বিক্ষোভে উত্তপ্ত ভারত, চলছে ব্যাপক ধরপাকড়
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে উত্তাল ভারত। চলছে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘাত। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গতকাল শুক্রবার ফের বিক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে বিভিন্ন রাজ্যে। ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দেওয়াকে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের মূল কাঠামোর পরিপন্থী দাবি করে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে মানুষ। রাজধানী নয়াদিল্লিতেও বিক্ষোভে যোগ দেয় হাজারো মানুষ। এরই মধ্যে উত্তরপ্রদেশে পুলিশের গুলিতে ছয়জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বিজনরে দুজন, শম্ভলে একজন, ফিরোজাবাদে একজন, মেরুতে একজন ও কানপুরে একজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ভারতজুড়ে চলছে ব্যাপক ধরপাকড়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে।
ভারতের অন্যান্য রাজ্যের পাশাপাশি শুক্রবার সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়েছে নয়াদিল্লি ও উত্তরপ্রদেশে।
নয়াদিল্লি
জুমার নামাজের পর বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে দিল্লির জামে মসজিদ প্রাঙ্গণ। পরে দিল্লি জামে মসজিদ থেকে বিক্ষুব্ধ জনতা একটি পদযাত্রা নিয়ে দিল্লির যন্তরমন্তর অভিমুখে যাত্রা করে।
দিল্লি জামে মসজিদের প্রধান গেট থেকে দলিত নেতা ও ভিম আর্মির প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদকে আটক করে পুলিশ। পুলিশি হেফাজত থেকে পালিয়ে আবারো বিক্ষোভ সমাবেশের নেতৃত্ব দেন তিনি। সমাবেশে অংশ নেওয়া হাজারো জনতার স্লোগানে বিজেপি এবং নতুন আইন বিরোধী বক্তব্য স্থান পায়।
বিক্ষোভকারীরা জানায়, এই প্রতিবাদ মোদি-অমিত শাহের বিরুদ্ধে। ভারতের সব ধর্মের মানুষ নতুন আইন প্রত্যাখ্যান করেছে। এ ছাড়া সরকার তাদের ওপর বল প্রয়োগ করছে বলেও অভিযোগ বিক্ষোভকারীরদের। মোদি ও অমিত শাহের হিটলারি আচরণের জবাব দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয় বিক্ষোভকারীরা।
বিক্ষোভকারীরা আরো জানায়, বিজেপি একটি ধর্মের মানুষকে বাইরে রেখে আইন করেছে। অন্যদের নাগরিকত্ব দিচ্ছে। এটা সাম্প্রদায়িক আইন এবং রাজনীতি। বহুত্ববাদের ভারতে এর কোনো স্থান নেই।
এদিকে দিল্লির জামে মসজিদের সামনের রাস্তা বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এ ছাড়া মসজিদের প্রধান গেট থেকে অনেককে আটক করা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় কয়েকটি মেট্রো স্টেশনও।
এদিকে গতকাল সকালে বিরোধীদল কংগ্রেসের নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বাসভবনের বাইরে বিক্ষোভ হয়। সেখান থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে এবং দিল্লি নারী কংগ্রেসের সভাপতি শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়সহ অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারীকে আটক করে পুলিশ।
উত্তরপ্রদেশ
শুক্রবারও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে উত্তাল ছিল উত্তরপ্রদেশ। ১৪৪ ধারা ভেঙে বিক্ষোভে নামে হাজারো জনতা। পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পুরো রাজ্য। বিক্ষোভ দমনে ব্যাপক অভিযান চালায় পুলিশ। এরই মধ্যে এই রাজ্যে পুলিশের গুলিতে ছয়জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বিজনরে দুজন, শম্ভলে একজন, ফিরোজাবাদে একজন, মেরুতে একজন ও কানপুরে একজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে তিন হাজারেরও বেশি আন্দোলনকারীকে আটক করেছে পুলিশ।
উত্তরপ্রদেশ ছাড়াও বিশাল বিক্ষোভ হয়েছে কর্ণাটক, হায়দরাবাদ ও চেন্নাইয়ে। চলে ব্যাপক ধরপাকড়ও। বিক্ষোভ ঠেকাতে পুরো ভারতের বিভিন্ন শহরে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়।
রাজ্যের বিক্ষোভকারীদের দাবি, তরুণদের চাকরি দিতে পারেনি বিজেপি সরকার। তারা সাম্প্রদায়িক আইনের মাধ্যমে অস্থিরতা তৈরি করেছে। ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্যমূলক নীতি প্রয়োগ করছে। তা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। ধর্মনিরপেক্ষ ভারত চায় বিক্ষোভকারীরা।
মমতা
নতুন আইনের মাধ্যমে বিজেপি ভারতের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করছে অভিযোগ করে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) বিরুদ্ধে সারা বাংলায় আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে নাগরিকত্ব আইনকে কেন্দ্র করে ভারতজুড়ে গণবিক্ষোভের মুখে পিছু হটার কোনো ইঙ্গিত এখনো দেয়নি মোদি সরকার।