‘আমার বই পড়ো, কুল থাকো’
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আবার তৃণমূল কংগ্রেসেরও দলনেত্রী। বই লেখেন, ছবিও আঁকেন। এবার তাঁর ইচ্ছা হয়েছে নিজের বাণী খুদে শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রচারের। আর তাই পশ্চিমবঙ্গে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক-আইসিএসই-আইএসসিতে মেধাতালিকায় প্রথম দশে থাকা ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষা বোর্ডের মনোনীত ‘সেরা পড়ুয়াদের’ উপহারের তালিকায় নিজের বাণী নিয়ে লেখা বইও যোগ করে দিলেন। রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের বইয়ের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের জীবন গড়তে দেওয়া হয়েছে আত্মোন্নয়নমূলক বই মমতার ‘কথাঞ্জলি’ ও ‘বেস্ট অব মমতা।’
গতকাল বৃহস্পতিবার কলকাতার টাউন হলে সেরা ছাত্রছাত্রীদের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেরা পড়ুয়াদের জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার শিক্ষা দিতে গিয়ে নিজের জীবন আর নিজের বাণী একাকার করে দিলেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘আমার জীবনটাই সংগ্রামে ভরা। তাও কখনো হেরে যাইনি, ভয় পাইনি, মাথা উঁচু করে থেকেছি। সার্ভিস উইথ স্মাইল। নিজেকে পজিটিভ হতে হবে।’ আরো বলেন, ‘যারা কাজ করতে পারে না...তারাই নেগেটিভ পাবলিসিটি করে। এটা তাদের জীবনে হতাশার লক্ষণ। এর থেকে যাতে তোমরা মুক্ত থাকো, তার জন্য আমি তোমাদের নিজের লেখা বই দিয়েছি।’
গত বুধবার পশ্চিমবঙ্গের মাদ্রাসার সেরা ছাত্রছাত্রীদের হাতেও তুলে দেওয়া হয়েছিল মমতার লেখা দুটি বই। মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক-আইসিএসই-আইএসসিতে মেধাতালিকায় প্রথম দশে থাকা ছাত্রছাত্রীদের জন্যও একই উপহার। মুখ্যমন্ত্রীর নিজেরই দাবি, “বইয়ে আমার ‘কোট’গুলিতে চোখ বোলালে জীবন অনেক সহজ হয়ে যাবে। এই বই ‘নিয়মিত পড়লে ইতিবাচক মনোভাব’ও গড়ে উঠবে।”
কী লেখা আছে এসব বইয়ে? কলকাতার সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, মমতার টুকরো টুকরো বাণী। ‘হতাশ হতে নেই’, ‘লোভ করতে নেই’, ‘অহংকার ভালো নয়’, ‘স্বাস্থ্যই সম্পদ’, ‘কুল থাকো’— এসব। এগুলো কবে থেকে মমতার নিজস্ব রচনা হলো, সে প্রশ্ন অবশ্য নিন্দুকরা তুলছেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতার লেখা বই কোন যুক্তিতে পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হলো এবং কারা এই সিদ্ধান্ত নিলেন, উঠছে সেই প্রশ্নও। পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতিমান শিক্ষাবিদদের অনেকেই সেরা শিক্ষার্থীদের জীবন গঠনে দেওয়া এ বই দেখে হতভম্ব। তবে প্রশাসনের সূত্রে জানা গেছে, মুখ্যমন্ত্রী কারো কথার ধার ধারেননি। তিনি চেয়েছেন, তাই তাঁর বই দেওয়া হয়েছে।
কিছুদিন আগে পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে তাঁকে দাওয়াই দিতে শোনা গিয়েছিল, ‘মানসিক চাপ কাটাতে ছবি আঁকা খুব ভালো উপায়!’ সেই পরামর্শ তাঁর বইতেও ঠাঁই পেয়েছে। এর সঙ্গে মা-মাটি-মানুষের কথা, সংবাদমাধ্যমের সমালোচনাও আছে বইগুলোতে। সবচেয়ে বেশি আছে— হতাশা কাটানো আর সমালোচনায় কান না দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সংকল্পের কথা।
‘কথাঞ্জলি’ বইয়ে মমতা কখনো লিখছেন, ‘নেভার মাইন্ড ফর ব্যাকবাইটিং।’ কখনো বলছেন, ‘সব রোগের ওষুধ আবিষ্কার হলেও হিংসা রোগের কোনো ওষুধ নেই।’ সোজাসাপ্টা পরামর্শ দিচ্ছেন, ‘যখন সব সেট হয়ে গেছে, তখন আর আপসেট হয়ো না।’ কিংবা ‘এনভায়রনমেন্ট পলিউশন থেকেও মেন্টাল পলিউশন বেশি ক্ষতি করে।’
মুখ্যমন্ত্রী মাইক হাতে নিয়ে এ দিন ছাত্রছাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন নিজের জীবনের গল্প বলে। বলেছেন, ‘চোট খেয়ে এগোতে গিয়ে যেসব আমার কাজে লেগেছে, সেসবই বইয়ে লেখা।’
এসব পড়লে ছাত্রছাত্রীদের মাথা গুলিয়ে যেতে পারে বলে অভিযোগ করছেন বিরোধীরা। পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলের নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “ওঁর নিজেরই তো মাথা খারাপ। এখন ছেলেমেয়েদের মাথা খারাপ করার কল করছেন!”
বিজেপির বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “উনি তো নিজেকে মহাপুরুষ ভাবছেন! নিজের মতো করে নতুন কথামৃত লিখছেন!”
তবে এসব কথায় মমতা নিজে অবশ্য কোনো দিনই কান দেন না। ‘কুৎসা ও অপপ্রচার দুর্বলতার লক্ষণ’ বইয়ে লিখেছেন তিনি। ব্যক্তি জীবনেও এগুলোকে ক্ষুদ্র মনের ঈর্ষা এবং কুৎসা বলেই মনে করেন। গতকাল ছাত্রছাত্রীদেরও বলছিলেন, “...রাস্তায় চলতে গেলে কখনো পিচের মসৃণ রাস্তা আসবে আবার কখনো রাস্তায় এলোমেলো গর্ত থাকবে। তাই বলে হাঁটা থেমে থাকবে না।” ‘বি কুল অলওয়েজ’ – যে মমতার জীবনমন্ত্র!