প্রাকৃতিক দুর্যোগে গত বছর দক্ষিণ এশিয়ায় সোয়া কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত
জেনেভাভিত্তিক অভ্যন্তরীণ স্থানচ্যুতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (আইডিএমসি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ২০২২ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। গত বছর বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে বন্যায় সবচেয়ে বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রতি বছর দক্ষিণ এশিয়ার বড় ধরনের অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি দেখা দেয় এবং ২০২২ সালেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ মানুষ এই ধরনের বাস্তুচ্যুতির শিকার বলে রেকর্ড করা হয়েছে। এ সংখ্যা গত এক দশকে বার্ষিক গড় বাস্তুচ্যুতি ৬৩ লাখের প্রায় দ্বিগুণ।
প্রতিবেদনটি জানায়, ব্যাপক বন্যার কারণেই এত বিপুল লোক বাস্তুচ্যুত হয়। পাকিস্তানে বর্ষা মৌসুমে এই ঘটনা ঘটে। সংঘাত ও সহিংসতার কারণে ৩৫ হাজার লোক বাস্তুচ্যুত হয়। সহিংসতার কারণে বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ২০২১ সালের চেয়ে এ বছর ৯৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। আফগানিস্তানে সংঘাত বন্ধ হওয়ার ফলেই এমনটা ঘটেছে। ঐতিহাসিকভাবে এই অঞ্চলে সংঘাতজনিত কারণে বাস্তুচ্যুতির জন্য সর্বাধিক দায়ী আফগানিস্তান।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বছরের শেষ পর্যন্ত প্রায় ৮৮ লাখ মানুষ দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত অবস্থায় বাস করছিল। এর মধ্যে ৫৫ লাখ সংঘাত ও সহিংসতার ফলে এবং ৩৩ লাখ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে।
বন্যাজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ২০২২ সালে এই অঞ্চলে ৯০ শতাংশ বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটে। তবে এই অঞ্চলের মধ্যে পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এই অঞ্চলের বেশির ভাগ দেশে জন্য মৌসুমী বৃষ্টি স্বাভাবিক বা গড় থেকে কম ছিল। পাকিস্তান অবশ্য এর ব্যতিক্রম ছিল। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যার ফলে দেশটির ১০ শতাংশ এলাকা পানির নিচে চলে যায় এবং এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
২০২২ সালে বন্যার কারণে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি বাস্তুচ্যুতি ঘটে। এই বন্যা দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলেছে। এটি বাস্তুচ্যুত লোকদের মধ্যে রোগের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অবকাঠামো, কৃষি ও জীবিকার ক্ষতির কারণে লাখ লাখ মানুষের জন্য খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং দারিদ্রতা বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগটির কারণে বহু মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বাস্তুচ্যুত ছিল।
ভারত ও বাংলাদেশ বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই বন্যার সম্মুখীন হয়, যা সাধারণত জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে চলে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম মে মাসের প্রথম দিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং জুন মাসে আবারও একই এলাকা প্লাবিত হয়। ওই সময়ে রাজ্যজুড়ে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ওই বছরের মে থেকে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আগাম বন্যার ফলে প্রায় সাত লাখ ৪২ হাজার মানুষকে স্থানান্তরিত হতে হয়। মে মাসে ভারতে প্রবল ভারী বর্ষণের কারণে প্রতিবেশী বাংলাদেশের নদীগুলো উপচে পড়ে হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলাকে প্লাবিত করে। এতে প্রায় পাঁচ হাজার ৫০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
উভয় দেশে বর্ষা মৌসুমের বাকি সময়ে বৃষ্টিপাত ও বন্যা স্বাভাবিক বা গড়ের চেয়ে কম ছিল। জুলাইয়ে ভারতের কিছু অংশে ১২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া গেছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশে মৌসুমী বন্যায় অন্তত চার লাখ ৮২ হাজার লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। বন্যার কারণে রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আশ্রয়কেন্দ্র ও ত্রাণ শিবিরগুলোতে ত্রাণ সহায়তা সরবরাহে একটি বড় বাধা ছিল পর্যাপ্ত নৌকার ঘাটতি।