ইউরোপে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসন্ন, আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের
ইউরোপজুড়ে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে আরেকটি বড় ধরনের প্রাদুর্ভাব বা করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সন্নিকটে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। স্পেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাস আরো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় কর্তৃপক্ষ কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার দ্রুত বেড়ে চলেছে। শরৎ ও শীতকালে সে সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গ্রীষ্মে মানুষ খোলা আকাশের নিচে বেশি সময় কাটানোর পর তাপমাত্রা কমতে শুরু করলে, বদ্ধ ঘরে জমায়েত বাড়বে। তখন সংক্রমণ আরো ছড়িয়ে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। সার্বিক লকডাউন ছাড়াই সে পরিস্থিতি সামলানো ইউরোপের বিভিন্ন দেশের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর লকডাউন জারি হলে, আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় রাশ টানতে সক্ষম হয় ইউরোপের দেশগুলো। কিন্তু, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লকডাউন শিথিল করায় ইউরোপে করোনার প্রকোপ বেড়ে গেছে। সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণস্বাস্থ্য-বিষয়ক অধ্যাপক ও বিজ্ঞানী লিন্ডা বাউল্ড বলেন, “ভাইরাসটি ইউরোপ থেকে পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হয়নি, এটাকে দমিয়ে রাখা হয়েছিল। তাই, যখন লকডাউন তুলে নেওয়া হলো, আবারও ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছে। সরকারগুলো বলছে, ‘ঘর থেকে বাইরে আসুন, অর্থনীতিতে অবদান রাখুন, প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা করুন।’”
ইউরোপীয় রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ দপ্তর গত ১৪ দিনে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ১২০ জনের সংক্রমণ নথিভুক্ত করেছে। গত সোমবার প্রকাশিত তথ্য পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পাঁচটি দেশ সে মাত্রা অতিক্রম করেছে। এ তালিকার শীর্ষে রয়েছে স্পেন। ফ্রান্সের দক্ষিণের কিছু অংশ, চেক প্রজাতন্ত্র, ক্রোয়েশিয়া ও রোমানিয়ায়ও সংক্রমণের হার দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ ও সংলগ্ন অঞ্চলে করোনা মহামারি মারাত্মক আকার ধারণ করছে। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকারের মধ্যে সংঘাতের ফলে সমস্যা আরো বাড়ছে।
যুক্তরাজ্যে করোনা পরিস্থিতির অবনতিও অব্যাহত রয়েছে। শীতের মাসগুলোতে সে দেশে সংক্রমণের হার মারাত্মক আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও তাঁর মন্ত্রীরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপ ঠিক করতে গত সপ্তাহান্তে মিলিত হয়েছিলেন। সংক্রমণের গতি কমাতে সরকার সাময়িক বিধিনিয়ম ঘোষণা করবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
জার্মানির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলোও শীতের মাসগুলোতে করোনা সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে রাখতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান বলেছেন, প্রতিবেশী দেশগুলোতে করোনার সংক্রমণ বাড়ার ফলে জার্মানিতেও এর প্রভাব দেখা যাবে বলে তাঁর আশঙ্কা। তিনি আরো দ্রুত গতিতে করোনা পরীক্ষা ও দেশজুড়ে জ্বর মাপার জন্য আলাদা স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। চিকিৎসকের চেম্বারে ভিড় কমিয়ে করোনা পরীক্ষার বিচ্ছিন্ন ব্যবস্থা করা হবে।
স্পান বলেন, ‘বদ্ধ ঘরে বেশি মানুষের সমাবেশের কারণে সংক্রমণ বেশি ছড়াচ্ছে।’
করোনার ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ প্রতিরোধ করতে জার্মানির দক্ষিণের বাভেরিয়া রাজ্য সরকার কড়া বিধিনিয়ম চালু করছে। মিউনিখ শহরে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকেই নতুন নিয়ম চালু হচ্ছে। এর আওতায় ব্যস্ত এলাকায় প্রকাশ্যে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। মানুষের মধ্যে সাক্ষাৎ ও যোগাযোগ কমাতে সর্বাধিক দুটি পরিবার ও পাঁচজনের বেশি জমায়েতের অনুমতি দেওয়া হবে না।
ইউরোপের দেশগুলোতে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা বেড়েছে। তবে অধিক হারে করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার পেছনে পরীক্ষা সংখ্যা বাড়ার বিষয়টি মেলানো যাবে না। কারণ, করোনা পরীক্ষা যেমন বেড়েছে, করোনা পজিটিভ হওয়ার হারও আগের চেয়ে বেড়েছে।