নদীর বুকে অতীতের চিত্রকর্মের আধুনিক রূপ
বিখ্যাত শিল্পীর এক পেইন্টিংকে সমসাময়িক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যাখ্যার প্রচেষ্টা সহজ নয়৷ নেদারল্যান্ডসে এক উৎসবে ঠিক সেটাই করা হয়৷ এমনকি, নৃত্যশিল্পী ও পারফর্মাররাও তাতে অংশ নেন৷ ডেন বসের ডমেল নদীর ওপর ভাসমান শিল্পকীর্তির প্যারেড চলছে৷ পানির ওপর সৃষ্টি হচ্ছে নাটকীয় পরিবেশ।
আয়োজকরা ১৯ জন শিল্পীকে বেছে নিয়ে এই নিয়ে ১৯ বার দর্শকদের সামনে বস প্যারেড তুলে ধরেছেন৷ হাইরোনিমাস বশের একটি পেইন্টিং থেকে প্রেরণা নিয়ে সবকটি শিল্পকীর্তি সৃষ্টি করতে হয়েছিল৷
বস প্যারে়ডের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর মিসইয়েল ফান খ্যারভেন বলেন, ‘আমরা গোটা বিশ্বের শিল্পীদের উদ্দেশে খোলাখুলি আহ্বান জানিয়েছিলাম৷ আমরা তাঁদের কিছু প্রেরণা, নথিপত্র ও পেইন্টিং সম্পর্কে কিছু খুঁটিনাটি তথ্য দিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম, বর্তমান যুগে তাঁরা সেটি সম্পর্কে কী ভাবছেন? যেমন ‘বার্নিং সিটি’ ছবির সে যুগে কী অর্থ ছিল এবং বর্তমানে সেটির তাৎপর্য কী? বর্তমান বিশ্বে কোন জ্বলন্ত বিষয় রয়েছে?’
ভবিষ্যতে কোন বিষয় অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠবে, সেটাই এই সৃষ্টির নেপথ্যে নেদারল্যান্ডসের শিল্পীদের বিবেচ্য বিষয় ছিল৷ শিল্পী হিসেবে টাইস ট্রম্পার্ট মনে করেন, ‘বশ প্যারেডের ইনস্টলেশনের উদ্দেশ হল্যান্ডের ভবিষ্যৎ তুলে ধরা৷ কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানি দ্রুত চলে আসবে এবং আমাদের যা কিছু আছে, তা উদ্ধার করতে হবে৷ ল্যান্ডস্কেপ ভাসমান করে তুলে সরে যাবার প্রস্তুতি নিতে হবে৷’
মারিসিয়া স্মিটও শিল্পী হিসেবে প্যারেডে অংশ নিয়েছেন৷ তিনি মনে করেন, ‘ভবিষ্যতে আমাদের প্রকৃতি রক্ষা করতে হবে৷ এই সব বাল্বের মধ্যে বিশেষ বায়ুমণ্ডল রয়েছে৷ বেড়ে চলা জলসীমা ও দূষিত বায়ু থেকে বিশেষ গাছপালা উদ্ধার করতে হবে৷’
স্থানীয় মানুষ রুটের প্রায় যে কোনো জায়গা থেকে বিনামূল্যে বস প্যারেড দেখতে পারেন৷ দর্শকরা চাইলে মাশুলের বিনিময়ে চারটি প্যারেড টেরেসের কোনো একটিতে বসতেও পারেন৷ হাইরোনিমাস বশের বাসভূমি নেদারল্যান্ডের সের্তোখেনবস শহর, যা ডেন বস নামে পরিচিত৷ প্যারেড উপলক্ষ্যে সেখানকার আর্ট সেন্টারে রেনেসাঁস যুগের এই শিল্পীর সৃষ্টিকর্ম শোভা পাচ্ছে৷ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ইয়োশুয়া ক্লাপে বলেন, ‘এই লোগো নিয়ে খেলার সময় আমরা এই কাঠামো গড়ে তুললাম, যা অক্টোপাসের বিশাল শুঁড়ের মতো দেখতে৷ সেটা দিয়ে দর্শকদের চোখে ফাঁকি দিতে পারি৷’
শুধু ভিসুয়াল আর্টিস্টরাই নিজেদের সৃষ্টিকর্ম তুলে ধরেননি, এমনকি নৃত্যসহ অন্যান্য শিল্পশাখার প্রতিনিধিরাও অংশ নিয়েছেন৷ যেমন সুইজারল্যান্ডের আনা সুয়রকিয়র্শেন ও নেদারল্যান্ডসের সেলিন ভ্যার্কহোফেন পারফর্মার হিসেবে আরও কয়েকজন নৃত্যশিল্পীর সঙ্গে মিলে সেই পেইন্টিংয়ের নিজস্ব ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন৷ আনা বলেন, ‘নৃত্যশিল্পী হিসেবে আমরা শারীরিক পটভূমি থেকে এসেছি৷ তাই আমরা এই শিল্পকীর্তির শারীরিক তর্জমা থেকে প্রেরণা পাই৷ শরীরগুলি যেন প্রাণীদের এক পরাবাস্তব মিশ্রণ৷ আমরা তাই সেই ভাবনাকে শিল্পকীর্তি এবং পানির ওপর পারফরমেন্সে রূপান্তরিত করার পথ খুঁজছি৷’
সেলিন ভ্যার্কহোফেন নিজেদের সৃষ্টির ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘দুটি চরিত্র প্রলোভন দেখিয়ে, ছলেবলে মানুষকে পানি থেকে টেনে তোলে৷ তারা হয়ত ডুবন্ত বা হারিয়ে যাওয়া মানুষ৷ আমরা তাদের কাছে টেনে নিতে চাই বটে, কিন্তু সেই চেষ্টা অর্থহীন৷ তারা পাড়ে ওঠার চেষ্টা করলেই আমাদের সেই পাড় ডুবে যায় এবং তারা আবার পানিতে তলিয়ে যায়৷’
বন্দরে চূড়ান্ত দৃশ্যের পর প্রায় দুই ঘণ্টার প্যারেডের সমাপ্তি ঘটল৷