আদবানির সঙ্গে একমত কেজরিওয়াল
ভারতে পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সরকারের মতো জরুরি অবস্থা জারির পরিস্থিতিকে বাতিল করে দিচ্ছেন না ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতা লাল কৃষ্ণ আদবানি। তাঁর মতে, ‘বর্তমান রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে কিছু দুর্বলতা রয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনায় এমন কোনো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না, যা আমাকে নিশ্চিত করতে পারে, ভারতে আবার জরুরি অবস্থা জারি হবে না।’
ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কংগ্রেসের ১৯৭৫-৭৭ সালের জরুরি অবস্থার সময়ে জেলখাটা আদবানি এ মন্তব্য করেন। সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমানে বিজেপির রাজনীতিতে কিছুটা ‘ব্রাত্য’ লালকৃষ্ণ আদবানির এই মন্তব্য নিয়ে যথেষ্টই বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছে মোদি-সরকার।
গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, আদবানি এ মন্তব্য করে বিজেপিবিরোধী রাজনৈতিক শক্তির হাতে একটি মোক্ষম হাতিয়ার তুলে দিয়েছে। এর মধ্যেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিয়াল আদবানির বক্তব্যকে সমর্থন দিয়ে সেই অবস্থাকে আরো তুঙ্গে উঠিয়েছেন। কেজরিয়াল টুইটে সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দিল্লিতে আমলাদের নিয়োগ ও বদলি নিয়ে বিজেপির মনোনীত লেফটেন্যান্ট গভর্নর নাজিব জংয়ের সঙ্গে বিরোধের কথা উল্লেখ করেন।
ভারতে জরুরি অবস্থা জারির ৮০তম বর্ষপূর্তির আগে ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থার কথা উল্লেখ করে আদবানি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এর দায় ইন্দিরা গান্ধী ও তাঁর সরকারের। সেই সময় এক লাখ ১০ হাজার মানুষকে জেলে ঢোকানো হয়। এখনো এই ঘটনার জন্য সত্যিকার কোনো জবাবদিহিতা বা ক্ষমা চাওয়া হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী শক্তিশালী। তারা গণতন্ত্র ভেঙে দিতে পারে। অবশ্য, কেউ একজন সহজেই এই কাজটি করতে পারবেন না... কিন্তু আবার এ ঘটনা ঘটবে না-আমি তা বলব না। আবারও নাগরিকদের মৌলিক স্বাধীনতা সংকুচিত হতে পারে।’
আদবানি ‘রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে অন্যন্যসাধারণ কিছু চোখে পড়েনি’ মন্তব্য করে বলেন, ‘ভবিষ্যতে জরুরি অবস্থা জারির মতো পরিস্থিতির আশঙ্কা বাতিল করা যায় না। আজ আমি বলব না যে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিচক্ষণ বা পরিপক্ব নয়। কিন্তু এর কিছু দুর্বলতার জন্য আমি আস্থা পাচ্ছি না। আমার এই আস্থা নেই যে, দেশে জরুরি অবস্থা জারি হবে না।’
এরপরই টুইট বার্তায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, ‘আদবানিজি সঠিক বলেছেন। জরুরি অবস্থা জারির আশঙ্কা বাতিল করা যায় না। তাহলে দিল্লিতেই কি জরুরি অবস্থার প্রথম পরীক্ষা চালানো হবে?’
অপরদিকে আম আদমি পার্টির নেতা আশুতোষ গুপ্ত সরাসরিই বলেছেন, বিজেপির প্রবীণ এই নেতার মন্তব্য ‘মোদির রাজনীতিকেই অভিযুক্ত’ করেছে। টুইটার বার্তায় তিনি বলেন, ‘প্রথমবারের মতো মোদির রাজনীতিকে অভিযুক্ত করে আদবানির এই সাক্ষাৎকার। তিনি বলেছেন, গণতন্ত্র নিরাপদ নয়, মোদির নেতৃত্বাধীন দেশে জরুরি অবস্থা দূরে নয়।’