‘ব্যাচেলর’ মোদি বিপরীত লিঙ্গ নিয়ে ঝামেলায়
সন্ত্রাসবাদ নিরসনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করতে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ‘নারী হওয়া সত্ত্বেও’। এতে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। স্থানীয় গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ পুরো দক্ষিণ এশিয়াতেই সমালোচিত হয় বিষয়টি। এ নিয়ে অনলাইন সংস্করণে ‘বেনিয়ান’ (বটবৃক্ষ) শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাপ্তাহিক সাময়িকী ‘দি ইকোনমিস্ট’।
নিবন্ধটিতে বলা হয়, ভারতের অবিবাহিত (ব্যাচেলর) নেতা নরেন্দ্র মোদি বিপরীত লিঙ্গ (নারী) নিয়ে ঝামেলায় আছেন। গত বছর নির্বাচনে জয়ের পরপর মায়ের কাছে তিনি তাঁর প্রতি সম্মান দেখাতে চেয়েছিলেন। যদিও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের সময় মাকে নিমন্ত্রণ জানাননি।
তিনি (মোদি) নারীদের সম্মান করার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছেন। তবে তিনি ‘আমাদের মায়েরা, মেয়েরা ও বোনরা’ বলে পুরুষদের সঙ্গে সম্পর্কের আদলে নারীদের বর্ণনা করেছেন। লোকসভা নির্বাচনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লড়ার আগ পর্যন্ত সম্পর্ক ছিন্ন হওয়া স্ত্রীর (কৈশোরে যাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলেন) বিষয়ে মুখ খোলেননি মোদি।
নিবন্ধে আরো বলা হয়, ৭ জুন একটি বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মোদির মতো বাকপটু লোকও নিজের গালে জুতার বাড়ি মারেন। বাংলাদেশে সফল সফর শেষে ভারতে গিয়ে সন্ত্রাস নিরসনে ভূমিকা রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন। ওই সময় তিনি বলেন, নারী হওয়া সত্ত্বেও শেখ হাসিনা জঙ্গি দমনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন।
ওই ব্যক্তব্যের পরই মোদিকে পশ্চাৎপদ মানসিকতার বলে সমালোচনা করেন অনেকেই। তাদের অভিযোগ, মোদি গতানুগতিক ধারার লোকজনের মতোই, যারা ভারতকে একদিকে ‘ভারতমাতা’ বলে সম্বোধন করে, অন্যদিকে নারীদের সঙ্গে বর্বরোচিত আচরণ করে।
নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় নারীদের ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণে অংশত কাজ করেছে তাঁদের পারিবারিক ধারা। সেই পরিবারগুলোই বাংলাদেশে বড় রাজনৈতিক দল তৈরি করেছে।
এতে বলা হয়, এটা সর্বজনবিদিত যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে। তাঁর প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়া স্বামী (জিয়াউর রহমান) খুন হওয়ার পর রাজনীতিতে যোগ দেন। জিয়াউর রহমানও রাষ্ট্রপতি ছিলেন। বাবা জুলফিকার আলী ভুট্টোর মৃত্যুদণ্ডের পর পাকিস্তানের একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত বেনজির ভুট্টো রাজনীতিতে যোগ দেন। ভারতে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে ভবিষ্যৎ নেত্রী ভাবা হচ্ছে এ কারণে যে, তাঁর মা সোনিয়া গান্ধী সে পথ তৈরি করেছেন।
নিবন্ধে আরো বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়া বনেদি নারীদের জন্য (যাঁরা রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়তে চান) সর্বোত্তম জায়গা হলেও সাধারণ নারীদের জন্য নিকৃষ্ট স্থান। যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিশু সুরক্ষাবিষয়ক সংগঠন ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’-এর মাতৃসূচকে (মাদারস ইনডেক্স) ১৭৯টি দেশের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অবস্থান নিম্নের দিকে। ওই দেশগুলোর মাতৃ মৃত্যুহার, শিশুদের বেঁচে থাকার হার ও রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হয় সূচকে। এতে দেখা যায়, নারীদের জীবনমানের দিক থেকে সূচকে ভারত ও পাকিস্তানের অবস্থান ১৪০ ও ১৪৯তম। আর আফগানিস্তানের অবস্থান ১৫২তম। অথচ এশিয়ার পরাক্রমশালী দেশ চীনের অবস্থান ৬১তম।
তবে সব কিছুই মন্দ নয়। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য সুবিধা বাড়ানোর কিছু প্রকল্প হাতে নেওয়ায় গত ২৫ বছরে দক্ষিণ এশিয়ায় কিছু নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে।