পূজার ছুটিতে
পূজার শেষ দিনে ঢাকার আশপাশে
আজ দশমী। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসবের শেষ দিন। ভারত, বাংলাদেশ, নেপালসহ ভারতীয় উপমহাদেশে ও বিশ্বের অনেক দেশেই দুর্গাপূজা পালিত হয়। দুর্গাপূজা আশ্বিন মাসের শুল্কপক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। পাঁচ দিনের এ উৎসবকে পর্যায়ক্রমে দুর্গাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমী ও বিজয়া দশমী নামে আখ্যায়িত করা হয়। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে এই দুর্গাপূজা পালিত হয় মহাআয়োজনে। এখন দেশের সব জেলাতেই পূজামণ্ডপগুলোতে চলছে পূজার শেষ প্রস্তুতি। আর এই উৎসবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি সব ধর্মের মানুষ অংশ নেয় আনন্দ ভাগাভাগি করতে। পূজামণ্ডপগুলো ঘুরে দেখা যায় দুর্গাপূজার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর তা করতে এ সময় অনেকে ছুটে বেড়ান নিজ এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় অন্য জেলায়। তাই এখনই ভেবে নিন আজ শেষ দিনে পূজার আয়োজনে কোথায় ঘুরতে যাবেন।
ধামরাইয়ে পূজার আয়োজন
দেশের প্রধান পূজামণ্ডপ ঢাকেশ্বরীসহ অনেক জেলাতেই বেশ বড় পরিসরে দুর্গাপূজার আয়োজন হয়ে থাকে। তার মধ্যে যশোরের কেশবপুরে ও নড়াইলের আয়োজন উল্লেখযোগ্য। যাঁরা পূজার ছুটিতে ঘুরে দেখতে চান সেগুলো, তাঁরা এখনই প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন। তবে যাঁরা এতদূর যেতে প্রস্তুত নন, তাঁরা ঢাকার অদূরে সাভার পেরিয় ধামরাই গিয়ে দেখে আসতে পারেন দুর্গাপূজা। ধামরাইয়ে অনেক পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। ধামরাইয়ের একেবারে কেন্দ্রে অবস্থিত শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবার আশ্রমের পাশে অবস্থিত মন্দিরে বড় পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এখন বেশ তোড়জোর করে চলছে পূজার প্রস্তুতি। ঘুরে দেখতে পারেন সেগুলো।
ধামরাইয়ে আরো যা দেখবেন
ধামরাই রথ : পূজার পাশাপাশি দেখে আসতে পারবেন ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী রথমেলার সেই রথ। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, রোগবালাই থেকে সারা বছর পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব এই রথের দড়ি টানলে। তাঁদের মতে, যেদিন রথ টানা হয়, সেদিন থেকে সাত দিন রথটি শ্বশুরবাড়ি থাকে। আর উল্টো রথের মধ্য দিয়ে সাত দিন পর সুখ আর শান্তি নিয়ে ফিরে আসে। ১৯৭১ সালে প্রথম নির্মিত রথটি বেশ বড় ছিল। সেটি ছিল প্রায় ৩০ ফুট উঁচু, যা নির্মাণ করেছিলেন বালিয়াটির জমিদার বাবুরাম। সে সময় থেকে রথ উৎসব পরিচালনা করে আসছিলেন তারই বংশধররা। কিন্তু বর্তমানে সে রথ না থাকলেও যেটি রয়েছে, সেটিও দেখার মতো এবং এখন এই রথমেলা পরিচালনা করে থাকেন যশোমাধব মন্দির ও মেলা পরিচালনা কমিটি। রথমেলার সময় ধামরাইয়ে সারা দেশ থেকে মানুষ আসেন উৎসবের সঙ্গী হতে। লাখ লাখ মানুষের মিলনমেলায় তিল ধারণের জায়গা থাকে না সে সময়। মেলায় থাকে বিনোদনের সব ধরনের ব্যবস্থা, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য যাত্রাপালা, পুতুলনাচ, সার্কাস পার্টি, শত শত দোকানে পসরা সাজিয়ে বসা দোকানিদের মনভোলানো সব আয়োজন। সঙ্গে বাহারি খাবারের আয়োজন তো থাকেই। থাকে ধামরাইয়ের বিখ্যাত মিষ্টি ও আমিত্তি। এ ছাড়া ধামরাইয়ে রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় জমিদারদের নির্মিত ভবন। দেখে আসতে পারেন সেগুলোও।
বংশী নদী : ধামরাইয়ের একেবারে গাঁ ঘেষে বয়ে চলেছে বংশী নদী। ১৮৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদী উত্তরে জামালপুর দিয়ে প্রবাহিত ব্রক্ষপুত্র নদ থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণে টাঙ্গাইল, গাজীপুর অতিক্রম করে ধামরাই ও সাভারের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আমিনবাজারে তুরাগ নদের সঙ্গে মিলে বুড়িগঙ্গায় গিয়ে মিশেছে। এই চলার পথে নদীটি অতিক্রম করেছে জামালপুর, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও ঢাকা জেলা এবং ১০টি উপজেলা। এগুলো হলো জামালপুর সদর, মধুপুর, ঘাটাইল, কালিহাতী, বাসাইল, মির্জাপুর, সখিপুর, কালিয়াকৈর, ধামরাই ও সাভার। নদীপারের গ্রামগুলোকে ছবির মতো আপন হাতে একে বয়ে চলেছে এই বংশী। এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে আপনি ধামরাইতে পেয়ে যাবেন সাধ্যের মধ্যে বৈঠাচালিত বা ইঞ্জিনে টানা সব ধরনের নৌকা।
মৃৎশিল্প : ধামরাইয়ে রয়েছে প্রচুর মৃৎশিল্প। শিল্পীরা নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি করে চলেছেন মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল থেকে শুরু করে শিশুদের খেলনা, ঘর সাজানোর নানা শোপিস, ফুলগাছের টব আরো কত কী। ইচ্ছে হলেই কিনে নিতে পারেন পছন্দমতো দামে।
কীভাবে যাবেন :
ঢাকা থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে ধামরাই। যেতে সময় লাগবে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। ঢাকার গুলিস্তান থেকে সরাসরি ধামরাইয়ের বাস পাওয়া যায়। এ ছাড়া গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে অনেক পরিবহন আছে, যা ধামরাই হয়ে মানিকগঞ্জ চলে যায়। আপনি এর যেকোনোটি ধরে নিতে পারবেন। বাসভেদে ভাড়া ৫০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করবে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত গাড়িতে অনায়াসে চলে যেতে পারেন ধামরাই।
সতর্ক থাকুন :
- ঢাকা থেকে ধামরাই যেতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কটি অত্যন্ত ব্যস্ত হওয়ায় সাবধানে গড়ি চালাবেন।
- ধামরাই পৌঁছে প্রায়ই চোখে পড়বে বাঁদরের দল। এরা যেকোনো সময় আপনার হাত থেকে কেড়ে নিতে পারে খাবার থেকে শুরু করে মূল্যবান জিনিস।
- নদীতে বেড়াতে গেলে সাঁতার জানা থাকা ভালো।