শার্লি হেবদো হামলার ঘটনায় ১৪ জনের বিচার শুরু
ফ্রান্সের ব্যঙ্গাত্মক ম্যাগাজিন শার্লি হেবদো কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় ১৪ জনকে বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে হামলার প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করা এবং হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনের অনুপস্থিতিতে বিচার হচ্ছে। ওই তিনজন উত্তর সিরিয়া ও ইরাকে পালিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হয়।
আলোচিত মামলাটির বিচার গত মার্চে শুরু হলেও করোনা মহামারির কারণে তা আটকে যায়। এরপর আজ বুধবার আবার বিচারকাজ শুরু হয়েছে। এ বিচারকাজ আগামী নভেম্বর পর্যন্ত চলার কথা রয়েছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া হামলা মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, শার্লি হেবদোতে ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি দুই ভাইয়ের চালানো বন্দুক হামলায় সহযোগিতা করেছিল ১৪ জন। সুপরিচিত কার্টুনিস্টসহ ১২ জন ওই হামলায় নিহত হয়। এর কয়েক দিন পর প্যারিসে এ ঘটনা-সংক্রান্ত আরেকটি হামলায় পাঁচজন নিহত হয়।
গত মার্চে ওই মামলার বিচারক বলেছিলেন, ফ্রান্সে লকডাউন জারি থাকায় মামলার ‘সব পক্ষ, সাক্ষী ও বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধির বাধ্যবাধকতা মেনে’ এক জায়গায় করা সম্ভব হচ্ছে না।
ফ্রান্সের আরএফআই সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ধারণা করা হচ্ছে, হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা ও আইনজীবী মিলিয়ে প্রায় ২০০ জন এ মামলায় সাক্ষ্য দেবেন।
বিচারাধীন ১৪ জনের অপরাধের মাত্রা কতটা, অর্থাৎ তারা ওই হামলায় ‘কোনোভাবে সহযোগিতা’ করেছিল কিনা জানতে চাওয়া হলে গত সোমবার অ্যান্টিটেরর প্রসিকিউটর জ্যঁ ফ্রাঁসোয়া রিকার্ড বলেন, ‘তারা পরিবহন, সরঞ্জাম সরবরাহ, ঘটনার প্রস্তুতি, অর্থসংস্থান এবং আবাসিক ব্যবস্থায় সহযোগিতা করেছে। সন্ত্রাসী হামলায় এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’
এদিকে বিচার শুরুর একদিন আগে শার্লি হেবদো মহানবী (সা.)-কে নিয়ে বহুল বিতর্কিত কিছু কার্টুন পুনরায় প্রকাশ করেছে। এসব কার্টুন প্রকাশের জেরে ২০১৫ সালে শার্লি হেবদোর কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছিল।
২০১৫ সালে যা হয়েছিল
ওই বছরের ৭ জানুয়ারি দুই ভাই—সাঈদ ও শেরিফ কুয়াচি—শার্লি হেবদোর দপ্তরে অতর্কিতে ঢুকে পড়ে এবং গুলি চালাতে শুরু করে। সাময়িকীর সম্পাদক স্তেফানি শার্বনিয়ার, যিনি শার্ব নামে বেশি পরিচিত ছিলেন এবং আরো চারজন কার্টুনিস্ট নিহত হন।
ওই হামলায় আরো নিহত হন দুজন কলাম লেখক, একজন কপি এডিটর, একজন অতিথি, যিনি একটি বৈঠকে যোগ দিতে সেখানে গিয়েছিলেন এবং দপ্তরের কেয়ারটেকার। এ ছাড়া শার্লি হেবদো সম্পাদকের দেহরক্ষী ও একজন পুলিশ কর্মকর্তাও ওই হামলায় নিহত হন।
হামলার পর পুলিশ ওই দুই ভাইকে যখন খুঁজছিল, তখন প্যারিসের পূর্বাঞ্চলে অবরোধ শুরু হয়। পরে ওই দুই ভাইকে হত্যা করা হয়।
শার্লি হেবদো কেন লক্ষ্যবস্তু?
শার্লি হেবদো প্রথাবিরোধী বিদ্রুপাত্মক কার্টুন প্রকাশ করে থাকে। তারা চরম ডানপন্থীদের ব্যঙ্গ করে, ক্যাথলিক খ্রিস্টান, ইহুদি ধর্ম এবং ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রকাশ করে দীর্ঘদিন ধরে নানা সময় বিতর্কের কেন্দ্রে এসেছে।
তবে মহানবীকে (সা.) নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের পর শার্লি হেবদো সাময়িকীর সম্পাদকমণ্ডলীর বিরুদ্ধে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এর আগে ২০১১ সালে শার্লি হেবদো বিভিন্ন দপ্তরে পেট্রল বোমা হামলাও চালানো হয়েছিল।
শার্ব তাঁদের সাময়িকীতে এ ধরনের কার্টুন প্রকাশের পক্ষে জোরালো যুক্তি দেখিয়ে বলেছিলেন, এসব কার্টুন বাগ্স্বাধীনতার প্রতীক।
শার্ব ২০১২ সালে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছিলেন, ‘আমাদের ছবি দেখে মুসলিমরা যে মজা পাবেন না, হাসবেন না, সেটা আমি জানি। আমি ফরাসি আইনের অধীনে জীবনযাপন করি, কোরআনের আইনের অধীনে নয়।’
অনেকেই মনে করেন, শার্লি হেবদোর ভিন্ন মত, ভিন্ন বিশ্বাস এবং ভিন্ন মতাদর্শের প্রতি আরো শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত।