মধুসূদন দত্তের সমাধিসৌধে একদিন
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মদিন ২৫ জানুয়ারি। ১৮২৪ সালের ওই দিনে যশোর জেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ‘মধু কবি’ নামে সমধিক পরিচিত মধুসূদন দত্ত ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন কলকাতায় মারা যান।
কলকাতার শিয়ালদহ থেকে হাঁটাপথে আনুমানিক ১৫ মিনিট রাস্তা পার করলেই মল্লিকবাজার মোড়ের কাছেই রয়েছে কবির সমাধি। কলকাতার লোয়ার সার্কুলার রোড সেমিট্রিতে শায়িত কবি।
খ্রিস্টান বারিয়্যাল বোর্ডের গেট পার হলেই সোজা কিছুটা এগিয়ে ডান দিকে তাকালেই দেখা যাবে লেখা রয়েছে ‘মধু বিশ্রাম পথ’। সেই রাস্তার শেষে গিয়ে দাঁড়ালেই বাঁ-দিকে দেখা মেলে কবির সমাধির। শান্ত সুশীতল পরিবেশে হরেক রকমের পাতাবাহার ও ফুলগাছের নিচে শায়িত তিনি। সামনেই কবির আবক্ষ মূর্তি। তার নিচে লেখা রয়েছে ‘দাঁড়াও পথিকবর জন্ম যদি তব বঙ্গে, তিষ্ঠ ক্ষণকাল, এ সমাধিস্থলে। জননীর কোলে শিশু লভয়ে যেমতি বিরাম, মহীর পদে মহা নিদ্রারত দত্ত কুলোদ্ভব কবি শ্রী মধুসূদন। যশোরে সাগরদাঁড়ি কপোতাক্ষ তীরে জন্মভূমি, জন্মদাতা দত্ত মহামতি রাজ নারায়ণ নামে, জননী জাহ্নবী।’
কলকাতায় আসা দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে মধু কবির এই সমাধিস্থল অন্যতম দর্শনীয় স্থান। বাংলাদেশ থেকে ভিটেমাটি ছেড়ে চলে আসা কলকাতার অনেক প্রবীণকে কবির সমাধির সামনে দাঁড়িয়ে আজও বলতে শোনা যায়, ‘সতত হে নদ তুমি পড়ো মোর মনে, সতত তোমারি কথা ভাবি এ বিরলে...’ মধু কবি মানেই যেন বাংলাদেশের স্মৃতি রোমান্থনের একটি অধ্যায়, মধু কবি মানেই যেন কপোতাক্ষ নদের সুখস্মৃতি মন্থন।
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের এই সমাধিক্ষেত্রে নামিদামি বহু মানুষের সমাধি থাকলেও এখানে পর্যটকরা মূলত ভিড় জমান মাইকেলের সমাধিক্ষেত্রকে একবার স্বচক্ষে দেখার আশায়। কলকাতার কোলাহলমুখর অন্যতম ব্যস্ত মল্লিকবাজার মোড়ের একটু আগেই (শিয়ালদহ থেকে আসার পথে বাঁ দিকে) কলকাতার লোয়ার সার্কুলার রোড সেমিট্রি। দুই পা এগিয়ে রিসেপশনে আপনার নাম ও ঠিকানা লিখে সটান ঢুকে যেতে পারেন এই সমাধি ক্ষেত্রে।
মনোরম পরিবেশে ঘেরা সুশীতল এই স্থান আপনাকে মুহূর্তেই আপন করে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত। মন চাইলে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে হেঁটেই আসতে পারেন এখানে। ১৫ থেকে ২০ মিনিটের রাস্তা। এ ছাড়া শিয়ালদহ থেকে বাসে করেও আসতে পারেন। ভাড়া সাত রুপি।
মধু কবির জন্মদিন উপলক্ষে এই সমাধিক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই কবিপ্রেমী মানুষের ভিড় জমে। সারা বছরের কর্মব্যস্ততার মধ্যে অন্তত এই একটি দিনে কবিকে স্মরণ করে, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় জমান ভক্ত- অনুরাগীরা।