করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে, স্পেন ও জার্মানির উদ্বেগ
করোনা মহামারিকালে কোনো অবস্থাই যে স্থায়ী নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সংক্রমণের হার মাথাচাড়া দিয়ে বার বার তা দেখিয়ে দিচ্ছে। ইউরোপেও এমন কিছু অঞ্চল দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে। স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদকে ঘিরে গোটা অঞ্চল এবং উত্তরে বাস্ক প্রদেশে পরিস্থিতির অবনতির কারণে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ দুই অঞ্চলে জার্মান নাগরিকদের ভ্রমণ সম্পর্কে সতর্কতা জারি করেছে। গত জুলাই মাসের শেষ থেকেই কাতালোনিয়া ও তৎসংলগ্ন দুই প্রদেশে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছিল জার্মানি। সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে এ খবর জানিয়েছে।
গত সাত দিনের মধ্যে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ৫৯ জনেরও বেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে জার্মানি ভ্রমণ-সংক্রান্ত সতর্কতা জারি করেছে। বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাঁচটি দেশের কিছু অঞ্চল অথবা গোটা দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আপাতত স্পেন, লুক্সেমবুর্গ, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া ও রোমানিয়া সে তালিকায় রয়েছে।
খোদ জার্মানির পরিস্থিতিও উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে। গত মে মাসের শুরুতে দৈনিক সংক্রমণের হার তুঙ্গে ওঠার পর তা আবার কমে আসছিল। এখন আবার সে মাত্রা ছোঁয়ার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, জার্মানিতে দিনে এক হাজার ২২৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। জার্মান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান এমন বৃদ্ধি সত্ত্বেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন। আজ বুধবার এক রেডিও সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, সংক্রমণের হারে রাশ টানতে পারলে ভালো হয়। কারণ সেই সংখ্যা আরো বেড়ে গেলে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
<blockquote class="twitter-tweet"><p lang="en" dir="ltr">Germany has extended its travel warning to two more regions in Spain due to rising infections.<br><br>Madrid and Basque Country have been added to the Spanish regions of Aragon, Catalonia and Navarra.<a href="https://t.co/6C7bE5Ob3A">https://t.co/6C7bE5Ob3A</a></p>— DW News (@dwnews) <a href="https://twitter.com/dwnews/status/1293405097607692288?ref_src=twsrc%5Etfw">August 12, 2020</a></blockquote> <script async src="https://platform.twitter.com/widgets.js" charset="utf-8"></script>
এদিকে বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণের গতি সম্পর্কে নতুন তথ্য উঠে আসছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর এক কোটি মানুষের শরীরে সংক্রমণ ঘটতে প্রায় ছয় মাস সময় লেগেছে। কিন্তু মাত্র ছয় সপ্তাহের মধ্যে সে সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। গত সোমবার পর্যন্ত দুই কোটিরও বেশি মানুষের শরীরে এ ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি মানুষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও ব্রাজিল—এ তিনটি দেশে আক্রান্ত হয়েছে। জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় যাবতীয় তথ্য বিশ্লেষণ করে এ হিসাব প্রকাশ করেছে।
দৈনিক নতুন সংক্রমণের হারের বিচারে আপাতত তালিকার শীর্ষে রয়েছে ভারত। সে দেশে দিনে গড়ে প্রায় ৫৯ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলে সে সংখ্যা যথাক্রমে ৫৪ হাজার ও ৪৪ হাজার। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মতো ধনী ও শক্তিশালী দেশে ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় তা বিস্ময়ের কারণ হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় এক লাখ ৬৩ হাজার মানুষের করোনায় মৃত্যু হয়েছে।
করোনার সংক্রমণ শনাক্ত করার ক্ষেত্রেও বিশ্বজুড়ে সংশয় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও আক্রান্তদের আসল সংখ্যা সম্ভবত ১০ গুণেরও বেশি বলে অনুমান করা হচ্ছে। মার্কিন প্রশাসনের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র বা সিডিসি এমনটা মনে করছে। করোনা পরীক্ষার অপর্যাপ্ত ব্যবস্থার পাশাপাশি হালকা উপসর্গের কারণে চোখ এড়িয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা হিসেবে গরমিলের জন্য দায়ী বলে সিডিসি মনে করছে। অনেক ক্ষেত্রে করোনায় আক্রান্ত হলেও মানুষের মনে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ দেখা দিচ্ছে না।