ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভ, মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব

এর আগে এমনটা আর কখনো হয়নি। সব সময়ই ইসরায়েলের যেকোনো কাজে সহযোগিতাই দিয়ে আসছিল বন্ধুদেশ যুক্তরাষ্ট্র আর জাতিসংঘ।
সম্প্রতি প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিনের অধিকৃত অঞ্চলে ইসরায়েলের অবৈধ বসতি নির্মাণ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে উত্থাপিত একটি খসড়া প্রস্তাবের অনুমোদন করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। এ প্রস্তাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বসতি নির্মাণ অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানানো হয়।
আর জাতিসংঘের এই পদক্ষেপে ক্রুদ্ধ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া চেপে রাখেনি দেশটি। স্থানীয় সময় গতকাল রোববার বড়দিনের দিনেই যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত দানিয়েল শাপিরোকে তলব করা হয়। সে সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ফিলিস্তিনের অধিকৃত অঞ্চলে ইসরায়েলের বসতি নির্মাণ বন্ধের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভোটদানে বিরত থাকার প্রসঙ্গটি সম্পর্কে আলোচনা করেন।
বিবিসি জানিয়েছে, এর আগে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে সম্মত হওয়া আরো ১০টি সদস্য রাষ্ট্রকে জাতিসংঘের প্রস্তাব পাস হওয়ার পর ডেকে পাঠায় এবং তাদের কঠোরভাবে তিরস্কার করে। এই ১০ দেশের তালিকায় রয়েছেন ফরাসি, ব্রিটিশ, রুশ, চীনা ও স্প্যানিশ রাষ্ট্রদূতও।
এদিকে রয়টার্স লিখেছে, বড়দিনের দিনে ইসরায়েলের দিক থেকে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া নজিরবিহীন। কিন্তু এ থেকে বোঝা যায়, ইসরায়েল কতটা ক্রুদ্ধ হয়েছে।
অভিযোগের আঙুল বন্ধু ওয়াশিংটনের দিকে তুলে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো খবর প্রকাশ করে, এই প্রস্তাব পাস হয়েছে কেবল হয় ইসরায়েলের মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকার কারণে। এর আগে দেখা গেছে, ইসরায়েলের স্বার্থবিরোধী প্রস্তাবে জাতিসংঘে সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ভেটো দেওয়া হয়।
কিন্তু এবার ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকায় ইসরায়েল এই যুক্তরাষ্ট্রের ওপরেই ক্ষুব্ধ হয়েছে। ইসরায়েল বলছে, ওয়াশিংটনই পেছন থেকে কলকাঠি নেড়ে এই কাজ করেছে। এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘যেসব তথ্য আমরা পেয়েছি, তা থেকে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই যে ওবামা প্রশাসনই এর উদ্যোগ নিয়েছে, এর পক্ষে দাঁড়িয়েছে এবং প্রস্তাবের ভাষা সমন্বয় করেছে।’
নেতানিয়াহু আরো বলেন, ‘একজন বন্ধু তার আরেকজন বন্ধুকে নিরাপত্তা পরিষদে নিয়ে যায় না।’
এদিকে নেতানিয়াহু দেশটির সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘জাতিসংঘের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক আগামী এক মাসের মধ্যে পুনর্মূল্যায়ন করে দেখার জন্য আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আদেশ দিয়েছি। জাতিসংঘের যেসব সংস্থায় ইসরায়েল যে অর্থ সহায়তা দিচ্ছে, সেটাও খতিয়ে দেখার আদেশ দিয়েছি।’
নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তকে তিনি 'পক্ষপাতমূলক' এবং 'লজ্জাজনক' বলে উল্লেখ করেছেন। নেতানিয়াহু বলেছেন, কিছুটা সময় লাগবে এবং এ সিদ্ধান্ত বাতিল হয়ে যাবে।
জাতিসংঘের ১৫ সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত নিরাপত্তা পরিষদে গত শুক্রবার বিষয়টি নিয়ে ভোটাভুটি হয়। ভেনেজুয়েলা, মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড ও সেনেগাল সম্মিলিতভাবে এই প্রস্তাব উত্থাপন করে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনের অধিকৃত অঞ্চলে ইসরায়েলি স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের দাবিতে মিসরের প্রস্তাবের ওপর ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘণ্টা আগে বৃহস্পতিবার ওই ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়।
তখন জানানো হয়েছিল, জাতিসংঘে উত্থাপিত খসড়া প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনার সময় দরকার বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে ভোট পেছানোর অনুরোধ করে মিসর। এ ছাড়া ইসরায়েল ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এই প্রস্তাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রকে ভেটো দিতে অনুরোধ করেছে বলে খবর প্রকাশিত হয়।
শেষ পর্যন্ত নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় শুক্রবার প্রস্তাবটি পাস হওয়ার পর সন্তোষ প্রকাশ করেছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। প্রস্তাব পাসের পর জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের প্রধান সমঝোতাকারী সায়েব এরেকাত রয়টার্সকে বলেন, ‘এটি আন্তর্জাতিক আইনের জন্য একটি বিজয়ের দিন। এই জয় একটি সুসভ্য ভাষা আর কূটনীতির এবং ইসরায়েলের চরমপন্থী বাহিনীর প্রতি বিশ্ববাসীর প্রত্যাখ্যান।’
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, ‘অসম্ভব’ প্রস্তাবের শর্তগুলো মানবেন না তাঁরা। তিনি জাতিসংঘের এই প্রস্তাবটির কার্যকারিতা ঠেকাতে হবু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য অপেক্ষা করার কথা জানিয়েছেন।
ফিলিস্তিন নিয়ে এই প্রস্তাব পাসের আগেই ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, আসছে ২০ জানুয়ারি তিনি ক্ষমতা হাতে নেওয়ার পর পরিস্থিতি অন্য রকম হবে।
তবে জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের প্রধান সমঝোতাকারী সায়েব এরেকাত বলেছেন, ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে দখল করা জমিতে ইসরায়েল যে ১৪০টি বসতি তৈরি করেছে, সেটি পুরোপুরি বেআইনি বলে স্বীকৃত। এর আগেও জাতিসংঘের পক্ষ থেকে স্থাপনা নির্মাণকে অবৈধ বলা হয়েছে। কিন্তু এর পরও পশ্চিম তীরে ইসরাইলের স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ হয়নি।