এই পদে আমিই প্রথম নারী, তবে শেষ নই : কমলা হ্যারিস
তুমুল লড়াই আর অনেক তিক্ততার পর ইতিহাস সৃষ্টি করে ডোনাল্ড ট্রাম্প-মাইক পেন্স জুটিকে হারিয়ে জয়ী হলেন জো বাইডেন-কমলা হ্যারিস জুটি। পরবর্তী চার বছরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। তাঁর রানিংমেট কমলা হ্যারিস প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ও প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যায় ভাষণে একে সমঅধিকার ও ন্যায়বিচারের সংগ্রামের বিজয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন কমলা হ্যারিস।
ভাষণে কমলা হ্যারিস বলেন, ‘বর্ণবাদ, সমঅধিকার ও ন্যায়বিচারের জন্য আমরা যে সংগ্রাম করেছি, আজ তার বিজয় হয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের অবদানের কথাও জাতি আজ স্বীকৃতি দিল। ভোটের অধিকার ১৯তম সংশোধনী পেতে শত বছর আগে নারীর ভূমিকা, ৫৫ বছর আগে ভোটাধিকার সংশোধনীতে নারী আন্দোলনের অবদান এবং সম্প্রতি আধুনিক রাষ্ট্র গড়তে নারীদের ত্যাগের মহিমা আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।’
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রশংসা করে কমলা বলেন, নানাবিধ বাধা উপেক্ষা করে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে একজন নারীকে বেছে নেওয়ার স্পর্ধা দেখিয়েছেন তিনি।
৫৫ বছর বয়সী কমলা বলেন, ‘আমি এই পদে প্রথম নারী। তবে আমিই শেষ নই।’
কমলা হ্যারিস আরো বলেন, ‘আমেরিকায় আজকের মতো একটি দিন আসা যে বাস্তবেই সম্ভব, তা আমার মা বহু আগ থেকে বিশ্বাস করতেন।’
কমলার জন্ম ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ওকল্যান্ডে। তাঁর বাবা ডোনাল্ড হ্যারিস একজন জ্যামাইকান বংশোদ্ভূত আমেরিকান। আর মা ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিক অধিকারকর্মী ও ক্যানসার গবেষক শ্যামলা গোপালান। কমলা পড়াশোনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া থেকে আইন ডিগ্রি নিয়ে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। প্রথম নারী ও কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল হন এবং দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন কমলা।
এর মধ্যেই ডেমোক্রেটিক পার্টির একজন উদীয়মান তারকা হিসেবে কমলা হ্যারিসের সুনাম ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ২০১৭ সালে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার জুনিয়র সিনেটর নির্বাচিত হন। পরে কমলা নিজেই ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার লড়াই চালান। প্রথম দিকের বিতর্কগুলোয় ভালো করার পর সম্ভাব্য ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের প্রথম কাতারেও চলে আসেন। প্রতিপক্ষের প্রতি কড়া প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে সব মহলে সুপরিচিত হয়ে ওঠেন কমলা। বাইডেন এগিয়ে থাকায় নমিনেশন যুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। কিন্তু সেই বাইডেনেরই রানিংমেট হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার পর এই সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এখন আবার ফিরে এসেছেন মনোযোগের কেন্দ্রে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাইডেন কমলা হ্যারিসকে রানিংমেট করার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ ও এশীয় বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠী ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে ভোটে।
কমলা হ্যারিস প্রায়ই বলেন, তাঁর আত্মপরিচয়ই তাঁকে সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করার উপযুক্ত করে তুলেছে। তিনি মনে করেন, শুধু ভাইস প্রেসিডেন্টই নয়, নারীরা যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ারও যোগ্য, সেটা প্রমাণ করতে সামনে অনেক কাজ করতে হবে।