ট্রাম্প হামলা চালালে ইরানের যেসব ধর্মীয় স্থাপনা হারিয়ে যাবে (ছবিসহ)
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ইরানের ৫২টি স্থাপনায় হামলার হুমকি দিয়েছেন। এমন হামলা চালানো হলে ইরানের ঐতিহ্যবাহী যেসব স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে তার কয়েকটির বিবরণ ও ছবি দিয়ে প্রতিবেদন করেছে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
গত শুক্রবার মার্কিন বাহিনীর হামলায় ইরাকের রাজধানী বাগদাদ বিমানবন্দরে ইরানের কুদস ফোর্সের প্রধান জেনারেল কাসেম সোলেইমানি নিহত হওয়ার পর কঠোর প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দেয় ইরান। ওই হুমকির জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টুইট বার্তায় জানান, তিনি ইরানের সাংস্কৃতিক স্থাপনাসহ দেশটির মোট ৫২টি স্থাপনা চিহ্নিত করেছেন এবং মার্কিন স্বার্থে আঘাত এলে এসব স্থাপনায় হামলা চালানো হবে।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের এসব সাংস্কৃতিক স্থাপনায় হামলা চালালে তালেবান ও আইএসআইএসের সঙ্গে ট্রাম্পের নাম উল্লেখ করতে পারবে ইরান। ২০০১ সালে আফগানিস্তানের ষষ্ঠ শতাব্দীর বুদ্ধের মূর্তি ধ্বংস করে তালেবান। আর ইরাক ও সিরিয়ায় বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস করে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসআইএস।
ট্রাম্পের হুমকিকে যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন বলে পৃথক বিবৃতিতে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। বিবৃতিতে ইরানকে হুমকি দেওয়া বন্ধ করে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান দেখাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ওই দুই সংস্থা।
শেখ লুতফুল্লাহ মসজিদ, ইস্পাহান
সাফাভি রাজবংশের শাসনকালে সাবেক রাজধানী ইস্পাহান শহরে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই রাজবংশ বারো পন্থি শিয়া মতবাদকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এটি মুসলিম ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়। সাফাভি শাসন ১৫০১ থেকে ১৭২২ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এরপর ১৭২৯ থেকে ১৭৩৬ সাল পর্যন্ত সংক্ষিপ্তকালের জন্য তা প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল।
ইমাম রেজার মাজার, মাশহাদ
ইমাম রেজার মাজারসংলগ্ন মসজিদটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মসজিদ হিসেবে বলা হয়। শিয়া মতাবলম্বীদের ১২ ইমামের অষ্টম ব্যক্তি ইমাম রেজার মাজারটি শিয়াদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ধ্বংস করা হলে মুসলিমরা কোনোদিনই তা ক্ষমা করবে না। বছরে আড়াই কোটি লোক মাশহাদে যান বলে জানা যায়।
শাহ চেরাগ মসজিদ, সিরাজ
শাহ চেরাগ মানে হচ্ছে ‘আলোর অধিপতি’। মসজিদটির জ্যামিতিক টেরাকোটা ডিজাইনের আয়নাসদৃশ মোজাইক টাইলস এক পরজাগতিক আলোর খেলা সৃষ্টি করে। শিয়া মতাবলম্বীদের সপ্তম ইমাম মুসা আল কাদিমের দুই ছেলে আহমদ ও মুহাম্মাদের মাজারের মূল আকর্ষণ যে গম্বুজটি সেটি দ্বাদশ শতাব্দীতে নির্মিত হয়।
ভাঙ্ক গির্জা
ইরানের দীর্ঘ খ্রিস্টধর্মীয় ইতিহাস রয়েছে। এ অঞ্চলের তিনটি গির্জা জাতিসংঘের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার তালিকায় রয়েছে। ইস্পাহানের নিকটবর্তী অঞ্চলে আর্মেনিয়রা ভাঙ্ক গির্জা প্রতিষ্ঠা করে। সপ্তদশ শতাব্দীতে উসমানীয়দের সঙ্গে যুদ্ধের পর তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
সি-ও-সে-পল সেতু, ইস্পাহান
ইরানের বিখ্যাত নগরী ইস্পাহানে জায়ানদারুদ নদের ওপরের এই প্রাচীন সেতুটির প্রতি পশ্চিমা পর্যটকদের আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি। এটিও সপ্তদশ শতাব্দীর স্থাপত্যবিদ্যার প্রকৃষ্ট একটি উদাহরণ। সেতুটি যেমন কাজের, তেমনি তার নান্দনিকতা।
দানিয়েল গম্বুজ, সুসা
খ্রিস্টান ও শিয়া মুসলিমদের কাছে নবী হিসেবে স্বীকৃত দানিয়েলর নামে নির্মিত গম্বুজ এটি। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প হয়তো নিজের সবচেয়ে প্রিয় গ্রন্থ বাইবেলও পড়ে দেখেননি। ইরানের সুসা শহরে দানিয়েল সমাহিত আছেন বলে ধারণা করা হয়। দ্বাদশ শতাব্দীতে নির্মিত সরল সুন্দর দানিয়েল গম্বুজ দেখতে এখনো হাজার হাজার দর্শনার্থী ভিড় জমান।
গনবাদ-ই-কবুজ মিনার
একাদশ শতাব্দীর ৫০ মিটার উচ্চতার এই মিনারটিও ইরানি স্থাপত্যশৈলী এবং নির্মাণ নৈপুণ্যের স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। শুধু ইটনির্মিত স্থাপনার হিসেবে এই মিনারটি এখন পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু হিসেবে বিবেচিত হয়।