ব্রিটিশ রানির জন্মদিন উপলক্ষে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দবিরুলসহ ৩০ জনকে সম্মাননা
যুক্তরাজ্যের রানির জন্মদিন উপলক্ষে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শতবর্ষী দবিরুল ইসলাম চৌধুরীসহ ৩০ জনকে বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যপ্রবাসী দবিরুল ইসলাম গত রোজার মাসে হেঁটে নভেল করোনাভাইরাস তহবিলের জন্য প্রায় সাড়ে চার লাখ পাউন্ড চাঁদা তুলেছেন।
পূর্ব লন্ডনের বো এলাকার বাসিন্দা দবিরুলকে অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (ওবিই) পদক দেওয়া হয়েছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দবিরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘এই দুর্লভ সম্মান পেয়ে আমি নিজেকে অত্যন্ত ভাগ্যবান বলে মনে করছি। আমার অন্তরের অন্তস্তল থেকে সবার প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
রানি এলিজাবেথের জন্মদিন উপলক্ষে যুক্তরাজ্যের সমাজ-জীবনে যাঁরা বিশেষ ভূমিকা রাখেন, প্রতিবছর তাঁদের সম্মান জানানোর রীতি রয়েছে। এবার চার ক্যাটাগরিতে ৩০ জনকে এই সম্মান জানানো হয়েছে। কমান্ডার অব দ্য অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (সিবিই), অফিসার্স অব দ্য অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (ওবিই), মেম্বারস অব দ্য অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (এমবিই) এবং মেডালিস্ট অব দ্য অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (বিইএম)—এই চার ক্যাটাগরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ব্যক্তিদের সম্মানিত করা হয়।
চলতি বছর জুন মাসে এই সম্মাননা ঘোষণার পরিকল্পনা থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারির সময় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী, অর্থদাতা ও স্বেচ্ছাসেবকদের এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তা স্থগিত করা হয়।
গত রমজান মাসের পুরোটা সময় দবিরুল ইসলাম চৌধুরী রোজা রেখে প্রতিদিন তার বাড়ির পেছনের ৮০ মিটার বাগানে হেঁটে মোট ৯৭০ বার চক্কর দিয়েছেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য এবং আরো কিছু দেশের করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত মানুষের সহায়তার জন্য অর্থসাহায্য সংগ্রহ করা।
ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন টম মুর তাঁর বাড়ির বাগানে হেঁটে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য যেভাবে প্রায় সাড়ে তিন কোটি পাউন্ড চাঁদা তুলেছিলেন, তা দেখে উৎসাহিত হয়েছিলেন দবিরুল ইসলাম চৌধুরী। রোজার মাসের পুরোটা সময় তিনি একইভাবে হেঁটে মোট চার লাখ ২০ হাজার পাউন্ড সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে এক লাখ ১৬ হাজার পাউন্ড দেওয়া হয় স্বাস্থ্য বিভাগকে (এনএইচএস)। বাকি অর্থ ৫২টি দেশের ৩০টি দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করা হয়।
দবিরুল ইসলাম চৌধুরীর এই প্রচেষ্টার প্রশংসা করে বিরোধীদল লেবার পার্টির প্রধান স্যার কিয়ার স্টার্মার বলেছেন, ‘আমাদের সবার কাছে তিনি প্রেরণার এক উৎস।’
দবিরুল ইসলাম চৌধুরীর জন্ম ১৯২০ সালে সিলেটের দিরাই উপজেলায়। ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে উচ্চশিক্ষার আশায় ১৯৫৭ সালে তিনি বিলেতের পথে পাড়ি জমান। এরপর তিনি সেন্ট অলবান্স শহরে বসবাস করেন এবং সেখানে একজন কমিউনিটি লিডার হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়েও তিনি অর্থ সাহায্য সংগ্রহ করেছিলেন।