তিস্তা ঠেকাতে মমতার ‘অস্ত্র’ আত্রাই!
তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির বিপরীতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার অভিন্ন আরেকটি নদীর পানিপ্রবাহ ও তাঁর ‘বিরূপ’ প্রভাব নিয়ে কথা তুলবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঢাকা সফরেই আত্রাই (আত্রেয়ী) নদীপ্রবাহের ভারতীয় অংশে শুকিয়ে যাওয়া এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের একটি বড় অংশের কৃষিকাজের ক্ষতির হচ্ছে-বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে মুখ্যমন্ত্রী এমন কথাই তুলে ধরবেন বলে জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় আলোচনা তুলেছেন রাজ্য সেচমন্ত্রী। দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারকেও জানানো হয়েছে। রাজ্যের বামপন্থী একজন বিধায়কও এর ‘সমাধান সূত্র’ খোঁজার দাবি তুলেছেন।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ শুক্রবার রাতেই বাংলাদেশে আসছেন। এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে কলকাতার দমদম বিমানবন্দর ছেড়েছেন তিনি। নরেন্দ্র মোদির সফরের একদিন আগে ঢাকায় পা রাখা মমতার এ সফর নিয়ে শুরু থেকেই নানা জল্পনা-কল্পনা চলছিল। এ সফরে ‘তিস্তা চুক্তি হবে না’ দিল্লির এমন আশ্বাসেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ঢাকা সফরে রাজি হয়েছেন বলে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এরপর গত ১ জুন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের বিষয় নিয়ে কথা বলার সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘তিস্তার পানিচুক্তি শুধু ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এবং বাংলাদেশ সরকারের ওপর নির্ভর করে না। এর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ জড়িত। তাই মমতাকে নিয়েই চুক্তি করা হবে।... পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সমঝোতার জন্য আরেকটু আলোচনা প্রয়োজন।’ এ সফরে তিস্তা পানিচুক্তি হচ্ছে না বলেও সেদিন পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
মমতা ঢাকা সফরের একদিন আগে গত বৃহস্পতিবার রাজ্য বিধানসভায় পশ্চিমবঙ্গের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় আতাই নদীর পানিপ্রবাহ নিয়ে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘আত্রেয়ী নদী বাংলাদেশের দিনাজপুর হয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ হয়ে পশ্চিমবঙ্গে ৫৮ কিলোমিটার প্রবাহিত হওয়ার পর আত্রেয়ী ফের ঢুকেছে বাংলাদেশে।’
পশ্চিমবঙ্গে একটি জল পরিশোধিত প্রকল্পের জন্য পানি সংকটের কারণ খুঁজতে গিয়ে আত্রাই নদীর ওপর দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে দুই কিলোমিটারের একটি কনক্রিটের বাঁধের কথা জানতে পারে পশ্চিমবঙ্গ।
পশ্চিমবঙ্গের সেচমন্ত্রী এমন দাবি করে বলেন, ‘আত্রেয়ী নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে পশ্চিমবঙ্গের একটি বিশাল এলাকায় চাষবাসের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এই আত্রেয়ী নদী বাংলাদেশ হয়ে ভারতে ঢুকেছে। অথচ প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ তাদের সীমান্ত এলাকা থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে একটি বাঁধ তৈরি করেছে আত্রেয়ী নদীর ওপর। যে কারণে পশ্চিমবঙ্গের বুকে আত্রেয়ী নদীর পানি সরবরাহে বিঘ্ন তৈরি হয়েছে।’
নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে পশ্চিমবঙ্গের একটি বড় অংশে পানিহীন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে সেচমন্ত্রী বলেন, ‘আত্রেয়ী দিয়ে পর্যাপ্ত পানি না আসায় পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তর অংশে ব্যাপকভাবে চাষবাসের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে ভারতের কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রককে জানানো হয়েছে।’
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় আরো বলেন, এবারের বাংলাদেশ সফরে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের আধিকারিকদের সঙ্গে আত্রাই প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হবে। আত্রাই নিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পানিবণ্টনের বিষয়টিও এবার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচ্য হবে বলেও জানান তিনি।
বিধানসভায় পশ্চিমবঙ্গের কুশমন্ডির বামপন্থী দল রেভ্যুলেশনারি সোশ্যালিস্ট পার্টি-আরএসপির বিধায়ক নর্মদাচন্দ্র রায় বলেন, ‘অবিলম্বে আত্রেয়ী নদীর সমস্যার একটা সমাধান সূত্র বের করা উচিত। কারণ, আত্রেয়ী নদী শুকিয়ে যাওয়ার ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার চাষে ব্যাপক হারে ক্ষতি হচ্ছে।’