রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা ডাচ প্রধানমন্ত্রীর
অভিবাসন ইস্যুতে মাত্র দেড় বছরের মাথায় পতন হয়েছে নেদারল্যান্ডসের ক্ষমতাসীন জোট সরকারের। এর রেশ না কাটতে না কাটতেই রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে। দেশটির ইতিহাসের সর্বোচ্চ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা এই প্রধানমন্ত্রী আজ সোমবার (১০ জুলাই) এই ঘোষণা দিয়েছে। খবর এএফপির।
২০১০ সাল থেকে নেদারল্যান্ডের চারটি জোট সরকারের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে মার্ক রুটে। এই প্রধানমন্ত্রী জানান, নভেম্বরে প্রত্যাশিত নির্বাচনের পরে তিনি রাজনীতি থেকে পদত্যাগ করবেন।
নেদারল্যান্ডের সংসদে মার্ক রুটে বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগত কিছু বলতে চাই। গত কয়েকদিনে যা হয়েছে তা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। জবাব একটাই, সবার আগে নেদারল্যান্ড। গতকাল সকালে, আমি সিদ্ধান্তটি নিয়েছি। আমি ভিভিডি পার্টির নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য উপযুক্ত নয়। নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসলেই আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব।’
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীত্বের দায়িত্ব পালন করেছেন হাঙ্গেরির ভিক্টর ওরবান। এই তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রুটে বলেন, ‘গত সপ্তাহে যা হয়েছে তা থেকে মুক্ত হতে ব্যক্তিগতভাবে আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
প্রতিবেদনে এএফপি জানিয়েছে, রুটের এই সিদ্ধান্ত সবাইকে হতবাক করেছে। কারণ, গত শুক্রবারও এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি পঞ্চমবারের মতো ক্ষমতায় বসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে বড় কোনো কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত না হওয়া রুটে নভেম্বরে হওয়া নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবেন। এমনকি, ক্ষমতা হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত বর্তমান মন্ত্রিসভার মন্ত্রীরা কাজ চালিয়ে যাবেন।
এদিকে, রুটে যেন নির্বাচনের সময় বা এর আগ পর্যন্ত ক্ষমতায় না থাকতে পারে সেজন্য আজ নেদারল্যান্ডের পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হবে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীকে তার আসন শিগগিরই সরানোর জন্যই এই ভোটাভুটি করা হচ্ছে। দুই বামপন্থী পার্টি ও ইসলাম বিরোধী নেতা গ্রিট উইলডার্স রুটের ওপর অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করেছে। ডাচ গণমাধ্যমগুলো বলছে, এই অনাস্থা প্রস্তাব পাসের জন্য রুটের জোট সরকারের একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থন দরকার, যেই জোট সরকারের পতন হয়েছিল গত শুক্রবার।
রাজনৈতিক পার্টি গ্রিয়নলিঙ্কস (গ্রিন পার্টি) রুটেকে উৎখাত করতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। দলটির নেতা জেসে ক্লাভার বলেন, ‘রুটে নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থের জন্যই সরকারের পতন হয়েছে। এর জন্যই রুটের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছে গ্রিয়নলিঙ্কস ও পিভিডিএ (লেবার পার্টি)। নির্বাচনের আগেই প্রধানমন্ত্রী সরে যাক, এমনটাই চাচ্ছে তারা।’
অভিবাসন ইস্যুতে নেতিবাচক বক্তব্য দিয়ে পরিচিতি পাওয়া গ্রিট উইলডার্স বলেন, ‘বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীকে চলে যেতে বাধ্য করা যেতে পারে। আমরা সেই চেষ্টা করব।’
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পরিবারদের একত্রিত হওয়া রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে চেয়েছিলেন রুটে। এর জেরেই গত শুক্রবার পতন হয় চারদলীয় জোটের। রুটের বিপক্ষে ছিল জোট সরকারের ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও ডেমোক্রেসি৬৬ রাজনৈতিক দলের নেতারা।