তেলচালিত গাড়ি নিষিদ্ধ করার পথে এগোচ্ছে ইইউ
চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর নির্ভরতার পরিণাম স্পষ্ট করে দিচ্ছে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার চাপের পাশাপাশি যুদ্ধের বাস্তবতাও ইউরোপকে বিকল্প জ্বালানির দিকে আরও দ্রুত ঠেলে দিচ্ছে।
স্থানীয় সময় বুধবার ইউরোপীয় পার্লামেন্ট একগুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ২৭টি সদস্য দেশের সরকার পরিষদের অনুমোদন পেলে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমানোর স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হবে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে অনুমোদিত একটি প্রস্তাবের খসড়া অনুযায়ী, ২০৩৫ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) এমন কোনো নতুন গাড়ি পথে নামানো যাবে না, যা কার্বন নির্গমন করে। ফলে ইউরোপে কম্বাশচন ইঞ্জিনভরা গাড়ি ও ভ্যানের কার্যত মৃত্যু ঘটবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।
সবুজ দলের কয়েক জন পার্লামেন্ট সদস্য এ প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, ইইউ’র মোট গ্রিনহাউস নির্গমনের ১৫ শতাংশের উৎস সড়ক পরিবহণ। তাঁদের মতে, এ নির্গমন বন্ধ করতে পারলে জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে। খবর ডয়েচে ভেলের।
তবে, ইইউ পার্লামেন্ট শেষ পর্যন্ত যে প্রস্তাবের খসড়া অনুমোদন করেছে, সেটি আসলে মূল লক্ষ্য থেকে কিছুটা দুর্বল। রক্ষণশীল শিবিরের পার্লামেন্ট সদস্যদের চাপে পেট্রোল ও ডিজেল-চালিত পুরানো গাড়ির ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো সম্ভব হয়নি। রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে নির্গমন সংক্রান্ত বাণিজ্যের পরিসরও বাড়ানো সম্ভব হয়নি। পার্লামেন্টে সে প্রস্তাব উত্থাপন করা হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে সেটি অনুমোদন হয়নি। জলবায়ু সংক্রান্ত আরও কয়েকটি প্রস্তাব নিয়েও অগ্রসর হতে ব্যর্থ হয়েছে ইইউ পার্লামেন্ট।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার উদ্দেশ্যে ইইউ’র চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের রূপরেখা এখনও স্পষ্ট নয়। ইইউ সদস্যদেশগুলো পার্লামেন্টের প্রস্তাবে রদবদল চাইতে পারে। তবে, মৌলিক লক্ষ্য এরই মধ্যে স্থির হয়ে গেছে। শুধু সে লক্ষ্য পূরণের পথ নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে।
‘ফিট ফর ফিফটি ফাইভ’ উদ্যোগের আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে নির্গমনের মাত্রা ১৯৯০-এর তুলনায় ৫৫ শতাংশ কমাতে হবে। তারপর ২০৫০ সালের মধ্যে নির্গমন পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে।
পরিবেশ সংরক্ষণের প্রশ্নে ইইউতে রাজনৈতিক বিভাজন ক্রমেই আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বিশেষ করে রক্ষণশীল শিবিরের সঙ্গে সমাজতন্ত্রী ও পরিবেশবাদী সবুজ দলের মতপার্থক্য প্রকট হচ্ছে। ফলে অস্বস্তি সত্ত্বেও দুই শিবিরকে বিভিন্ন প্রশ্নে শেষ পর্যন্ত চরম দক্ষিণপন্থি শক্তির সমর্থনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে দুপক্ষই পরস্পরকে আক্রমণও করছে। ফলে একদিকে, ২৭টি সদস্য দেশের সরকারের নিজস্ব স্বার্থ; অন্যদিকে, বিভিন্ন রাজনৈতিক শিবিরের মধ্যে সংঘাত জলবায়ুর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও ঐকমত্য আরও কঠিন করে তুলছে।