২০ বছর পর হঠাৎ ‘কাবুলের কসাইয়ের’ আবির্ভাব
তালেবানের তাড়া খেয়ে ১৯৯৬ সালে কাবুল ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন আশির দশকের রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে আফগান মুজাহিদিনদের গুরুত্বপূর্ণ একাংশের নেতা গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার। ২০ বছর লুকিয়ে থেকে সরকারের সঙ্গে এক আপস চুক্তির পর সদলবলে কাবুলে হাজির হয়েছেন তিনি।
গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারকে অনেক ডাকেন ‘কাবুলের কসাই’ বলে। গৃহযুদ্ধের সময় তাঁর বাহিনী কাবুলের ওপর রকেট হামলা চালিয়েছিল, সে জন্য কেউ কেউ তাঁর নাম দিয়েছিলেন গুলবুদ্দিন রকেটিয়ার।
আফগানিস্তানের ইতিহাসের ওই পর্বে কাবুলে যে ধ্বংস, হত্যালীলা চলেছে, তার জন্য দায়ী করা হয় গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের হেজব-উল-ইসলামী দলকে।
আফগানিস্তান থেকে যখন রুশ বাহিনী প্রত্যাহার করা হয়, তখন গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার হয়ে ওঠেন কাবুলের ক্ষমতা দখলের জন্য মুজাহিদিন গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।
যখন তালেবান এসে কাবুল দখল করে নিল, গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারকে তাঁর দলবলসহ কাবুল ছেড়ে পালাতে হয়। সহিংসতা ও হত্যা-নির্যাতনের অভিযোগে ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে একজন সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিল। কিন্তু সরকারের সঙ্গে শান্তিচুক্তির পর ২০ বছর বাদে বৃহস্পতিবার হেকমতিয়ার রাজধানী কাবুলে ফিরে এসেছেন।
আট মাস আগে এই চুক্তি সই হয়। শান্তিচুক্তি অনুযায়ী হেকমতিয়ারের অনুগত প্রায় ছয় হাজার যোদ্ধাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। আফগানিস্তানের বর্তমান অশান্ত পরিস্থিতির পটভূমিকায় গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের মতো একজন গোষ্ঠীনেতার ভূমিকা কেন আবার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে?
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আফগান সরকার গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের সঙ্গে এই চুক্তি করেছে তাঁর প্রভাব-প্রতিপত্তি কাজে লাগানোর জন্য। কারণ, তালেবানের হামলায় সরকার খুবই চাপের মধ্যে আছে।
সরকার আশা করছে, হেকমতিয়ার তালেবান কমান্ডারদের প্রভাবিত করতে পারবেন, যাঁদের অনেকে একসময় তাঁর পতাকার নিচে লড়াই করেছিলেন।
তবে হেকমতিয়ারের সমালোচকরা তাঁর সাফল্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন। তাঁরা বলছেন, আফগানিস্তানে গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের সামরিক শক্তির প্রতাপ অনেক আগেই স্তিমিত হয়ে গেছে।
তালেবানকে আলোচনায় বসার জন্য তাঁর ডাকে কতটা সাড়া মিলবে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিশেষ করে যখন তালেবান বুঝতে পারছে যে আফগান সরকার তাদের হামলার মুখে খুবই চাপের মধ্যে আছে। সমালোচকরা আরো বলছেন, আফগানিস্তানের ক্ষমতার রাজনীতিতে নতুন করে হেকমতিয়ারের প্রবেশ পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলবে।