যুদ্ধবিরতি মেয়াদ বাড়ানোর পরপরই খার্তুমে বিমান হামলা
সেনাবাহিনী ও একটি প্রতিদ্বন্দ্বী বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ এখন তুঙ্গে। এতে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সম্মত হয়েছে তারা। তবে, এরই মধ্যে সুদানি যুদ্ধবিমানগুলো বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) খার্তুমে আধাসামরিক বাহিনীর ওপর বোমা হামলা চালিয়েছে। একইসঙ্গে লুটপাট শুরু করেছে দারফুরে।
মধ্যরাতে (গ্রিনিচ মান সময় ২২:০০ টায়) বারবার ভঙ্গ হওয়া তিন দিনের যুদ্ধবিরতির শেষ ঘণ্টা বাজলে সেনাবাহিনী ও র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) সৌদি আরব ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ৭২ ঘণ্টার মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। খবর এএফপির।
এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বে সুদানের সেনাবাহিনী ও প্রতিদ্বন্দ্বী মোহাম্মদ হামদান দাগলোর নেতৃত্বে আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফের মধ্যে ১৫ এপ্রিল যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে একাধিক যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। যুদ্ধ বন্ধে জড়িত বিদেশি কর্তৃপক্ষ বর্ধিত যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে পূর্ণ বাস্তবানের আহ্বান জানিয়েছে।
এক যৌথ বিবৃতিতে, আফ্রিকান ইউনিয়ন, জাতিসংঘ, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ব্রিটেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শত্রুতা আরও দীর্ঘস্থায়ী রূপ না নেওয়া এবং নিরবচ্ছিন্ন মানবিক অ্যাক্সেস নিশ্চিত করার জন্য উভয় পক্ষের সংলাপে জড়িত থাকার প্রস্তুতির প্রশংসা করেছে। তারা বলেছে, এর ফলে শান্তির জন্য ২০ এপ্রিলের মধ্যে একটি ডি-এস্কেলেশন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা যেতে পারে।
এদিকে, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার যুদ্ধবিমানগুলো রাজধানীর উত্তরাঞ্চলীয় শহরতলির উপর টহল দেয়। স্থলভাগে যোদ্ধারা আর্টিলারি ও ভারী মেশিনগানের গোলাবর্ষণ করে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খার্তুমের একজন বাসিন্দা এএফপিকে বলেন, ‘আমি আমার বাড়ির বাইরে প্রচণ্ড গোলাগুলোর শব্দ শুনতে পাচ্ছি।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, লড়াইয়ে কমপক্ষে ৫১২ জন নিহত ও চার হাজার ১৯৩ জন আহত হয়েছে, তবে প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি বলে জানা যায়।
গোলাগুলিতে দুই-তৃতীয়াংশে বেশি আহতদের সেবা প্রদানে হাসপাতালগুলোর চিকিৎসকরা হিমশিম খাচ্ছেন। চিকিৎসক ইউনিয়ন বৃহস্পতিবার বলেছে, বুধবার খার্তুমে অন্তত আটজন বেসামরিক লোক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ দেড় কোটি মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, দেশটিতে সহিংসতায় লাখো মানুষ ক্ষুধা মেটাতে পারবেন না।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা বলেছে, পশ্চিম দারফুরে যুদ্ধের ফলে ‘আনুমানিক ৫০ হাজার মানুষ তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। শিশু খাদ্য ব্যাহত হয়েছে।
সহিংসতা অনেক বেসামরিক নাগরিককে তাদের বাড়িতে আটকে থাকতে বাধ্য করেছে। তারা সেখানে মারাত্মক খাদ্য, পানি ও বিদ্যুতের অভাবের মধ্যে পড়েছে। যাদের সামর্থ্য আছে তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে দীর্ঘ ও ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা করছে।
মিশর বৃহস্পতিবার বলেছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে কমপক্ষে ১৪ হাজার সুদানি ও অন্যান্য ৫০টি দেশের দুই হাজার শরণার্থী সীমান্ত অতিক্রম করেছে।
কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ শাদে, চার হাজার দক্ষিণ সুদানে, তিন হাজার ৫০০ ইথিওপিয়ায় এবং তিন হাজার মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে পালিয়ে গেছে।
জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, যুদ্ধ চলতে থাকলে দুই লাখ ৭০ হাজারের মতো মানুষ পালিয়ে যেতে পারে।