ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্রে আগুন, ‘ব্যাপক’ ক্ষয়ক্ষতি
ইরানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্রে আগুন লেগে 'ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি' হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পারমাণবিক কর্তৃপক্ষের একজন মুখপাত্র। তিনি বলেন, নাতানজে পারমাণবিক কেন্দ্রের আগুনের কারণ তাঁরা জানতে পেরেছেন। যদিও এর বিস্তারিত কিছু তিনি জানাননি।
তবে আগুনে যেসব যন্ত্রপাতি পুড়ে গেছে, সেগুলোর জায়গায় আরো উন্নত যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হবে বলে জানিয়েছেন ওই মুখপাত্র। পারমাণবিক কেন্দ্রটির সেন্ট্রিফিউজ সংযোজন ওয়ার্কশপে আগুন লেগেছিল বলে জানা যাচ্ছে। তবে ইরানের কর্মকর্তারা এ দুর্ঘটনার জন্য সাইবার নাশকতাকে দায়ী করছেন। সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে এমনটি বলা হয়।
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে সেন্ট্রিফিউজ ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া এটি রিয়েক্টর এবং পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতেও ব্যবহার করা হয়।
ইরানের অ্যাটমিক এনার্জি অর্গানাইজেশনের মুখপাত্র বেহরুজ কামালভান্দি বলেন, ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে কর্মকর্তারা এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন না। এ ঘটনায় উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।’
ইরানে কয়েক সপ্তাহ ধরে আরো কয়েকটি জায়গায় আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বেহরুজ কামালভান্দি বলছেন, ‘এ ঘটনা অ্যাডভান্সড সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন ও উন্নয়নের গতিকে ধীর করতে পারে... ইরান ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের জায়গায় আরো বড় ভবন করবে, যাতে আরো আধুনিক উপকরণ সংযোজিত হবে।’
কামালভান্দি জানান, নির্মাণাধীন একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল শেডে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। প্রকাশ করা একটি ছবিতে দেখা যায়, ভবনটি আগুনে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত। পরে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্লেষকরা এটিকে নতুন সেন্ট্রিফিউজ সংযোজন কারখানা হিসেবে শনাক্ত করেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স ইরানি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে বলছে, তাঁরা বিশ্বাস করেন, এটি সাইবার অ্যাটাকের ঘটনা, তবে তাঁরা কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেননি।
পারচিন মিলিটারি কমপ্লেক্সের কাছে বিস্ফোরণের ছয় দিন পর নাতানজের আগুনের ঘটনা ঘটল। ইরান কর্তৃপক্ষ সেখানে গ্যাস ট্যাঙ্ক বিস্ফোরণের কথা জানিয়েছে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, স্যাটেলাইটে তোলা ছবি থেকে দেখা যাচ্ছে যে এর কাছে মিসাইল উৎপাদন কেন্দ্র আছে। পারচিন তেহরানের কাছেই একটি জায়গা। পশ্চিমা শক্তিগুলো এটিকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ জায়গা মনে করে।
ইরান বরাবরই তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ দাবি করে। এদিকে, গতকাল রোববার কর্মকর্তারা জানান, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর আহভাজে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। পরে সেখানে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
তেহরান থেকে প্রায় আড়াইশ কিলোমিটার দক্ষিণে নাতানজ এবং এখানেই ইরানের সবচেয়ে বড় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে দেখা গেছে, ইরান সম্মত হয়েছিল যে কম মাত্রার ইউরেনিয়াম উৎপাদন করবে, যা পরমাণুভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য তেল উৎপাদন করবে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর পর গত বছর ইরান এ চুক্তি থেকে সরে আসে। এরপর ইরান নাতানজে অ্যাডভান্সড সেন্ট্রিফিউজ দ্বিগুণ করা হয়েছে বলে জানায়।