সুদানে সংঘর্ষে মারা গেছে চারশ’র বেশি মানুষ
সুদানে সামরিক বাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনীর লড়াই থামছেই না। এরই মধ্যে বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছে দেশটির রাজধানী খার্তুমের মানুষ। দুপক্ষের চলমান সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত চার শ’রও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বরাতে আজ শুক্রবার (২১ এপ্রিল) এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা।
জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচওর মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিস বলেন, ‘সপ্তাহখানেকের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৪১৩ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে শিশু অন্তত ৯ জন। আহত হয়েছে সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষ, যার মধ্যে শিশু অর্ধশতাধিক।’ সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচওর কর্মকর্তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ইউনিসেফের লোকজনও।
গত সপ্তাহে সুদানের সামরিক বাহিনী এবং আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের (আরএসএফ) মধ্যে লড়াই শুরু হয়। চলমান এ সংঘাতের এক পক্ষে রয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। অপর পক্ষে আছেন আরএসএফের প্রধান সাবেক মিলিশিয়া নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো ওরফে হেমেদতি।
চলমান সংঘর্ষে আল-ওবিয়েদে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) একজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। জেনেভাতে আইওএমের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের একজন স্টাফ তার স্ত্রী ও নবজাতককে নিয়ে প্রাইভেটকারে করে নিরাপদে যাচ্ছিলেন। আল-ওবিয়েদের ৫০ কিলোমিটার দূরে তারা দুপক্ষের গোলাগুলির মধ্যে পড়ে যায়। এতে আমাদের ওই স্টাফ গুরুতর আহত হন ও পরে দুর্ভাগ্যবশত মারা যান।’
এদিকে, সুদানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কর্মীদের দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হতে পারে। এ জন্য প্রস্তুতও রয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী। তবে, এ নিয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি হোয়াইট হাউজ কর্তৃপক্ষ। আর সুদান থেকে নিজেদের নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে সুইজারল্যান্ড। দেশটিতে আটকা পড়েছে শতাধিক সুইস নাগরিক। অন্যদিকে, জার্মানিও সুদানে আটকে পড়া নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে, রাজধানী খার্তুমে এখনও গোলাগুলি চলছে বলে জানিয়েছে সুদানে থাকা আল-জাজিরার সাংবাদিক। তিনি জানান, রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া নীল নদের পশ্চিমাংশেও গোলাগুলি হয়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, বিগত কয়েকদিনে সুদানের দারফুর অঞ্চলে চলমান সংঘর্ষের কারণে আনুমানিক ১০ থেকে ২০ হাজার মানুষ পালিয়ে প্রতিবেশী দেশ চাদে আশ্রয় নিয়েছে। বাস্তুচ্যুত এসব লোকদের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন।
খার্তুমে থাকা অধিকারকর্মী দুয়া তারিক বলেন, ‘গত দুদিন ধরে আমরা পানি পাচ্ছি না। এক বালতি পানি দিয়েই আমরা চলছি। গোসল পর্যন্ত করতে পারছি না আমরা। কাপ অনুযায়ী আমরা পানি ব্যবহার করছি।’
আর খার্তুমের পেট্রোল স্টেশনগুলো বন্ধ করা দেওয়া হয়েছে। সমস্ত নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
লড়াই থামানোর জন্য কূটনৈতিক চাপ বাড়ানো হচ্ছে। অনেক দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে এবং মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। সুদানে কিভাবে বেসামরিক শাসন ফিরিয়ে আনা হবে, মূলত তা নিয়ে দুই ক্ষমতাধর সামরিক অধিনায়কের দ্বন্দ্ব থেকে এই লড়াই চলছে।