ধূমপান-তামাক-গুল ছাড়ার হারে নারীদের চেয়ে এগিয়ে পুরুষেরা

নারীদের থেকে পুরুষেরাই ক্রমগতভাবে তামাক ব্যবহার কমিয়ে আনছেন বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা। আজ বুধবার (২৩ এপ্রিল) বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) শহীদ ডা. মিল্টন হলে ‘বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের প্রবণতা ও পূর্বাভাস (ডিসিমিনেশ অব রিসার্চ ফাইন্ডিং: ট্রেন্ডস ইন টোবাকো ইউজ ইন বাংলাদেশ (২০২৯-২০২২) উইথ প্রজেকশনস টু ২০৩০)’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণে এ তথ্য জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের হার হ্রাস পেলেও ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এখনও চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে তামাকের ব্যবহার বিগত ১৩ বছরে হ্রাস পেলেও ২০৩০ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন চ্যালেঞ্জিং হবে।
গবেষণা ও বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০০৯ সালে বাংলাদেশিদের তামাক ব্যবহার (ধূমপান ও ধোঁয়াবিহীন) ৫৪ শতাংশ থেকে কমে ২০২২ সালে ৪৭ শতাংশে নেমেছে। যাদের বয়স ২৫-৬৯ বছর। এর মধ্যে ধূমপানের হার ২৭ শতাংশ থেকে ২২ শতাংশ, ধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহার ৩৬ শতাংশ থেকে ৩১ শতাংশ। আবার শহরের তুলনায় গ্রামে তামাক ব্যবহার কমেছে। তবে শহর অঞ্চলে হ্রাসের হার বেশি। এদিকে নারী-পুরুষ হিসেবে নারীদের চেয়ে পুরুষেরা তামাক ব্যবহার কমিয়েছে।
আনুষ্ঠানে বিএমইউ-এর প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, তামাক ব্যবহার (ধূমপান ও ধোঁয়াবিহীন) এই দুটোই বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির জন্য দায়ী এবং উদ্বেগজনক। এই ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে গণ মানুষকে সম্পৃক্ত ও সচেতন করতে হবে। গণমাধ্যম এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তামাক ব্যবহারের মাত্রা ও ঝুঁকি শহর ও গ্রাম পর্যায়ে আলাদাভাবে তুলে ধরা জরুরি। বিভিন্ন কমিউনিটির মধ্যে তামাকের ব্যবহার কেমন তাও তুলে ধরা যেতে পারে। ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারে তরুণরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা নিয়েও ভাবতে হবে।
তথ্য বিশ্লেষণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এনসিডি (অসংক্রামক রোগ) প্রতিরোধ রোডম্যাপ অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে তামাক ব্যবহার ৩০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্য অর্জন করতে হলে বর্তমান নীতিমালার গতি দ্বিগুণ করতে হবে। ২০০৯-২০২২ সালের প্রবণতা বিশ্লেষণে দেখা যায়, বর্তমান হারে তামাক ব্যবহার কমলে ২০৩০ সালে হার দাঁড়াবে প্রায় ৪২ শতাংশ, যা কাঙ্খিত লক্ষ্যের চেয়ে বেশি।
সুপারিশ সমূহের মধ্যে রয়েছে- তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি জোরদার করে বর্তমান হ্রাসের হার ত্বরান্বিত করতে হবে। ব্যবহারিক গবেষণা পরিচালনা করা প্রয়োজন, বিশেষ করে নীতি ও আইনের দিকে বিশেষ নজর দিয়ে, যাতে অপর্যাপ্ত হ্রাসের কারণ চিহ্নিত করা যায়। সর্বশেষ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল ২০২২ সালে। অতএব, দ্রুত আরেকটি জরিপ করা প্রয়োজন, সম্ভব হলে ২০২৫-২০২৬ সালের মধ্যে।
বিশেষজ্ঞদের মন্তব্যে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘তামাক ব্যবহার হ্রাসে বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রশংসনীয়, তবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে আরও কঠোর নীতি ও সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন। ধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহার কমাতে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার।
প্রধান অতিথি ছিলেন- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটি জার্নালের এক্সিকিউটিভ এডিটর অধ্যাপক ড. এম মোস্তফা জামান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম-সচিব (বিশ্ব স্বাস্থ্য) মো. মামুনুর রশিদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএমইউ এর প্রিভেনটিভ এ্যান্ড সোশাল মেডিসিন অনুষদের ডিন ও পাবলিক হেলথ এ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আতিকুল হক।