আমি অন্যায়কে প্রশ্রয় দেই না : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ সোমবার দক্ষিণ কলকাতার নজরুল মঞ্চে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘অন্যায়কে প্রশ্রয় দেই না, বিচার ব্যবস্থাকে সম্মান করি। জীবনটা ভোগ করার জন্য আমি সারা জীবন রাজনীতি করিনি। ছোটবেলা থেকে আমি রাজনীতি করি, তার কারণ আমার ধারণা ছিল রাজনীতি মানে ত্যাগ, দেশ সেবা, মানুষকে ভালোবাসা। এটাই আমি মা-বাবার কাছে পেয়েছিলাম, শিক্ষকদের কাছ থেকে পেয়েছিলাম। কিন্তু স্কুলে কি সব শিক্ষকরা এক রকম হয়? পার্থক্য তো থাকবেই। সেটা যদি না থাকে তবে এক গাছে কলা আর আপেল হতো।’
মমতা এদিন পরোক্ষভাবে তাঁর সরকারের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তারি প্রসঙ্গে মুখ খোলেন। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো অন্যায়কে সমর্থন না করি না। দুর্নীতিকে সমর্থন করা আমার নেশাও নয়, পেশাও নয়। ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমি এক লাখ রুপি করে সাবেক সংসদ সদস্য হিসেবে পেনশন পাই। বিধায়ক বা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দুই লাখ রুপি পেতে পারি। মাসে তিন লাখ রুপি করে ১১ বছরে কত হয়? কিন্তু আমি এক পয়সাও নেইনি। আমি ভলানটারি সার্ভিস দেই। আজকে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের আচরণে আমি সত্যিই দুঃখিত, মর্মাহত ও শোকাহত। কেউ কখনো কখনো ভুল করতেই পারে।’
মমতা বলেন, ‘মনে রাখবেন, নেতাজি সুভাষ বলেছিলেন, ভুল করাটাও একটা অধিকার। যেদিন আমি শুনেছিলাম কয়েকটি ছেলে বঞ্চিত হয়েছে, আমি নিজে গিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করে এসেছিলাম। আমি সে সময় তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীকে বলেছিলাম মামলা করতে। এবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকেও বঞ্চিতরা যাতে চাকরিগুলো পায়, তার ব্যবস্থা করেছিলাম। কেউ ভুল করলে তাঁকে একটা সংশোধন দেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত। সবাই সাধু, আমি এ কথা বলতে পারব না। সাধুর মধ্যেও ভুত আছে। সবাই শতভাগ সঠিক কাজ করবে, এটা সম্ভব নয়। আমি যদি কোনো ভুল করে থাকি তার জন্য ক্ষমা চেয়ে নেব। কিন্তু জেনেশুনে কোনো ভুল কাজ আমি নিজেকে করতে দেইনি।’
মমতা এদিন রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তারি প্রসঙ্গে বলেন, ‘কেউ কেউ কালকের একটা ঘটনা নিয়ে নানা কথা বলছে। কোনো একটা নারী ঘটিত ব্যাপার... ওর বাড়ি থেকে রুপি উদ্ধার করেছে। বিষয়টি বিচারাধীন, আমি কোনো মন্তব্য করব না। তবে আমি চাই সত্যের বিচার হোক। সত্য ঘটনার সামনে আসুক। সত্যিই যদি কেউ দোষী প্রমাণিত হয়, তাকে যাবজীবন কারাদণ্ড দিলেও আমি কিছু মনে করব না। কিন্তু কেন আমার ছবি দিয়ে রুপির পাহাড় দেখিয়ে, সারা কলকাতা যে প্রচার ছড়ানো হচ্ছে? সিপিআইএম ও বিজেপির এত বড় ঔদ্ধত্য ও অহংকার? আমি যদি রাজনীতি না করতাম তবে আমি জিভটা কেটে ফেলতে পারতাম। আমি কারও পয়সায় খাই না। আমি যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম নিজের পয়সায় চা খেতাম। কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে আপনি তো বেতন নেন না। তবে পয়সা কোথায় পান ? আমি বই লিখি, গানে সুর দেই।’
তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘আমি আবার বলব, যদি কেউ চোর হয়, ডাকাত হয় তৃণমূল কংগ্রেস কাউকে রেয়াত করে না। আমি নিজেও অনেককে গ্রেপ্তার করিয়েছি। আমি সাংসদ, বিধায়ক এমনকি মন্ত্রীদেরও রেয়াত করি না। কিন্তু অযথা আমার গায়ে কালি ছেটানোর চেষ্টা করলে তা ভুল হবে। আলকাতরা আমার হাতেও আছে। এত যে টাকা উড়লো আমি তো জানব কিন্তু কোথা থেকেও জানতে পারলাম না, কোনো গণমাধ্যমেও জানা যায়নি। জানলে তো তখনই পদক্ষেপ নেওয়া যেত। যদি কেউ অন্যায় করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিক, আমি বিচার ব্যবস্থাকে সম্মান করি। কেউ যদি অন্যায় করে থাকে, বিচারে প্রমাণিত হয়, তার দায়িত্ব সে নিজে নেবে। কারণ সরকার এর সঙ্গে জড়িত নয়। আর দলের সঙ্গে ওই নারীরও কোনো সম্পর্ক নেই। দল বা সরকার কারো সঙ্গেই সম্পৃক্ততা নেই। যিনি অন্যায় করেছে তার বিরুদ্ধে যা পারেন করুন। আমার জানার দরকার নেই, আমার কিছু যায় আসে না। কিন্তু আমাকে গায়ে ছোঁয়ার চেষ্টা করবেন না।’