সুদানে আধাসামরিক বাহিনীর হামলায় নিহত শতাধিক

সুদানের দারফুর অঞ্চলে বাস্তুচ্যুতদের ক্যাম্পে দুটি হামলায় অন্তত ১০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। নিহতদের মধ্যে ২০ শিশু ও ৯ জন ত্রাণকর্মী রয়েছেন। খবর আল-জাজিরার।
সুদানে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক ও মানবিক সমন্বয়কারী ক্লেমেন্টিন এনকুয়েটা-সালামি শনিবার (১২ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে জানান, আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এবং তাদের মিত্র মিলিশিয়ারা উত্তর দারফুরের প্রাদেশিক রাজধানী এল-ফাশার এবং এর আশপাশে জামজাম ও আবু শোরুক ক্যাম্পে এই বর্বর হামলা চালায়।
শুক্রবার ও শনিবার দুই দফায় হামলা চালানো হয়। হামলায় জামজাম ক্যাম্পে অবস্থিত একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ করছিলেন এমন ৯ জন ত্রাণকর্মী নিহত হন।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, জামজাম ও আবু শোরুক ক্যাম্পে ৭ লক্ষাধিক বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন, যারা ইতোপূর্বে দারফুরে সংঘর্ষের কারণে ঘরছাড়া হন।
ক্লেমেন্টিন আরও বলেন, “এটি একটি ভয়াবহ এবং অগ্রহণযোগ্য নতুন মাত্রার সহিংসতা, যা প্রায় দুই বছর ধরে চলমান সংঘর্ষে বাস্তুচ্যুত মানুষ ও ত্রাণকর্মীদের ওপর ধারাবাহিক হামলার অংশ।”
তিনি আরও বলেন, “যারা এই বর্বর হামলা চালাচ্ছে, আমি তাদের আহ্বান জানাই—এই নৃশংসতা বন্ধ করুন।”
সুদানের চিকিৎসকদের সংগঠন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জামজাম ক্যাম্পে রিলিফ ইন্টারন্যাশনাল পরিচালিত একটি হাসপাতালে আএসএফ হামলা চালালে সেখানে কর্মরত ছয়জন স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক মাহমুদ বাবাকের ইদ্রিস এবং সংগঠনটির আঞ্চলিক প্রধান আদম বাবাকের আবদুল্লাহ।
রিলিফ ইন্টারন্যাশনাল নিশ্চিত করেছে, তাদের মোট ৯ জন কর্মী নিহত হয়েছেন, যাদের হত্যা করা হয়েছে একটি ‘লক্ষ্যভিত্তিক হামলার’ মাধ্যমে। হামলায় তাদের ক্লিনিক, কেন্দ্রীয় বাজার ও শত শত অস্থায়ী ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে।

জামজাম ও আবু শোরুক এলাকাকে বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইপিসি ‘দুর্ভিক্ষ-ঝুঁকিপূর্ণ’ পাঁচটি এলাকার মধ্যে রেখেছে।
সুদানের চলমান যুদ্ধ বিশ্বে সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট তৈরি করেছে, যেখানে প্রায় ২৫ মিলিয়ন মানুষ—অর্থাৎ দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা—চরম খাদ্য সংকটে ভুগছেন।
সম্প্রতি আরএসএফ বাহিনী এল-ফাশারে হামলা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এটি দারফুর অঞ্চলের একমাত্র প্রাদেশিক রাজধানী যা এখনও তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। গত মাসে সুদানি সেনাবাহিনী জাতীয় রাজধানী খার্তুম পুনরুদ্ধার করার পর আরএসএফ এই অঞ্চলে আক্রমণ জোরদার করেছে।
এদিকে, মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল চলতি মাসের শুরুতে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানিয়েছে—আরএসএফ বাহিনী দেশব্যাপী গৃহযুদ্ধে নারীদের ওপর ভয়াবহ যৌন সহিংসতা ও গণধর্ষণ চালাচ্ছে, যা তাদের কৌশলের অংশ।