বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী সৌদি আরব : বিনিয়োগমন্ত্রী
বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ রয়েছে উল্লেখ করে সৌদি বিনিয়োগ মন্ত্রী খালিদ আল ফালিহ বলেছেন, ‘বাংলাদেশে আরও বেশি সৌদি বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।’
গত রোববার সৌদি বিনিয়োগ মন্ত্রী সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠককালে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বৈঠকে সালমান এফ রহমান বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো বর্ণনা করেন। পাশাপাশি সৌদি বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্ধারণ করার প্রস্তাব দেন। সৌদি বিনিয়োগ মন্ত্রী বাংলাদেশের এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানান।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্ব ব্যবস্থায় সৌদি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে খসড়া সমঝোতা স্মারকটি চূড়ান্ত করার জন্য অনুরোধ করেন।
সালমান এফ রহমান বলেন, ‘সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষরিত হলে বাংলাদেশের অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে সৌদি বিনিয়োগের সুযোগ প্রসারিত হবে।’
এ সময় সৌদি বিনিয়োগ মন্ত্রী বলেন, ‘সমঝোতা স্মারকটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং তা দ্রুত স্বাক্ষর হবে।’
আলোচনাকালে সৌদি মন্ত্রী বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল, খাতভিত্তিক বিনিয়োগ বিষয়ে সহযোগিতা চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রতিনিধি দল বিনিময়ের গুরুত্ব তুলে ধরে সৌদি বিনিয়োগ মন্ত্রীকে আগামী নভেম্বরের ২৮ ও ২৯ তারিখে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের অনুরোধ জানালে মন্ত্রী খালিদ আল ফালিহ তা সাদরে গ্রহণ করেন।
এর আগে রোববার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সৌদি আরবের পরিবহণ মন্ত্রী সালেহ আল জাসের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তিনি চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় নির্মাণাধীন কনটেইনার টার্মিনালে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল কোম্পানির বিনিয়োগ প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। পাশাপাশি তিনি ঢাকা থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণে সৌদি বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেন।
সালমান এফ রহমান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের পরিবহণ খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা যেতে পারে। এ সমঝোতা স্মারকের অধীনে দক্ষতা বিনিময়, প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতার সম্ভাব্য ক্ষেত্রসমূহ অনুসন্ধান করে দেখা যেতে পারে।’
এ সময় সৌদি পরিবহণ মন্ত্রী তাঁর মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান রিয়াদ চেম্বার অব কমার্সের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সৌদি আরবে পাঁচ বার সরকারি সফরের মাধ্যমে সৌদি বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের নতুন দ্বার উম্মোচিত হয়েছে।’
সালমান এফ রহমান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ সৌদি বিনিয়োগকারীদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সব সহযোগিতা নিশ্চিত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সৌদি-বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি ও বাংলাদেশে বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। বর্তমানে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের এক দশমিক তিন বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়ে থাকে উল্লেখ করে তা আরও বাড়ানোর ওপর তিনি জোর দেন।
বাংলাদেশের বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, ‘ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা এখনো অব্যাহত রয়েছে, যা বাংলাদেশকে রপ্তানি সুবিধা দিচ্ছে।’
উপদেষ্টা দুই দেশের চেম্বার কর্মকর্তাদের পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য দ্বিপাক্ষিক সফর ও বৈঠকের ওপর গুরুত্ব দেন। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সঙ্গে সৌদি আরব সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি অনুরোধ করেন।
পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা দুই দেশের চেম্বার অব কমার্সের মধ্যে ২০০৫ সালে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকটি সংশোধনপূর্বক যুগোপযোগী করার প্রস্তাব দিলে সৌদি ফেডারেশন অব চেম্বার তাঁদের আগ্রহ প্রকাশ করেন। বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী সৌদি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে তাঁদের সন্তোষ প্রকাশ করেন।
উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সভাগুলোতে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও, বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সদস্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন ও বাংলাদেশ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সচিব) সুলতানা আফরোজসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সৌদি চেম্বারের সঙ্গে বৈঠকের সময় বাংলাদেশ থেকে আগত ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।