পশ্চিমবঙ্গে কালবৈশাখীর তাণ্ডবে নিহত ৮
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2023/05/16/pshcimbngge-kaalbaishaakhii.jpg)
কালবৈশাখী ঝড়ের মাত্র তিন মিনিটের তাণ্ডবে পুরো বেহাল অবস্থা পশ্চিমবঙ্গের। এতে বিভিন্ন জেলায় মারা গেছেন আটজন।
গতকাল সোমবার (১৫ মে) বিকেল ৫টা নাগাদ মাত্র তিন মিনিটের জন্য প্রবল ঝড় হয়। বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮৪ কিলোমিটার। তাতেই প্রচুর গাছ উপড়ে পড়েছে, ঘরের টিনের ছাদ উড়ে গেছে, বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। বেশ কয়েকঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। ভয়ঙ্কর গরমের হাত থেকে মানুষ রক্ষা পেয়েছেন বটে, কিন্তু তার জন্য প্রচুর মূল্য দিতে হলো। ঝরে পড়ল আটজনের প্রাণ।
কলকাতা, হাওড়া, দুই ২৪পরগনা, দুই মেদিনীপুরে ঝড়ের তাণ্ডব ছিল সবচেয়ে বেশি। হাওড়ায় তিনজন, ব্যারাকপুরে দুজন, দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে একজন করে মানুষ মারা গেছেন। কলকাতায় গাড়ির ওপর গাছ পড়েছে। ট্রেনের লাইনের ওপর গাছ পড়েছে। রাস্তায় গাছ পড়েছে। রেলের ওপর টিনের চালা এসে পড়ায় বেশ কিছু সময় ট্রেন চলেনি।
ব্যারাকপুরে দুটি দুঃখজনক ঘটনায় দুজন মারা গেছেন। ২১ বছর বয়সি কৌশিক ঢালি মধ্যমগ্রামের এক তরুণীর সঙ্গে ব্যারাকপুরে মঙ্গল পাণ্ডে উদ্যানে একটি কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে গল্প করছিলেন। এমন সময় ঝড় ওঠে। গাছটাই ভেঙে পড়ে যায়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে কৌশিক মারা যায়। তরুণীর আঘাতও গুরুতর।
ব্যারাকপুরেই অরুণ বিশ্বাস ও তার স্ত্রী সরস্বতী বাড়ির কাছে একটি দোকানে গিয়েছিলেন। এমন সময় একটি নারকেল গাছ তাদের ওপর ভেঙে পড়ে। ঘটনাস্থলে সরস্বতীর মৃত্যু হয়। অরুণ মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন।
হাওড়ায় পি কে রায় চৌধুরী লেনে ঝড়ের পর একটি বিদ্যুতের তার ছিড়ে ঝুলতে থাকে। সেই তার গায়ে লাগার পরই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ১২ বছর বয়সী খুশবু যাদব মারা যায়। তাকে বাঁচাতে গিয়ে একজন হোমগার্ড গুরুতরভাবে আহত হন। বাগনানে গাছচাপা পড়ে মারা গেছেন রজনী প্রসাদ। ছোট আমসা গ্রামে ঘর চাপায় মারা গেছেন ৬৫ বছরের রামচন্দ্র মণ্ডল।
পূর্ব মেদিনীপুরে কোলাঘাটের কাছে ঝড়ে বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে যায়। তাতে আশরাফ খান মারা যায়। এছাড়া বেলপাহাড়িতে গাছ পড়ে সনকা মহন্ত এবং বাজ পড়ে মালতী মুর্মু মারা গেছেন।
বিমান চলাচল ব্যহত
ঝড়ের সময় প্রায় ঘণ্টাখানেক বিমান চলাচল ব্যাহত হয়। ওই সময় বাংলাদেশ থেকে আসা একটি বিমান কলকাতায় নামতে না পেরে বাংলাদেশ ফিরে যায়। দিল্লি, সুরাত, চেন্নাই থেকে আসা চারটি বিমান রাঁচি ও ভুবনেশ্বর চলে যায়। পরে আবার সেই বিমানগুলো কলকাতায় আসে। ঝড়ের সময় কলকাতা থেকেও ১২টি বিমান উড়তে পারেনি।
ট্রেন চলাচল বন্ধ
কালবৈশাখী হয়েছে সোমবার বিকেল ৫টা নাগাদ। তারপরেই হাওড়া ও শিয়ালদহ ডিভিশনের প্রচুর জায়গায় ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। কোথাও এক ঘণ্টা পর তা স্বাভাবিক হয়। কোথাও ট্রেন চলাচল শুরু করতে রাত ৯টা বেজে যায়।
দম দম স্টেশনের কাছে, শিয়ালদহ-বজবজ, শিয়ালদহ-লক্ষ্মীকান্তপুর, নৈহাটি শাখা, হাওড়া-বর্ধমান লাইনে বিভিন্ন জায়গায় হয় লাইনে গাছ পড়ে যায়, অথবা বিদ্যুতের তারের ওপর গাছ পড়ে, দমদমে রেললাইনে টিনের চাল এসে পড়ে বলে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে অফিস-ফেরত মানুষ প্রবল অসুবিধার মধ্যে পড়েন।
কলকাতায় মেট্রে রেল ঝড়ের পর কিছুটা দেরিতে চললেও কিছুক্ষণ পর তা স্বাভাবিক হয়ে যায়।
বিদ্যুৎ নেই
বিভিন্ন জায়গায় ঝড়ের পর হয় বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গেছে অথবা বিদ্যুতের লাইনের ওপর গাছ পড়েছে। তার জেরে দীর্ঘক্ষণ বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ ছিল না।
কাকদ্বীপ, বর্ধমান, দুর্গাপুর, আসানসোল, রানিগঞ্জে অনেকক্ষণ বিদ্যুৎ ছিল না। কলকাতাতেও অনেক গাছ পড়েছে। তার জেরে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল।
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে বলা হয়, এই সপ্তাহজুড়েই ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে। আগামী বৃহস্পতিবার (১৭ মে) পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।