাবেন
ঢাকার সায়েদাবাদ-ফকিরাপুল থেকে বাসে সিলেটের কদমতলী পর্যন্ত পৌঁছাতে খরচ পড়বে ৪০০ থেকে হাজার টাকার মধ্যে। ট্রেনে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা। বিমানেও যেতে পারেন। সিলেটের কদমতলী থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় নগরীর টিলাগড় পয়েন্টে যেতে খরচ নেবে দেড়শ থেকে ২০০ টাকা। টিলাগড় থেকে ইকোপার্ক পর্যন্ত রিকশায় নেবে ৪০ থেকে ৫০ টাকা আর সিএনজি চালিত অটোরিকশায় খরচ পড়বে ১শ’ টাকার মতো।
যেখানে থাকবেন
সিলেট শহরের বন্দরবাজার জিন্দাবাজার দরগাহ গেট এলাকায় প্রচুর আবাসিক হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে থাকার খরচ পড়বে ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা। এ ছাড়া কয়েকটি অভিজাত হোটেলও আছে।