মোদি ও বিতর্কিত আইনের বিরুদ্ধে বিশ্বখ্যাত গিটারিস্টের কণ্ঠস্বর
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরোধিতা করে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে (সিএএ) ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিলেন বিশ্বখ্যাত ব্যান্ড পিঙ্ক ফ্লয়েডের গিটারিস্ট রজার ওয়াটার্স। এ ছাড়া সিএএর বিরুদ্ধে আন্দোলনের পরিচিত মুখ দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমির আজিজের একটি প্রতিবাদী কবিতাও আবৃত্তি করেন তিনি।
উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের মুক্তির দাবিতে গত ২২ ফেব্রুয়ারি লন্ডনে একটি জনসভায় বিজেপির বিরোধিতা করেন পিঙ্ক ফ্লয়েডের এই গিটারিস্ট। সভায় সারা বিশ্বে ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে কথা উঠেছিল। সেখানে চিলি, কলম্বিয়া, ফ্রান্স, আর্জেন্টিনার পাশাপাশি ভারতের সিএএ ঘিরে প্রতিবাদের প্রসঙ্গও ওঠে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে।
সেখানে শুরু থেকেই সিএএর বিরুদ্ধে সরব জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আমির আজিজের কবিতা পড়তে গিয়ে রজার ওয়াটার্স বলেন, ‘একজন তরুণ যুবক, যাকে আমরা কেউই চিনি না, তাঁর নাম আমির আজিজ। তিনি দিল্লির একজন কবি ও সমাজকর্মী। মোদি ও তাঁর ফ্যাসিস্ট-বর্ণবাদী নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্ত।’
পরে আমিরের কবিতা আবৃত্তি করেন রজার ওয়াটার্স। আমির তাঁর কবিতায় লেখেন, ‘সবকিছুই মনে থাকবে। ঘাতক, আমরা অশরীরী হয়ে তোমার হত্যাযজ্ঞের কাহিনি লিখব। সব প্রমাণই থাকবে। তোমরা যেভাবে আদালতে লেখো কৌতুক, আমরা সেভাবেই দেয়ালে লিখব তোমার বিচার...।’
রজারের এ কবিতা আবৃত্তির পরই চারপাশে হাততালি দেন উপস্থিত সবাই। এরপর এর একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এর ফলে সবার কাছে আরো পরিচিত হয়ে ওঠেন আমির আজিজ।
এদিকে ভারতের নয়াদিল্লিতে সিএএ নিয়ে সহিংসতায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮। এ ছাড়া আহতদের মধ্যে অন্তত ২০০ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে দিল্লির গুরু তেজবাহাদুর হাসপাতালে। এদিকে, এ সহিংসতার ঘটনায় বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করে দিল্লি পুলিশ। পুলিশকে তদন্ত করে দ্রুত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ১৮ এ খবর জানিয়েছে।
গত বুধবার সহিংসতাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। গতকাল বৃহস্পতিবার দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। আর সেখানে তিনি প্রথমে বেশ কয়েক স্তরে ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করেন। তিনি জানান, নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি করে দেওয়া হবে। যাঁরা স্থায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, তাঁদের পাঁচ লাখ রুপি করে দেওয়া হবে। যাঁরা গুরুতর আহত হয়েছেন, তাঁদের দেওয়া হবে দুই লাখ রুপি করে। যাঁরা সামান্য আহত হয়েছেন, তাঁদের ২০ হাজার রুপি করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া সহিংসতায় যাঁদের বাড়ি একেবারে পুড়ে গেছে, তাঁদের পাঁচ লাখ রুপি করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কেজরিওয়াল। যাঁদের দোকান লুট করা হয়েছে, তাঁদের ২৫ হাজার রুপি করে দেওয়ার কথাও ঘোষণা দেন তিনি।
এদিকে, থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে ভারতের রাজধানী দিল্লিসহ গোটা দেশে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে অনেক এলাকা। সারি সারি পোড়া গাড়ি, বাড়ি ও সড়কপথের অবস্থাও ভালো নয়। গুলি, লাঠিচার্জ, পাথর-বৃষ্টি ছাড়াও বুধবার ফিল্মি কায়দায় এসিড হামলার ঘটনাও ঘটে। মেট্রো স্টেশনগুলো নীরব হয়ে আছে। জনমানবশূন্য অবস্থা দিল্লির বেশির ভাগ এলাকা। এতে আহত হন পুলিশ সদস্যও। হাসপাতালে গুরুতর অবস্থায় ভর্তি অনেকেই, যে কারণে বেড়ে চলছে নিহতের সংখ্যাও।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, দাঙ্গায় উসকানির জন্য বিজেপির কপিল মিশ্রের পর আলোচনায় এসেছে আম আদমি পার্টির কাউন্সিলর তাহির হুসাইনের নাম। এদিকে, দাঙ্গায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তাহির হুসাইনকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, দাঙ্গায় জড়িত সন্দেহে চার শতাধিক মানুষকে আটক করা হয়েছে।
অন্যদিকে, গুজরাট বা শিখ দাঙ্গার স্মৃতি ফেরাচ্ছে দিল্লির সংঘর্ষ—এমন মন্তব্যের জেরে বদলি করে দেওয়া হয় দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি জাস্টিস এস মুরলিধরকে। দিল্লিতে সহিংসতার জন্য তিনি সমালোচনা করেছিলেন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের। তাই চড়া মূল্য গুনতে হয় তাঁকে। দিল্লির হাইকোর্ট থেকে বুধবার রাতেই পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে বিচারপতি এস মুরলিধরের বদলির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তিনি ছিলেন দিল্লিতে তৃতীয় সর্বোচ্চ পদাধিকারী ব্যক্তি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করে বিচারপতি মুরলিধরকে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা কোর্টে নিযুক্ত করা হয়।