লুকাশেঙ্কোর জয়ের পূর্বাভাসে বেলারুশে তীব্র বিক্ষোভ

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটাভুটি শেষ হতেই বেলারুশের একাধিক শহরে শুরু হয়ে গেছে প্রতিবাদ। বিরোধীদের দাবি, ভোটে কারচুপি হয়েছে।
এক্সিট পোল বা বুথফেরত জরিপ বলছে, আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো বেলারুশে ষষ্ঠবারের জন্য ক্ষমতায় আসতে চলেছেন। জরিপ অনুযায়ী, লুকাশেঙ্কোর প্রায় ৮০ শতাংশ ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর, লুকাশেঙ্কোর প্রধান বিরোধী স্ভেতলানা তিখানোভস্কায়া পেতে পারেন সাত শতাংশেরও কম ভোট। সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে এ খবর জানিয়েছে।
জরিপের তথ্য প্রকাশ পাওয়ার পরই বিরোধীরা দাবি করে, ভোটে কারচুপি হয়েছে। গতকাল রোববার রাত থেকে বেলারুশের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাতে থাকে বিরোধীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে প্রচুর বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমেছেন। তাঁদের মুখে স্লোগান। গাড়ির হর্ন বাজছে, সাইরেন বাজছে। কয়েকশ দাঙ্গাবিরোধী পুলিশ হাতে ঢাল নিয়ে দঁড়িয়ে আছে। কিছু বিক্ষোভকারী ময়লা ফেলার গাড়ি দাঁড় করিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করে। পুলিশ তখন জলকামান ছোড়ে, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়।
বেলারুশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, গতকাল রোববার রাত থেকে পুলিশ মিনস্ক শহরে শান্তি ফেরানোর চেষ্টা করছে। কতজনকে আটক করা হয়েছে, তা এখনো বলা যাচ্ছে না। ভিয়াসনা মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত অ্যালেস সংবাদ সংস্থা এপিকে জানিয়েছেন, ‘কয়েকশ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কয়েকশ লোক আহত হয়েছে। পুলিশ বিক্ষোভ থামাতে প্রবল বলপ্রয়োগ করছে।’
বিরোধী নেত্রী স্ভেতলানা জানিয়েছেন, তিনি এক্সিট পোলের ফল বিশ্বাস করেন না। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থন তাঁর দিকে আছে। স্ভেতলানা শিক্ষকতা করেন। তাঁর স্বামী সরকারবিরোধী ব্লগার। কিন্তু সরকার তাঁকে আটক করায় তিনি নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেননি। তখন স্ভেতলানা নির্বাচনে দাঁড়ান। তাঁর জনসভায় প্রচুর জনসমাগম হয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে বেলারুশে কোনো জনসভায় এত লোক হয়নি।
স্ভেতলানার সমর্থক ভেরোনিকা বলেছেন, ‘আমার ধারণা, আইনের রক্ষকরা জনতার দাবি মানবেন। তাহলেই রক্তপাত ছাড়া মিনস্কে শান্তি ফিরবে।’ ভেরোনিকার স্বামীও ভোটে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি। তারপর ভেরোনিকারা স্ভেতলানাকে সমর্থন করছেন।
কিন্তু রাশিয়ার প্রবীণ এমপি এবং স্টেট ডুমা কমিটির চেয়ারম্যান লিওনিড স্লাটস্কি বলেছেন, বেলারুশের অবস্থা ২০১৪ সালের ইউক্রেনের মতো হতে পারে। যেখানে রুশপন্থী প্রেসিডেন্টকে জনগণ রক্তাক্ত বিপ্লবের মাধ্যমে উৎখাত করেছিল। লিওনিড স্লাটস্কির মতে, বেলারুশের জনগণ তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে সক্ষম। বিদেশি শক্তি যেন এখানে হস্তক্ষেপ না করে।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোকে বলা হয় ‘ইউরোপের শেষ স্বৈরশাসক’। তিনি ১৯৯৪ থেকে কড়া হাতে বেলারুশ শাসন করছেন। লুকাশেঙ্কো দাবি করেন, তিনি থাকলে বেলারুশে সরকারের স্থায়িত্ব থাকবে। কিন্তু, সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ বেড়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, ভোটের আগে এক হাজার ৩০০ জনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে নিরপেক্ষ নির্বাচন পর্যবেক্ষকরাও আছেন। ঠিক সময়ে আমন্ত্রণ না পাওয়ায় ইউরোপের অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশনের প্রতিনিধিরা ভোট পর্যবেক্ষণ করতে পারেননি।