দ্রুত হাঁটার অভ্যাস আয়ু বাড়াতে পারে
হাঁটাচলা করা যে শরীরের জন্য ভালো, সেটা অনেকেরই জানা আছে। বিজ্ঞানীরা এবার মুভমেন্ট সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য বিশ্লেষণ করে দ্রুত হাঁটার আরও উপযোগিতা জানতে পেরেছেন। তাদের মতে দীর্ঘ আয়ুর জন্য সেটা অত্যন্ত জরুরি।
স্টুটগার্ট শহরের এক হাসপাতালের মুভমেন্ট ল্যাবে ব্যস্ততার পরিবেশ। মোবিলিটি গবেষক হিসেবে লার্স শ্ভিকার্ট রোগীদের সঞ্চালনের মাত্রা ও মান যতটা সম্ভব নিখুঁতভাবে পরিমাপ করতে চান। জুতোর মধ্যে প্রেসার সেন্সর পায়ের নীচে চাপ পরিমাপ করে। এভাবে ক্লাউস ব্রেনার নামের এক স্বেচ্ছাসেবীর হাঁটাচলা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তিনি শুরু থেকেই এই গবেষণায় অংশ নিচ্ছেন।
লার্স শ্ভিকার্ট তার সারা শরীরে বেশ কয়েকটি সেন্সর ও রিফ্লেক্টর বসিয়েছেন। দৈনিক ব্যবহারের যোগ্য একটি মাত্র সেন্সরের মাধ্যমে এমন নিখুঁত পরিমাপ সম্ভব কিনা, গবেষক হিসেবে তিনি সেটা জানতে চান। বার্ধক্য বিষয়ক গবেষক ক্লেমেন্স বেকারও ভবিষ্যতে চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে মোবিলিটি বড় বিষয় হয়ে উঠবে বলে মনে করেন। ক্লেমেন্স বেকার বলেন, ‘আমরা চাই, আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে প্রত্যেকটি নতুন ওষুধ অনুমোদনের ক্ষেত্রে মোবিলিটির উন্নতি অথবা অবনতির বিষয়টিও যেন বিবেচনা করা হয়। বর্তমানে আমরা সেটা জানি না।’
সঞ্চালনের এমন প্যাটার্ন তথ্যের উৎস হয়ে উঠবে, এমনটা আশা করা হচ্ছে। কোনো রোগীর স্বাস্থ্যের অবস্থা, চিকিৎসার সাফল্য, ওষুধের কার্যকারিতার বিশ্লেষণ অথবা রোগের বিকাশের উপর নজর রাখার ক্ষেত্রে সেই সব তথ্য কাজে লাগবে। ক্লেমেন্স বেকার বলেন, ‘আমরা হাঁটার গুণমান পরিমাপ করতে পারি। যেমন হাঁটার ছন্দে অনিয়ম থাকলে সেটিকে আমরা গেট ভেরিয়েবিলিটি বলি। অথবা কেউ যদি নিজের জয়েন্টের উপর চাপ এড়াতে খুঁড়িয়ে চলে, সেটা আর্থ্রোসিস বা ভাঙা হাড়ের লক্ষণ হতে পারে।’
বিজ্ঞানীরা সত্যি একটি মাত্র সেন্সরের মাধ্যমে কোনো মানুষের জটিল সঞ্চালন পরিমাপ করতে সফল হয়েছেন। সেটির মাধ্যমে দিনের পর দিন ধরে কোনো রোগী বা ক্লাউস ব্রেনারের মতো স্বেচ্ছাসেবীর মুভমেন্ট ডেটা বিশ্লেষণ করা সম্ভব। ক্লাউস বলেন, ‘বয়স বাড়লে সঞ্চালন আসলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা জানি, স্নায়বিক অর্থাৎ মস্তিষ্কের ক্রিয়ার উপর এর গভীর প্রভাব রয়েছে। তাছাড়া আরও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ হয়। সব জগারই সেটা বলেন। এন্ডোরফিন হরমোনের কারণে মানুষ কিছু করলে আরও খুশি হয়। সে কারণে আমিও খুশিমনে এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি।’
ক্লেমেন্স বেকার ও লার্স শ্ভিকার্ট সারা সপ্তাহ ধরে সেন্সরের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে একটা চিত্র পাচ্ছেন। সেই সেন্সর তিনটি স্পেশিয়াল অ্যাক্সিসের সবকটির সঞ্চালন নথিভুক্ত করেছে এবং মোশান কার্ভও সৃষ্টি করেছে। সেই লক্ষ্যে আলাদা করে তৈরি অ্যালগোরিদম সেই সব তথ্য ঘেঁটে হাঁটার সময় গতি, পরিমাণ, ভেরিয়েন্স, দৈর্ঘ্য ও সিমেট্রি সংক্রান্ত বিষয় তুলে ধরেছে। রোগী সারা দিনে আদৌ কতটা সঞ্চালন করেন, কোন সময়ে এবং কতক্ষণ হেঁটেছেন, সাইকেল চালিয়েছেন অথবা সিঁড়ি চড়েছেন, সে সব স্পষ্ট দেখা যায়। এমনকি সঞ্চালনের গুণমান অথবা চলার সময় প্রতিবন্ধকতাও নথিভুক্ত করা হয়।
এক আন্তর্জাতিক কনসর্টিয়াম ‘মোবিলাইজ ডি' নামের প্রকল্পের আওতায় সে বিষয়ে গবেষণা চালাচ্ছে। সমাজে বয়স্ক মানুষের অনুপাত বেড়ে চলার পরিপ্রেক্ষিতে মোবিলিটি সংক্রান্ত তথ্য নতুন ওষুধ ও থেরাপি সৃষ্টির কাজে সহায়তা করতে পারবে। ক্লেমেন্স বেকার বলেন, ‘আমরা জানি, যে সব মানুষ সেকেন্ডে এক দশমিক দুই মিটারের চেয়ে বেশি দ্রুতগতিতে হাঁটে, তাঁদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা যথেষ্ট বেশি। যম তার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে না। আমরা জানি, যে সব মানুষ ধীরে চলে, সেকেন্ডে শূন্য দশমিক আট মিটার অতিক্রম করে, সে যমের পাল্লায় পড়তে পারে। অর্থাৎ এক অর্থে গতি এমনকি কোলেস্টরল বা রক্তচাপের মাত্রার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশাল পরিমাণ তথ্য তা স্পষ্ট দেখিয়ে দিচ্ছে। সে কারণে মুভমেন্ট ভীষণ জরুরি।’
অর্থাৎ আমাদের সবার সচল থাকা উচিত এবং সম্ভব হলে এই দুই মানুষের মতো দ্রুত গতিতে হাঁটা উচিত।